গাজীপুর জেলা শহর ও আশপাশ এলাকার প্রায় সব রাস্তাই কার্পেটিং এবং বেশ মসৃণ। কিন্তু সামান্য পথ যাতায়াতেই বিষম খেতে হয় রিকশা ভাড়া শুনে।
দ্বিগুণ ভাড়া না দিলেই রিকশাওয়ালাদের বাজে উক্তি শুনতে হয়। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে অনেককেই রিকশাওয়ালার অনৈতিক দাবি মেনে নিতে হয়।
পৌরসভা থাকাকালে নির্ধারিত রিকশা ভাড়ার তালিকা শহরের বিভিন্ন স্থানে টানানো হয়েছিল। এখন সিটি হয়েছে। সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে আগের ভাড়াই বলবৎ আছে। কিন্তু রিকশাওয়ালারা তা মানতে নারাজ। ভাড়া দিতে হবে তাদের ইচ্ছা মত। নয় তো হেঁটে যেতে হবে।
এ শহরের পূর্বজয়দেবপুরের বরুদায় বাস করেন সৈয়দ হাফিজুর রহমান। বাংলাদেশ বেতারে চাকরি করেন। তার স্ত্রী সৈয়দা জুলিয়া রহমান চাকরি করেন এ শহরেই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ছেলে ইমন ও মেয়ে লাবনী রাজধানীতে বিবিএ পড়ছে।
এ পরিবারকে প্রতিদিনই বরুদা থেকে জয়দেবপুর বাজার বা শিববাড়ি বাসস্ট্যান্ড যাতায়াত করতে হয়। প্রত্যেককেই প্রতিবার রিকশা ভাড়া গুনতে হয় বিশ টাকা করে। অথচ নির্ধারিত ভাড়া পনের টাকা। অথচ প্রতিদিন তারা অতিরিক্ত ৪০ টাকা রিকশা ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সাহাপাড়ার বাসিন্দা মোঃ সাইফুল ইসলাম চাকরি করেন গাজীপুর সদর এসিল্যান্ড অফিসে।
তিনি জানান, দুপুরে লাঞ্চ করতে যাওয়া-আসাসহ দিনে অন্তত চারবার অফিসে যাতায়ত করতে হয়। সাহাপাড়া মসজিদ থেকে তার অফিস পর্যন্ত রিকশা ভাড়া দিতে হয় বিশ টাকা। আর পার্শ¦বর্তী জয়দেবপুর রেলক্রসিং থেকে রিকশায় ওঠলে এসিল্যান্ড অফিস পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয় দশ টাকা। অথচ এই পথটুকুর নির্ধারিত ভাড়া যথাক্রমে দশ ও পাঁচ টাকা।
ফলে প্রতিদিনই তাকে বিশ থেকে চল্লিশ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে রিকশাওয়ালাদের হাঁকানো ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করছেন তিনি।
শহরের শশ্মানঘাটের মোঃ রফিকুল ইসলামের পত্রিকা অফিসে কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। শহরের মুক্তমঞ্চ থেকে শ্মশানঘাট পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ৮ টাকা। এখন দিনে এ পথটুকুর ভাড়া দিতে হয় পনের টাকা। রাতে বিশ টাকা।
তিনি বলেন, একদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিববাড়ি থেকে রিকশায় ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। জিজ্ঞাসা করার পর কয়েকজন রিকশাওয়ালা জানায় তারা শ্মশানঘাট যাবে না। যাবে না তো যাবেই না। এই এক গোঁ ধরে চালকের আসনে পা ছড়িয়ে দিয়ে ভোঁসভোঁস করে সিগারেট টানতে থাকে।
অনেক অনুরোধের পর এক রিকশাওয়ালা যেতে রাজি হলো। তবে তাকে ভাড়া দিতে হবে ৫০ টাকা। রফিক জানান, অস্বাভাবিক ভাড়ার কথায় সেখান থেকে সরে যাওয়ার সময় পেছন থেকে রিকশাওয়ালা বলে ওঠে- পকেটে পয়সা নাই, আইছে রিকশায় ওঠতে।
একই অবস্থা জেলা শহরের প্রতিটি রিকশা যাত্রীর। রিকশাভাড়া নিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির অভিযোগ রোজ রোজ, অসংখ্য।
সাবেক গাজীপুর পৌরসভা (বর্তমানে গাজীপুর নগর ভবন) থেকে রিকশা ভাড়ার একটি তালিকা সংগ্রহ করে শহরের মুক্তমঞ্চ থেকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত গেলাম।
নেমে তালিকা অনুযায়ী ১০ টাকা ভাড়া দিতেই রিকশাওয়ালার অবাক প্রশ্ন- ‘এ্যাইটা কি দিলেন’?
বললাম, ভাড়া দিলাম।
রিকশাওয়ালা যেন আকাশ থেকে পড়লো। ব্যঙ্গ করার সুরে বললো, ওই রকম আরো একটা (১০ টাকার নোট) দ্যান।
-কেন ? ভাড়াতো ১০টাকা।
রিকশাওয়ালার উত্তর, হেই ভাড়া অ্যাহন আছে নি।
-এখন কত ভাড়া ?
সাফ সাফ উত্তর। ২০টাকা।
তবে ভাড়ার তালিকা দেখাও। লাইসেন্স আছে।
বাড়িতে আছে। সাথে আনি নাই।
তালিকায় তো ভাড়া ১০টাকা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় এরকম তালিকা টানানো আছে।
উত্তরে তার দাবি- এখন তালিকা দেখে কেউ ভাড়া দেয় না। ভাড়া কম বলে পৌরসভার লোকজন তালিকার বোর্ড নামিয়ে নিয়ে গেছে।
রিকশাওয়ালার সঙ্গে কথোপকথনের সময় আশপাশের বেশ কয়েকজন লোক জড়ো হয়ে যায়। আগন্তুকদের মন্তব্য, ভাড়া নিয়ে রিকশাওয়ালাদের আচরণ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার।
রিকশাওয়ালাদের হাতে বেশি হয়বানির শিকার হন মহিলা যাত্রীরা। তাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করতে বেশ সুবিধা। লোকলজ্জার ভয়ে মহিলা যাত্রীরা তর্কে জড়ান না। নীরবে-নি:শব্দে হাঁকানো ভাড়া দিয়ে দেন। রিকশাওয়ালাদেরও মহিলা যাত্রী নিতে আগ্রহ বেশি দেখা যায়।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স পরিদর্শক মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, জেলা শহরের ১৭টি স্থানে রিকশা ভাড়ার তালিকা টানানো আছে। সর্বশেষ প্রায় ৪ বছর আগে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। ঐ ভাড়াই এখনো বলবৎ আছে। তিনি জানান, নতুন লাইসেন্স করার সময় কিংবা লাইসেন্স নবায়নের সময় চালকদের ভাড়ার তালিকা দেয়া হয়। ইচ্ছা করেই ওরা তালিকা সাথে রাখে না।
আব্দুর রশিদ জানান, গাজীপুর শহরে দশ হাজারের মতো রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। চালকের লাইসেন্স আছে মাত্র দুই হাজার। বাকী আট হাজার রিকশা চলছে লাইসেন্স বিহীন চালক দিয়ে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চালকদের লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি লোকবলের অভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হয় না।
গাজীপুরে লাইসেন্সবিহীন, চোরাই রিকশার পাশাপাশি ইদানিং যোগ হয়েছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। রিকশা বেড়ে যাওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যানজট লেগেই থাকছে। রিকশা জটে শহরের সড়ক দিয়ে হাঁটাচলা করা দুরূহ।
বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবার শহরের ভেতরে যাতায়াত করেন রিকশায়। বাজার, অফিস, স্কুল কলেজে যাওয়া-আসা, বেড়ানো ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে রিকশা ছাড়া উপায় নাই। আর গাজীপুরে রিকশা মানেই অতিরিক্ত ভাড়া।
দ্বিগুণ ভাড়া না দিলেই রিকশাওয়ালাদের বাজে উক্তি শুনতে হয়। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে অনেককেই রিকশাওয়ালার অনৈতিক দাবি মেনে নিতে হয়।
পৌরসভা থাকাকালে নির্ধারিত রিকশা ভাড়ার তালিকা শহরের বিভিন্ন স্থানে টানানো হয়েছিল। এখন সিটি হয়েছে। সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে আগের ভাড়াই বলবৎ আছে। কিন্তু রিকশাওয়ালারা তা মানতে নারাজ। ভাড়া দিতে হবে তাদের ইচ্ছা মত। নয় তো হেঁটে যেতে হবে।
এ শহরের পূর্বজয়দেবপুরের বরুদায় বাস করেন সৈয়দ হাফিজুর রহমান। বাংলাদেশ বেতারে চাকরি করেন। তার স্ত্রী সৈয়দা জুলিয়া রহমান চাকরি করেন এ শহরেই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ছেলে ইমন ও মেয়ে লাবনী রাজধানীতে বিবিএ পড়ছে।
এ পরিবারকে প্রতিদিনই বরুদা থেকে জয়দেবপুর বাজার বা শিববাড়ি বাসস্ট্যান্ড যাতায়াত করতে হয়। প্রত্যেককেই প্রতিবার রিকশা ভাড়া গুনতে হয় বিশ টাকা করে। অথচ নির্ধারিত ভাড়া পনের টাকা। অথচ প্রতিদিন তারা অতিরিক্ত ৪০ টাকা রিকশা ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সাহাপাড়ার বাসিন্দা মোঃ সাইফুল ইসলাম চাকরি করেন গাজীপুর সদর এসিল্যান্ড অফিসে।
তিনি জানান, দুপুরে লাঞ্চ করতে যাওয়া-আসাসহ দিনে অন্তত চারবার অফিসে যাতায়ত করতে হয়। সাহাপাড়া মসজিদ থেকে তার অফিস পর্যন্ত রিকশা ভাড়া দিতে হয় বিশ টাকা। আর পার্শ¦বর্তী জয়দেবপুর রেলক্রসিং থেকে রিকশায় ওঠলে এসিল্যান্ড অফিস পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয় দশ টাকা। অথচ এই পথটুকুর নির্ধারিত ভাড়া যথাক্রমে দশ ও পাঁচ টাকা।
ফলে প্রতিদিনই তাকে বিশ থেকে চল্লিশ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে রিকশাওয়ালাদের হাঁকানো ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করছেন তিনি।
শহরের শশ্মানঘাটের মোঃ রফিকুল ইসলামের পত্রিকা অফিসে কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। শহরের মুক্তমঞ্চ থেকে শ্মশানঘাট পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ৮ টাকা। এখন দিনে এ পথটুকুর ভাড়া দিতে হয় পনের টাকা। রাতে বিশ টাকা।
তিনি বলেন, একদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিববাড়ি থেকে রিকশায় ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। জিজ্ঞাসা করার পর কয়েকজন রিকশাওয়ালা জানায় তারা শ্মশানঘাট যাবে না। যাবে না তো যাবেই না। এই এক গোঁ ধরে চালকের আসনে পা ছড়িয়ে দিয়ে ভোঁসভোঁস করে সিগারেট টানতে থাকে।
অনেক অনুরোধের পর এক রিকশাওয়ালা যেতে রাজি হলো। তবে তাকে ভাড়া দিতে হবে ৫০ টাকা। রফিক জানান, অস্বাভাবিক ভাড়ার কথায় সেখান থেকে সরে যাওয়ার সময় পেছন থেকে রিকশাওয়ালা বলে ওঠে- পকেটে পয়সা নাই, আইছে রিকশায় ওঠতে।
একই অবস্থা জেলা শহরের প্রতিটি রিকশা যাত্রীর। রিকশাভাড়া নিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির অভিযোগ রোজ রোজ, অসংখ্য।
সাবেক গাজীপুর পৌরসভা (বর্তমানে গাজীপুর নগর ভবন) থেকে রিকশা ভাড়ার একটি তালিকা সংগ্রহ করে শহরের মুক্তমঞ্চ থেকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত গেলাম।
নেমে তালিকা অনুযায়ী ১০ টাকা ভাড়া দিতেই রিকশাওয়ালার অবাক প্রশ্ন- ‘এ্যাইটা কি দিলেন’?
বললাম, ভাড়া দিলাম।
রিকশাওয়ালা যেন আকাশ থেকে পড়লো। ব্যঙ্গ করার সুরে বললো, ওই রকম আরো একটা (১০ টাকার নোট) দ্যান।
-কেন ? ভাড়াতো ১০টাকা।
রিকশাওয়ালার উত্তর, হেই ভাড়া অ্যাহন আছে নি।
-এখন কত ভাড়া ?
সাফ সাফ উত্তর। ২০টাকা।
তবে ভাড়ার তালিকা দেখাও। লাইসেন্স আছে।
বাড়িতে আছে। সাথে আনি নাই।
তালিকায় তো ভাড়া ১০টাকা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় এরকম তালিকা টানানো আছে।
উত্তরে তার দাবি- এখন তালিকা দেখে কেউ ভাড়া দেয় না। ভাড়া কম বলে পৌরসভার লোকজন তালিকার বোর্ড নামিয়ে নিয়ে গেছে।
রিকশাওয়ালার সঙ্গে কথোপকথনের সময় আশপাশের বেশ কয়েকজন লোক জড়ো হয়ে যায়। আগন্তুকদের মন্তব্য, ভাড়া নিয়ে রিকশাওয়ালাদের আচরণ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার।
রিকশাওয়ালাদের হাতে বেশি হয়বানির শিকার হন মহিলা যাত্রীরা। তাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করতে বেশ সুবিধা। লোকলজ্জার ভয়ে মহিলা যাত্রীরা তর্কে জড়ান না। নীরবে-নি:শব্দে হাঁকানো ভাড়া দিয়ে দেন। রিকশাওয়ালাদেরও মহিলা যাত্রী নিতে আগ্রহ বেশি দেখা যায়।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স পরিদর্শক মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, জেলা শহরের ১৭টি স্থানে রিকশা ভাড়ার তালিকা টানানো আছে। সর্বশেষ প্রায় ৪ বছর আগে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। ঐ ভাড়াই এখনো বলবৎ আছে। তিনি জানান, নতুন লাইসেন্স করার সময় কিংবা লাইসেন্স নবায়নের সময় চালকদের ভাড়ার তালিকা দেয়া হয়। ইচ্ছা করেই ওরা তালিকা সাথে রাখে না।
আব্দুর রশিদ জানান, গাজীপুর শহরে দশ হাজারের মতো রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। চালকের লাইসেন্স আছে মাত্র দুই হাজার। বাকী আট হাজার রিকশা চলছে লাইসেন্স বিহীন চালক দিয়ে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চালকদের লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি লোকবলের অভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হয় না।
গাজীপুরে লাইসেন্সবিহীন, চোরাই রিকশার পাশাপাশি ইদানিং যোগ হয়েছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। রিকশা বেড়ে যাওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যানজট লেগেই থাকছে। রিকশা জটে শহরের সড়ক দিয়ে হাঁটাচলা করা দুরূহ।
বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবার শহরের ভেতরে যাতায়াত করেন রিকশায়। বাজার, অফিস, স্কুল কলেজে যাওয়া-আসা, বেড়ানো ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে রিকশা ছাড়া উপায় নাই। আর গাজীপুরে রিকশা মানেই অতিরিক্ত ভাড়া।
- হাসমত আলী
COMMENTS