আরেকবার নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই আহবানের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করলো আওয়ামী লীগ।
২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে এবং উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় ভোট দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন করেছিল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। জনসভাকে ঘিরে ঢাকা মহানগরের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে এ জনসভা শুরু হয়।
২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে এবং উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় ভোট দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন করেছিল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। জনসভাকে ঘিরে ঢাকা মহানগরের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে এ জনসভা শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য। আর তা হচ্ছে, বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। প্রয়োজন হলে বাবার মতোই বুকের রক্ত দিয়ে হলেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে অবৈধভাবে বাস করছিলেন। সেই বাড়ি থেকে আমরা উৎখাত করিনি। উনি মামলা করে হেরে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আপনারা দেখেছেন, উনি কি বিলাসিতায় সেই বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। মামলায় হেরে বাড়ি হারিয়ে তার সেকি আকুল কান্না! ৮১ সালে স্বামীকে হারিয়েও তাকে এমনভাবে কাঁদতে দেখিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মাসহ পুরো পরিবারকে হারানোর শোক-ব্যথা বুকে নিয়েও আমি রাজনীতি করি। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি কলঙ্ক এখনো জাতি বয়ে বেড়াচ্ছে সেটা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবে সেই বিচার কাজ শুরু হয়েছে। দেশের মানুষ রায় পেতে শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। আর এ কারণেই তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে তিনি উঠে পড়ে লেগেছেন।
বিরোধীদলীয় নেতার ছোট ছেলের পাচার করা অর্থ ফেরত আনাকে সরকারের সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের মানুষের নয় বরং নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে। যুদ্ধপরাধীদের বিচারের রায় অনুযায়ী তা কার্যকর করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেও জানান তিনি। অভিযোগ করেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরষ্কৃত করেছিলেন জিয়াউর রহমান।
শোক দিবসের আলোচনায় সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। বক্তব্যের পুরোটা সময়জুড়ে বিগত চার দলীয় জোট সরকার আমলের নানা অপশাসনের সমালোচনা করেন তারা।
চলমান ও আসন্ন সকল ষড়যন্ত্র সাংগঠনিকভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গণতান্ত্রিক উপায়ে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার বিষয়ে সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন নেতারা। একই সঙ্গে বিগত জোট সরকারের নানা অপকর্মের বিপরীতে, বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে তৃণমূল নেতাদেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির-হেফাজত বায়তুল মোকারম মসজিদে পর্যন্ত আগুন দিয়েছিল। পবিত্র কোরআন শরিফ পুড়িয়েছিল। শুক্রবার নামাজ পড়তেও দেয়নি তারা। কোনো মুসলমান কি বায়তুল মোকাররম মসজিদে, কোরআন শরিফে আগুন দিতে পারে? বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আমরা উন্নয়ন করি, আর বিএনপি করে সন্ত্রাস, হত্যা, দুর্নীতি বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এটাই তিনি (খালেদা) দিতে পারেন, আর কিছু দিতে পারেন না। বিদ্যুতের উৎপাদন ৪৩০০ মেগাওয়াট থেকে ৩০০০ মেগাওয়াট করেছিলেন তিনি। খাম্বার নামে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে আর আমরা প্রায় ৮০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি।
বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগে যে ওয়াদা দেয়, সে ওয়াদা রাখে। রমজান মাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। এতে নির্বিঘ্নে মা-বোনেরাও রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত বাজার করেছে। জনগণের হাতে ল্যাপটপ, কম্পিউটার তুলে দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের হাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তুলে দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ওয়াদা পালন করে যাচ্ছি।
ঢাকার যানজট নিরসনে কুড়িল, মিরপুর-এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছি। মেট্রোরেল ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু করেছি।
মাথার চুলই উড়ে যাবে বলে খালেদা জিয়ার মন্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার মাথায় যে চুল আছে, তা নকল না, পরচুলাও না, উড়ে যাবে না। যাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত নকল, মাথায় পরচুলা দিতে হয়, তাদেরই উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে আর বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাচাই করে, আসছে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই ভোট দেয়ার আহ্বান জানান নেতারা।
একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে নেতারা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, অন্তর্বতিকালীন সরকারের অধিনেই নির্বাচন হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার বিকেল পাঁচটা ৪০ মিনিটে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। এর আগে চারটা ৫২ মিনিটে জনসভা মঞ্চে এসে আসন নেন তিনি।
ঢাকা মহানগরের সব থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা মিছিলসহ দুপুরের পর থেকে জনসভায় যোগ দেন।
এ জনসভা শুরু হয় দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে। শুরুতেই সকল ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতারা।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, তোফায়েল আহমেদ এমপি, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, সতীশ চন্দ্র রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা-১২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নুর তাপস প্রমুখ।
COMMENTS