২০১১ সালের নির্বাচনের ন্যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান চালিয়েছেন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন জরিপ। তিনটি জরিপের একটিতে দেখা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে “অবাধ ও সুষ্ঠ” হলে বিরোধীদল তথা বিরোধীদলের নির্বাচনী জোট ২৬১ আসনে জয় লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় যাবে।
জরিপের সঙ্গে ‘মূল্যায়ন প্রতিবেদন’ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অর্ধশতাধিক আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র কোন্দল রয়েছে। কোন্দল নিরসন করতে পারলে আরও বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। নইলে কিছু আসন হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
জরিপের সঙ্গে ‘মূল্যায়ন প্রতিবেদন’ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অর্ধশতাধিক আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র কোন্দল রয়েছে। কোন্দল নিরসন করতে পারলে আরও বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। নইলে কিছু আসন হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
জরিপের সাথে সংশ্লিষ্ট এক নেতার মাধ্যমে এ তথ্য জানা যায়। ঐ নেতা জানান, তিনটি জরিপের ভিত্তিতে এখন একটি তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। জোট শরিকদের জন্য ৪৫টি আসন রেখে অর্থাৎ ২৫৫ আসনের জন্য এ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিনটি তালিকায় যাদের নাম ‘কমন’ আছে, তারাই চূড়ান্ত তালিকায় থাকবেন। এ তালিকায়ও প্রতি আসনে তিনজন করে প্রার্থী থাকবেন।
সূত্রমতে, নির্বাচনকে সামনে রেখে এ তিনটি জরিপ চালিয়েছেন তারেক রহমান। তারেক রহমান তার ঘনিষ্ঠ কয়েক নেতাকে দিয়ে জরিপগুলো চালিয়েছেন। জরিপের সার্বিক কাজ সমন্বয় করেছেন তারেক রহমানের পিএস মিয়া নূরুদ্দিন অপু। ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে অপু মালয়েশিয়া থাকেন।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগেও তারেক রহমান নির্বাচনী গবেষণার কাজ করেছিলেন। নির্বাচনের আগে তার তত্ত্বাবধানে করা জরিপ যাচাইবাছাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। তারেক রহমানের এ ধরনের গবেষণায় বিএনপি ‘সুফল’ পেয়েছে। এজন্য দলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, তারেক রহমান অতীতেও এ ধরনের দায়িত্ব পালন করেছেন। অতীতে তার এ ধরনের জরিপসহ গবেষণার কাজগুলোতে বিএনপি সুফল পেয়েছিল।
জরিপে যে ৩৯টি আসনে পরাজিত হবে:
জরিপ মতে, বিএনপি ৩৯টি আসন পাবে না। আসনগুলো হলো নীলফামারী ১, ২ ও ৩, রংপুর ১, ২, ৩ ও ৫, কুড়িগ্রাম ৩, লালমনিরহাট ১ ও ২, গাইবান্ধা ২, ৩ ও ৫, নওগাঁ ৬, সিরাজগঞ্জ ১, পাবনা ৪, যশোর ৬, মাগুরা ১, নড়াইল ২, বাগেরহাট ১, খুলনা ১, বরগুনা ১, পটুয়াখালী ৩, পিরোজপুর ২, টাঙ্গাইল ১ ও ৮, জামালপুর ৫, শেরপুর ১, ময়মনসিংহ ১, কিশোরগঞ্জ ১, ফরিদপুর ৪, গোপালগঞ্জ ১, ২ ও ৩, মাদারীপুর ১, ২ ও ৩, শরীয়তপুর ১ এবং খাগড়াছড়ি ২।
জরিপে প্রত্যেক আসনে মনোনয়ন দেয়ার জন্য তিনজন করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় শ’ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত থাকলেও তাদের আসনেও আরও দুজন বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ কোনো আসনে প্রার্থী তালিকায় যিনি এক নম্বরে থাকবেন তিনিই মনোনয়ন পাবেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে দ্বিতীয় জন নির্বাচন করবেন। দ্বিতীয় ব্যক্তিও বিশেষ কোনো কারণে নির্বাচন করতে না পারলে তৃতীয় জন ‘বিকল্প’ প্রার্থী হবেন।
মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের এলাকাও বিবেচনায় আনা হবে। অর্থাৎ একটি আসনে দুটি থানা বা উপজেলা থাকলে যে থানা বা উপজেলায় ভোটার সংখ্যা বেশি, ওই থানার সম্ভাব্য যে প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন, তিনিই মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন। এ ক্ষেত্রে ওই থানা বা উপজেলার সাধারণ মানুষ এবং নেতাকর্মীদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীর জনপ্রিয়তার বিষয়টিও বিবেচনা রাখা হবে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে এমন আসনগুলোতে এ বিষয়টি বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে।
বিএনপির প্রার্থীর বিপরীতে আওয়ামী লীগের কারা প্রার্থী হতে পারেন, তার একটি তালিকা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য তিনজন প্রার্থীর তালিকা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা কতটুকু তা দেখা হচ্ছে।
নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনের মাঠে সোচ্চার হলেও নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখছে বিএনপি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির তেমন প্রস্তুতি ছিলানা বললেই চলে। এর কারণে বিকল্প প্রার্থী পেতে দলটিকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
জরিপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের ঘাঁটি বলে পরিচিত বৃহত্তর রংপুরে এবার বিরোধী জোট আগের তুলনায় ভালো করবে। রংপুর প্রত্যেক আসনে ভোট বাড়বে। এমনকি রংপুর ৪ ও ৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হবে। রংপুর ৬ আসনে প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের। কুড়িগ্রামের ৪টি আসনের মধ্যে ৩টি পাবে বিএনপির প্রার্থী। নীলফামারীর আসনগুলোতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
COMMENTS