সেবায় সৌহার্দ্যে এপেক্স বাংলাদেশের ৫২ বছর

আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন এপেক্স বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫২ বছর অতিক্রান্ত করেছে। তারুণ্যের বারতা নিয়ে আর্তমানবতার সেবায় উজ্জীবিত এ সংগঠনের নিরবচ্ছিন্ন পথচলা ছিল গৌরবদীপ্ত। সেবা, সুনাগরিকত্ব, সৌহার্দ্য এই তিন মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে এপেক্স বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।

তখন ১৯৬১ সাল। জুলাইয়ের ১৯ তারিখ। ঢাকার তৎকালিন হোটেল শাহবাগে বসলো একঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণের মেলা। সংখ্যায় ওরা ৩৬ জন। টগবগে তারুণ্য। চোখ জোড়া স্বপ্ন। মননে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। ভালো কিছু করার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে সেদিনের সে স্বপ্নবাজ তরুণদের হাতেই যাত্রা শুরু হলো এ দেশে এপেক্স আন্দোলন। সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে এপেক্স আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লো এ জনপদে। ইঞ্জিনিয়ার এম সোলেমান খান সে যাত্রার মূল নাবিক। আহমেদুর রহমান, ডা. এস এ সাকুর, সৈয়দ এ কে মাহমুদুল হকসহ বেশকিছু সৃষ্টিশীল তরুণ হলেন সে যাত্রায় সারথী।


ইঞ্জিনিয়ার এম সোলেমান খানের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও আগ্রহে এদেশে এপেক্স ক্লাব অব ঢাকা নামে প্রথম ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এপেক্স অস্ট্রেলিয়ার অধীনে জোন-১০ এর আওতায় ১৯৬৩ সালে ক্লাবটি চার্টারশিপ লাভ করে। এরপর ক্রমান্বয়ে এদেশে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের গোড়াপত্তন। গঠিত হয় এপেক্স ইন্টারন্যাশনাল। এর আওতায় গঠিত হয় এপেক্স আন্দোলনের নতুন জেলা। যার নং-৭, জোন-১০। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত জেলা-৭ এর গভর্নর হিসেবে এপেক্স আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার এম সোলেমান খান (চট্টগ্রাম ক্লাব), সৈয়দ এ কে মাহমুদুল হক (ঢাকা ক্লাব), এস এম সাইদুল হক (চট্টগ্রাম ক্লাব), মুজিব-উদ-দৌলা (ঢাকা ক্লাব), এস এ শাকুর (চট্টগ্রাম ক্লাব), এম এ রহিম (সিলেট ক্লাব), মো. হাবিবউল্লাহ (চট্টগ্রাম ক্লাব), চৌধুরী এ কে আজাদ (ঢাকা ক্লাব), এম এ খায়ের (কুমিল্লা ক্লাব)।

এপেক্স অস্ট্রেলিয়ার অনুমোদনে ১৯৭৬ সালের ৬ ও ৭ মার্চ ঢাকায় জেলা-৭ এর দশম সম্মেলনে এপেক্স বাংলাদেশ জাতীয় অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ওই সম্মেলনে অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেন, এপেক্স ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট জন ক্লিভস, জোন-১০ এর সভাপতি জিম রিচি।

সেই যে পথচলা শুরু, ক্ষণিকের জন্যও তা থেমে যায় নি। একটানা চলছে তো চলছেই। অল্প ক’জন তরুণের স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়েছে দেশময় দিনের পর দিন। দলে দলে সময়ের তরুণেরা ভিড়ছে স্বপ্নের এ মিছিলে। সেবার মানসিকতায় উদ্দাম আনন্দ, অনাবিল উচ্ছ্বাস আর সীমাহীন কর্মস্পৃহা নিয়ে। স্বপ্নগুলো সৌরভ ছড়াচ্ছে পাপড়ির মতো, উড়ে বেড়াচ্ছে ডানা মেলা পাখি হয়ে।

৫৫ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট এ দেশ। এখানে বিস্তৃত সবুজের মতো ছড়িয়ে পড়লো এপেক্স। পাহাড় ঘেরা উঁচু-নিচু জনপদ আর জলে বেষ্টিত দ্বীপাঞ্চলেও পৌঁছে গেল এপেক্স বাংলাদেশের আহ্বান। এপেক্স আন্দোলনের আলোকশিখা ছড়িয়ে পড়লো সমগ্র বাংলাদেশে, স্থান করে নিলো মানুষের খুব কাছাকাছি। আজ এ দেশে এপেক্স বাংলাদেশের ৯৫টি ক্লাব সক্রিয়।

সেবা, সুনাগরিকত্ব আর সৌহার্দ্য এপেক্স আন্দোলনের মূল আদর্শ। অসহায় মানবতার জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করাই প্রধান লক্ষ্য। এপেক্স সেবার মানসিকতায় সমৃদ্ধ তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টিতে কাজ করছে, সেবাবঞ্ছিতদের দ্বারে দ্বারে নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। দু’হাতে জড়িয়ে নিচ্ছে দুস্থ আর সুবিধাবঞ্ছিত মানুষদের। অসংখ্য চোখের জল, অজস্র অসহায় মানুষের আর্তি এপেক্সিয়ান তরুণরা মুছে দিচ্ছে নিখাদ হাসি দিয়ে। পিছিয়ে পড়া মানুষদের কষ্টগুলো সমানভাবে ভাগ করে নেয়ার ব্রতী হয়ে এগিয়ে চলছে এপেক্স বাংলাদেশ। আইলা, বন্যায় সহায়তা, চিকিৎসা ও শিক্ষা সহায়তা, পঙ্গু লোকদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণসহ নানামুখি সেবা কার্যক্রম এপেক্সিয়ানদের নিরলস কর্মপ্রচেষ্টা।

সেদিনের সেই এপেক্স বাংলাদেশ এখন ৫২ পেরিয়ে। ৩৬ তরুণের অনেকেই জীবিত নেই। কিন্তু থেমে নেই এপেক্স আন্দোলন। দেশব্যাপী এর সাথে যুক্ত হয়েছে দু’সহস্রাধিক তারুণ্যের প্রাণবন্ত ইচ্ছাশক্তি। এপেক্স বাংলাদেশ এখন বিশাল এক পরিবার। ১৯৭৬ সাল থেকে এপেক্স বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এস এ শাকুর (ঢাকা ক্লাব), সৈয়দ সালাহউদ্দিন (ঢাকা ক্লাব), আহমেদ রফিক (ঢাকা ক্লাব), শহীদুল ইসলাম (জাহাঙ্গীরনগর ক্লাব), মোস্তফা এ হোসেন (চট্টগ্রাম ক্লাব), প্রফেসর কুদরত-ই-খুদা (বরিশাল ক্লাব), আব্দুল খালিক (সিলেট ক্লাব), এম কুতুব-উদ-দৌলা (চট্টগ্রাম ক্লাব), এ রব চৌধুরী (ঢাকা ক্লাব), মো. হানিফ কবীর (নারায়নগঞ্জ ক্লাব), নেয়ামত উল্লাহ সাবু (ঢাকা ক্লাব), আব্দুর রব শিকদার (ঢাকা নর্থ ক্লাব), এএসএম রকিবুল হাসান (ঢাকা ক্লাব) মো. মোস্তাফিজুর রহমান (বরিশাল ক্লাব), শাহ কামাল উদ্দিন (ঢাকা নর্থ ক্লাব), কামাল চৌধুরী (রমনা ক্লাব), এবিএম ইহসানুল কবির (মোহাম্মদপুর ক্লাব), মাহফুজুর রহমান (মীরপুর ক্লাব), শাহ আলম নিপু (চট্টগ্রাম ক্লাব), কাজী এনাম উদ্দিন আহমেদ (সিলেট ক্লাব), ইঞ্জিনিয়ার শেখ পারভেজ উদ্দিন আহমেদ (জাহাঙ্গীরনগর ক্লাব), মো. কাদের নেওয়াজ ( মীরপুর ক্লাব), ডা. জবিউল হোসেন (আগ্রাবাদ ক্লাব), ডা. এএইচএম মশিউর রহমান (বগুড়া ক্লাব), ফারুকুল ইসলাম শোভা (ঢাকা ক্লাব), টিকে বাড়ৈ তরুণ (নারায়ণগঞ্জ ক্লাব), মো. মফিজউদ্দিন কামাল (ধানমণ্ডি ক্লাব), অভিজিত কুমার দাস ববি (নারায়ণগঞ্জ ক্লাব), আব্দুর রৌফ দিলীপ (ঢাকা মেট্টোপলিটন ক্লাব), মো. ইয়াসিন চৌধুরী (কর্ণফুলী ক্লাব), মো. রমিজউদ্দিন (স্যাংটাম সিলেট ক্লাব), মো. রেজোয়ান শাহিদী (চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ক্লাব), আনিসুজ্জামান শাতিল ( মীরপুর ক্লাব), হাসান ফেরদৌস জুয়েল (ধানমণ্ডি ক্লাব), চন্দন দাশ (স্যাংটাম সিলেট ক্লাব), জসিম উদ্দিন (ঢাকা নর্থ ক্লাব) ও অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন মাহমুদ (কুমিল্লা ক্লাব)।

এপেক্স আন্দোলনের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে কাজ করেছেন বাংলাদেশের সাবেক আইনমন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ক্রিকেটার রকিবুল হাসান, সাবেক এমপি নেয়ামত উল্লাহ সাবু, মুকিত খানসহ অসংখ্য গুণী নেতৃত্ব। ৫২ বছরের এপেক্স বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধ এক আন্দোলন। সাফল্যের অনেক খ্যাতিই জুড়েছে এ নামের সাথে। তারুণ্যের নেতৃত্ব তৈরিতে এপেক্সের ইতিহাস বেশ বর্ণিল। এ ধারা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর এপেক্স বাংলাদেশের দু’সহস্রাধিক তরুদের দল।

৫২ বছর পূর্তিতে বর্ণিল আয়োজনে সাজিয়েছে এ সময়ের এপেক্সিয়ানরা। ঢাকার অভিজাত হোটেল ওয়েস্টিনে ৩০ আগস্ট এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে অনন্য মিলনমেলার। বিগত ৫২ বছরের পুরনো নেতৃত্বের সাথে বর্তমান সময়ের তরুণ এপেক্সিয়ানদের মেলবন্ধন রচিত হবে আজ। এপেক্স বাংলাদেশের জাতীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে এ মিলনমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ। আজ সারাদেশের উপস্থিত এপেক্সিয়ান তরুণরা শপথ নিবে দেশের জন্যে অকাতরে কাজ করে যাওয়ার। এপেক্স বাংলাদেশের জাতীয় যুব ও নাগরিকত্ব পরিচালক এপেক্স সাদেকুল ইসলাম জানান, এপেক্স বাংলাদেশের এ বর্ণিল আয়োজনে আজ সারাদেশ থেকে চার শতাধিক এপেক্সিয়ান অংশগ্রহণ করছেন।

এপেক্স বাংলাদেশের ৫২ বছর পূর্তিতে সেবা আর সৌহার্দ্যের প্রসার ঘটুক দেশের তরুণদের মাঝে। দেশকে ভালোবাসা আর ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করুক এপেক্স বাংলাদেশ। ৫২ বছর পূর্তিতে শুভ কামনা...। জয়তু এপেক্স বাংলাদেশ।

লেখক: সৈয়দ নুরুর রহমান, সাংবাদিক এবং সাবেক জাতীয় যুব ও নাগরিকত্ব পরিচালক, এপেক্স বাংলাদেশ

COMMENTS





নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,237,আন্তর্জাতিক,732,কাপাসিয়া,343,কালিয়াকৈর,418,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3944,চাকরির খবর,34,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2968,টঙ্গী,912,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,137,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,698,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1057,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10778,শ্রীপুর,482,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: সেবায় সৌহার্দ্যে এপেক্স বাংলাদেশের ৫২ বছর
সেবায় সৌহার্দ্যে এপেক্স বাংলাদেশের ৫২ বছর
http://2.bp.blogspot.com/-hmfge3We9yo/UiDFxFhWbQI/AAAAAAAAAaA/mbUNnJ43fus/s1600/apexclub1.jpg
http://2.bp.blogspot.com/-hmfge3We9yo/UiDFxFhWbQI/AAAAAAAAAaA/mbUNnJ43fus/s72-c/apexclub1.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2013/08/apexclub.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2013/08/apexclub.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy