বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর রমনা গ্রীনে এক সম্মেলনের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেন। এ রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, ধর্মীয় মূল্যবোধের ধারক ও বাহক এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত সৎ ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণায় অনুপ্রাণিতদের এক প্লাটফর্মে আনতে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার উন্নয়ন, উৎপাদন ও গণতান্ত্রিক আদর্শ লালন করেই বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছে বিএনপি।
জিয়াউর রহমানের শাহাদত বরণের পর দলের বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও নানা সময়ে দেশ-জাতির সঙ্কটকালে একের পর এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে তিনি আন্দোলন করে আপসহীন নেত্রী খ্যাতি পান এবং তার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় আসীন হয়। তবে প্রথম থেকেই সুগম ছিল না রাজনৈতিক দল বিএনপির পথচলা। বিএনপি গঠনের মাত্র তিন বছরের মাথায় চট্টগ্রামে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যের হাতে শাহাদত বরণ করেন প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার মৃত্যুর পর দলের বহু সিনিয়র নেতা বিশ্বাসঘাতকতা করে দল ছেড়ে যান। দলের সে দুর্যোগকালে নেতাকর্মীদের আহ্বানে বিএনপিতে যোগ দেন তৎকালীন গৃহবধূ খালেদা জিয়া। এক পর্যায়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ব্যবহার করে বিএনপিতে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রও হয়েছিল। সে সময় তরুণ নেতৃত্বের আহ্বান ও সমর্থনে দলের হাল ধরেন বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার নেতৃত্বে দশকব্যাপী স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করে বিএনপি। এ সময় ক্ষমতাসীনদের সমঝোতা ও পাতানো নির্বাচনের নানা ফাঁদ এড়িয়ে আপসহীন রাজনীতি এগিয়ে নেন বিএনপি নেতাকর্র্মীরা।
স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত না থাকা সত্ত্বেও গণমানুষের সমর্থন পেয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। ১৯৯৬ সালের স্বল্পকালীন ষষ্ঠ সংসদেও ক্ষমতায় যায় দলটি। ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদে বিশাল আকারের বিরোধীদল নির্বাচিত হলেও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে ব্রুট মেজরিটি পায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। ওয়ান ইলেভেনের পর জরুরি সরকারের আমলে রীতিমতো রাজনৈতিক সিডর বয়ে যায় দলটির ওপর। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের বেশির ভাগ সিনিয়র নেতাকে কারাবন্দি করা হয়। সংস্কার প্রক্রিয়ার নামে দলের ভাঙন ধরানোর প্রচেষ্টা চলে। তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের এক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছিলেন কারাবন্দি খালেদা জিয়া। অবশেষে ২০০৯ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধ্বস পরাজয় হয় বিএনপির। বিরোধী দল হিসেবে বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপক দমন-নিপীড়নের শিকার এ দলটি বর্তমানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে দাবিতে আন্দোলন করছে। সর্বশেষে অনুষ্ঠিত ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতিটিতেই বিজয় পেয়েছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
কর্মসূচি: প্রতিবছরের মতো এবারও নানা কর্মসূচিতে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ উপলক্ষে বিএনপি এবার দু’দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। প্রথম দিনের কর্মসূচি হিসেবে গতকাল রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ভোরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব এর উদ্যোগে ফ্রি চিকিৎসা সেবার আয়োজন করা হয়েছে। ফ্রি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম একটানা সকাল ৯টা হতে বেলা ৩টা পর্যন্ত চালু থাকবে। পরে বিকালে জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা সংস্থার উদ্যোগে ১৫তম বইমেলা ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগার-এর সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার ও লিফলেট প্রকাশ করা হচ্ছে। এছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষেও পৃথক কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি। দিবসগুলো সফলভাবে পালনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
উল্লেখ্য, আগামী ১১ই সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও ৩রা সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস। ঢাকা মহানগর বিএনপি’র উদ্যোগে ১০ই সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হতে র্যালি করবে। খালেদা জিয়ার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ১১ই সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় বিএনপি’র উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬ষ্ঠ কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল ২রা সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালি, বিএনপি’র উদ্যোগে ৩রা সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে আলোচনা সভা, স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ৪ঠা সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তারেক রহমানের সামপ্রতিক দেয়া ভাষণের ভিডিও প্রদর্শনী, যুবদলের উদ্যোগে ৫ই সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ও র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
COMMENTS