মোঃ আল-আমিন দেওয়ানঃ গাজীপুর-৫ কালীগঞ্জ আসনের বাড়িয়া ইউনিয়নে ত্রাণের টিন পাওয়া দু’জন দিন মজুরের নিকট থেকে ছাত্রলীগের কর্মীরা টিন ও টাকা জোড় করে লুটে নেয়। এ ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার রাতে গাজীপুর সদর উপজেলার ছোট কয়ের গ্রামে।
ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে গ্রামবাসীর চাপের মুখে গত সোমবার বিকেলে ৮ পিস টিন ফেরত দিয়েছে ওই সন্ত্রাসীরা। কিন্তু টাকা ফেরত দেয়নি ।
জানা যায়, গাজীপুর-৫ কালীগঞ্জ সংসদীয় আসনের বাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্র লীগের যুগ্ন আহবায়ক ছোট কয়ের গ্রামের মোঃ রেজাউল আলম রনি এবং তার সহযোগী ছাত্র লীগ নামধারি সন্ত্রাসী মোঃ সাদ্দাম হোসেন মোল্ল্যা, মোঃ নঈম মিয়া ও মোঃ পলাশ মিয়া দিন মজুর শ্রী ননী চন্দ্র দাস ও মোঃ মারফত আলীর নিকট থেকে ৪ হাজার ৭’শ টাকা ও ৮ পিস ত্রাণের টিন লুট করে নিয়ে যায় এবং দিন মজুরদের মারধোর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে দিন মজুর মোঃ মারফত আলী এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, গত রবিবার তিনি গাজীপুর উপজেলা থেকে ৯ ফুটি ৮ পিস ত্রাণের টিন ও ৩ হাজার টাকা উঠানোর জন্যে উল্লেখিত ৪ ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে গাজীপুর নিয়ে যায়। পরে টাকা ও টিন উঠিয়ে ৩ হাজার টাকা তৎখনাৎ ওই সন্ত্রাসীরা নিয়ে যায় এবং রাতে বাড়ীতে এসে ত্রাণের টিন গুলোও নিয়ে যায় এবং এ বলে হুমকি দিয়ে যায়, কাউকে যেন এ ঘটনা জানানো না হয়। ভুক্তভোগী ও নির্যাতিত আরেক দিনমজুর শ্রী ননী চন্দ্র দাস জানায়, ত্রাণের টিন ও টাকা উঠিয়ে বাড়িতে এলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ১০ হাজার টাকা দিতে বলে। এতে শ্রী ননী চন্দ্র দাস অস্বীকৃতি জানালে সন্ত্রাসীরা ননীর ভাগিনা কলেজ ছাত্র অনুকুল দাসকে সন্ত্রাসী নাঈম অপহরণ করে তাদের বাড়িতে এনে মারধোর করে ১০ হাজার টাকা ও টিন না দিলে ছাড়বে না বলে আটকে রাখে। এবং সন্ত্রাসীরা টিন আনার জন্যে রাতেই শ্রী ননীর বাড়ীতে রিক্সা পাঠায়।
ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রতিবেশীরা জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা টিন রেখে ২ হাজার ৭’শ টাকা নিয়ে এ ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে চলে যায়।
ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রতিবেশীরা জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা টিন রেখে ২ হাজার ৭’শ টাকা নিয়ে এ ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে চলে যায়।
গত বুধবার ঘটনাটি সারা এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় পূবাইল বাজারে ৪ সন্ত্রাসী মিলে ননীকে গোপনে ডেকে নিয়ে আগুন লাগিয়ে মেরে ফেলাসহ নানা প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পরে বিষয়টি ননী স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আ’লীগের নেত্রীবৃন্দকে জানান। ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ বাচ্চু মোল্লাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে আমি খবর পেয়ে স্থাণীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করি। শুধু তাই নয় ওই সন্ত্রাসীরা ত্রাণ পাওয়া দরিদ্র আমিরুলের স্ত্রীকে টাকার দেওয়ার জন্য কয়েকদিন যাবৎ চাপ প্রয়োগ করছে। বিষয়টি আমাকে জানালে আমি তাকে একটি টাকাও না দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেই। এবং ব্যাপারটি আমি দেখছি বলে জানাই। তিনি আরো বলেন, গ্রামবাসী সবাইকে নিয়ে এ সন্ত্রাসী ঘটনার উপযুক্ত বিচার করা হবে। এ ব্যাপারে ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি মোঃ মন্জুর হোসেন খান সন্ত্রাসী ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, বিগত ৪০ বছরেও এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আমাদের গ্রামে ঘটেনি। তিনি দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে বলেন, আ’লীগ গেল করি। বিএনপি গেল, জাতীয় পার্টি গেল, আলী হোসেন গেল, ইমদু গেল কিন্তু কোন আমলেই এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কেউ ঘটাতে সাহস পায়নি। এদেরকে কোন ভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। গ্রামবাসী সবাইকে নিয়ে প্রয়োজনে গাজীপুর-৫ কালীগঞ্জ আসনের এমপির সাথে আলাপ করে ছাত্রলীগ নামধারী এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসীদের স্থান কখনো আ’লীগে হতে পারে না। যে কোন উপায়ে এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ ওই ওয়ার্ড আ’য়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সফিউজ্জামান বলেন, ছাত্রলীগ নেতা রনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে যেভাবে গরীবদের ত্রাণের টিন ও টাকা লুট করেছে এই জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হবে। আমাদের ক্ষমতায় যদি না কুলায় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপর মহলে আবেদন করব।
ত্রাণ লুটের ব্যাপারটি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান খানের নির্দেশে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ওই গ্রামে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। তদন্ত কমিটির প্রধান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে জানান, আমি সরেজমিন তদন্তে মর্মান্তিক নিন্দনীয় ও জঘন্যতম এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেয়েছি। স্থাণীয় চেয়ারম্যান তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই এলাকাবাসীকে নিয়ে প্রকাশ্যে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার করা হবে। সংবাদ লেখা পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল ।
COMMENTS