শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ
ইউনূসের বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য সুলতানা দৌলা।
সুলতানা দৌলার অভিযোগ, গাজীপুর সদর উপজেলার তেতুইবাড়ী এলাকার সারাব মৌজার
৭০ বিঘা জমি অবৈধভাবে জবরদখলে রেখেছেন ড. ইউনূস।
জাতীয় পার্টির সাবেক এ সংসদ সদস্য
সুলতানা দৌলা উত্তারাধিকারসূত্রে নিজেকে এ জমির মালিক বলে দাবি করেছেন। এ
জমি ফেরত চাওয়ার ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ড. ইউনূস সুলতানা দৌলাকে ‘দেখে
নেওয়ার’ হুমকিও দিয়েছেন।
বিষয়টি এতদিন কেন গণমাধ্যমে তোলেননি, এমন
প্রশ্নে সুলতানা দাবি করেন, ড. ইউনূসের সাথে এ নিয়ে অনেক দেনদরবার
হয়েছে। তিনি কেবল কালক্ষেপণ করেছেন। এখন আমি বাধ্য হচ্ছি। তিনি পরিবর্তন
ডটকমের কাছে তার মালিকানার পক্ষে যাবতীয় কাগজপত্র (জমির বেশকিছু কাগজ,
প্রমাণ হিসেবে ওই জমির বিদ্যুত বিলের কয়েকটি কপি, খাজনার কপি) দেখিয়েছেন।
এগুলোর একটি করে কপি পরিবর্তন ডটকমের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
সুলতানা দৌলা অভিযোগ করে বলেন,“১৯৮৪ সাল
থেকে জমিটি আমার মা আনোয়ারা দৌলা ভোগদখল করে আসছিলেন। মা মৃত্যুর আগে
জমিটি আমার নামে উইল করে যান। কিন্তু ড. ইউনূস বিএনপি নেতা হারিস চৌধুরী
এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জমিটি দখলের চেষ্টা
করে আসছিলেন। অবশেষে ২০১২ সালে জমিটি সম্পূর্ণ দখলে নেয় গ্রামীণ ব্যাংক।
বর্তমানে জমিটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের সাইনবোর্ডে ‘গ্রামীণ গার্মেন্টস’ চলছে।
সুলতানা দৌলা আরো জানান, জমিটির দখল নিয়ে
দীর্ঘদিন বিভিন্ন মহল ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছিল। তবে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে
এসে তিনি বুঝতে পারেন সবগুলো পর্যায়ক্রমিক ষড়যন্ত্রের পেছনে মুহাম্মদ
ইউনূসের হাত রয়েছে।লিবরা ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষ থেকে ২০১০ সালে ড.
মুহাম্মদ ইউনূসেরবিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগে একটি দেওয়ানী মামলা
(দেওয়ানী মোকাদ্দমা নং২৫৪/২০১০) করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক মো. আশরাফুলহাসানকে প্রথম ও গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক ও প্রধান
পৃষ্ঠপোষক হিসেবেমুহাম্মদ ইউনূসকে দ্বিতীয় আসামী হিসেবে দেখিয়ে ১৬ জনের
বিরুদ্ধে মামলাটিদায়ের করা হয়।গাজীপুর যুগ্ম জেলা জজ আদালতে লিবরা
ফার্মাসিউটিক্যালস এর পক্ষে এরব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রওশন আলম ২০১০ সালে
দেওয়ানী মামলাটি (২৫৪/২০১০)দায়ের করেন।দখল স্থিরকরণ, খাস দখল ও ঘোষণামূলক
দেওয়ানী মামলায় বলা হয়, “১ নং বিবাদী (গ্রামীণ টেলিকম)গ্রামীণ ব্যাংকের
একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং ২নং বিবাদী (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) উক্ত
প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, পৃষ্ঠপোষক ও পরিচালক।
জনাব মো. আশরাফুল হাসান বিবাদী
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেনিয়োজিত আছেন বটে; কিন্তু তিনি
২নং বিবাদীর (ড. মুহাম্মদ ইউনূসের) দীক্ষা ওমূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এবং
তার পরামর্শ ও নির্দেশে সমস্ত কার্যক্রমপরিচালনা করেন; বিধায় তাদের উভয়কে
অত্র মোকাদ্দমায় পক্ষভূক্ত করা হল।” মামলায় আরো বলা হয়েছিল, “ড.
মুহাম্মদ ইউনূস সারা বিশ্বের সরকার প্রধানদেরসাথে ঘনিষ্ঠ এবং বাংলাদেশের
প্রেক্ষিতে অনেকক্ষেত্রে আইনের উর্ধ্বেও বটে। ড.মুহাম্মদ ইউনূসের প্রভাব
সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান; বিধায় সরকারী প্রশাসন এবংআইন-শৃংখলা বাহিনীর ওপর
তিনি খুব সহসাই আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম বটে।গ্রামীণ টেলিকম ও ড. মুহাম্মদ
ইউনূস ‘দূরভিসন্ধিমূলকভাবে’ স্থানীয় ‘টাউট-বাটপারের’ সহায়তায় বাদীর
সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।” তবে, সুলতানা দৌলার অভিযোগ, “এই
জমির মালিক আদৌ লিবরা ফার্মাসিউটিক্যালস বাগ্রামীণ ব্যাংক নয়।”
অবশ্য গাজীপুর যুগ্ম জেলা জজ আদালতে
দায়েরকৃত এই মামলাটি ২০১০ সালেই তুলেনেন ড. রওশন আলম। এ ব্যাপারে সুলতানা
দৌলা ব্যাখ্যা করে বলেন, “নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরধরে লিবরা গ্রুপ
গ্রামীণের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং সেটি পরে তুলেও নেয়।গ্রামীণ ব্যাংক
পরবর্তীতে জমিটি ভোগদখল শুরু করলে তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরসাথে যোগাযোগ
শুরু করেন।” ফোনে যোগাযোগ করলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জমিটির ব্যাপারে সুলতানা
দৌলাকে ‘চেপে’ যেতে বলেন এবং ‘হুমকি-ধামকি’ প্রদান করেন। এই জমিটি কিভাবে
সুলতানাদৌলা ভোগ করবেন সেটির ব্যাপারে ‘দেখে নেব’ বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ
করেন ড. ইউনূস।সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, “আমাদের বাসায় মা বেঁচে থাকাকালে
অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির-ই আসা যাওয়া ছিল। ইউনূস সাহেব আসতেন মাঝে
মাঝে। তখন তিনি এতো বিখ্যাত ছিলেন না আর আমিও তাকে সেভাবে চিনতাম না।”
সাম্প্রতিক সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে আবার যোগাযোগ করেন সুলতানা
দৌলা। জবাবে ইউনূস বলেন, “আমি তো এখন আর গ্রামীণ ব্যাংকের কেউ না। আমার
সাথেযোগাযোগ করে লাভ হবে না।”
সুলতানা দৌলার অভিযোগ, “শুধু তার নিজের
জমি নয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কারো ‘ইন্ধনে’ এরকম আরো অনেকের জমি অবৈধভাবে
দখল করেছেন।” এ অবস্থায় সুলতানা দৌলা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবছেন।
এ ব্যাপারে ইউনূস সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি মেইল পাঠানো হলেও তার জবাব মেলেনি।
পরিবর্তন ডটকমের পক্ষ থেকে লিবরা গ্রুপের
সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। লিবরার পক্ষ থেকে এ প্রতিবেদকের নাম্বার নিয়ে
বলা হয়, “স্যার মিটিং এ আছেন। পরে যোগাযোগ করাহবে আপনার সাথে। কিন্তু তারা
আর যোগাযোগ করেনি।
- সোহেল মাহমুদ, ঢাকা
পরিবর্তন ডটকম প্রতিবেদন
COMMENTS