নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে বিকাল ৫টা থেকে। প্রথম দিন সংসদে যাচ্ছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বুধবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাতে গুলশান কার্যালয়ে সংসদে যোগ দেয়ার বিষয় নিয়ে নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া অধিবেশনের প্রথম দিন সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাতে গুলশান কার্যালয়ে সংসদে যোগ দেয়ার বিষয় নিয়ে নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া অধিবেশনের প্রথম দিন সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পরবর্তীতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই অধিবেশনে যোগ দিলেও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে কোনো বিল আনবে না। অন্যদিকে বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে সরকারি দল। ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এ অধিবেশন। এ অধিবেশন নবম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, এই অধিবেশন ৫ কার্যদিবস পরিচালনার জন্য সংসদকে প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। পরে এটি মুলতবি করে আরো দীর্ঘায়িত করা হতে পারে। কিংবা নতুন করে আরেকটি অধিবেশন আহ্বান করা হতে পারে।
বৃহস্পতিবার সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নবম জাতীয় সংসদের শেষ কার্যদিবস হবে আগামী ২৪ অক্টোবর। চলতি সংসদের ১৮টি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৩৯৪টি। এর মধ্যে বিরোধী দল ৭৫ কার্যদিবস উপস্থিত ছিল। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দেশের বড় দুটি দলের মধ্যে সমঝোতার শেষ সুযোগ থাকছে এ অধিবেশনই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংঘাত এড়াতে হলে সংসদের চলতি অধিবেশনেই প্রধান দুই দলকে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার ব্যাপারে সমঝোতায় আসতে হবে। যদিও এখন পর্যন্ত দুই দলের মধ্যে সমঝোতার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি এবং বিষয়টি সংসদে প্রস্তাব তোলার ব্যাপারেও কোনো অগ্রগতি নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতা না হলে এবং আগামী অধিবেশনে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থার বিষয়ে সুরাহা না হলে অক্টোবর থেকে দেশের রাজনীতি ভয়াবহ সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, প্রথম দিন সংসদে যোগ না দিলেও পরবর্তীতে যোগ দিলেও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিল আনবে না বিএনপি। এই বিল সরকারকেই আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, আমাদের বিল আনার প্রশ্নই আসে না। কারণ আমরা হলাম ৩০ জন, আর তারা হলেন প্রায় ৩০০ জন। আমরা বিল আনলে তারা কণ্ঠভোটে তা নাকচ করে দেবেন। আমাদের একার পক্ষে বিল আনলে কোনো লাভ হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমদ বলেন, বিএনপির দাবি অযৌক্তিক। আওয়ামী লীগ কখনো সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল আনবে না, আনার প্রশ্নই উঠে না। বিরোধী দলকেই বিল আনতে হবে।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এ ছাড়াও আগাম সংসদ ভেঙে দেয়ার ব্যাপারে সংবিধানে বলা আছে, সংসদ ভেঙে দেয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বর্তমান সংসদের যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। এ হিসেবে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি সংসদের মেয়াদ শেষ হবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফায় দেয়া ক্ষমতাবলে এ অধিবেশনের আহ্বান করেছেন। ওই দিন বিকাল ৪টায় কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সংসদের মেয়াদ নির্ধারণ করা হবে।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৬ জুন আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভায় বলেন, আগামী ২৫ অক্টোবর নবম জাতীয় সংসদের শেষ কার্যদিবস হবে। এ হিসাবে সংসদের আসন্ন অধিবেশন বিভিন্ন দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংসদের আইন শাখা জানায়, এ অধিবেশনের জন্য অনিষ্পন্ন ১৬টি সরকারি বিল রয়েছে। এ ছাড়া কার্যনির্বাহের রিপোর্ট (প্রকাশনা ও সম্প্রচার) বিল-২০১৩ নামে একটি বিল উত্থাপিত হতে পারে। সরকারি বিলগুলোর মধ্যে পাশের অপেক্ষায় ৪টি, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে বিবেচনাধীন ৮টি ও উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে ৪টি। এগুলো হলো্ত ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল, ২০১০, আর্থিক প্রতিষ্ঠান (সংশোধন) বিল, ২০১০, দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল, ২০১১, দ্য ফরেস্ট (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১২, বৃক্ষ সংরক্ষণ বিল, ২০১২, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বিল, ২০১৩, জন্ম ও মত্যু নিবন্ধন (সংশোধন) বিল, ২০১৩, বাংলা একডেমি বিল, ২০১৩, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) বিল, ২০১৩, গ্রাম আদালত (সংশোধন) বিল, ২০১৩, দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিল, ২০১৩, মাতৃদুগ্ধ, বিকল্প শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও এর ব্যবহার সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদি) বিল, ২০১৩, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিল, ২০১৩, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বালাদেশ বিল, ২০১৩, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার (সংশোধন) বিল, ২০১৩ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী বিল ২০১৩।
COMMENTS