ন্যূনতম বেতন আট হাজার টাকা করার দাবিতে বুধবার সকালে পঞ্চম দিনের মতো
গাজীপুর, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছেন তৈরি
পোশাক শ্রমিকেরা।
নৌ পরিবহন শাহজাহান খান গার্মেন্টসের মালিক-শ্রমিকদের সাথে সোমবার গভীর
রাত অবধি সচিবালয়ে বৈঠক করে জানিয়েছিলেন মঙ্গলবার থেকে সব গার্মেন্টস
চলবে। নিরাপত্তা সরকার দেবে। কিন্তু মঙ্গলবারেও শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে,
আবার শুরু হল বুধবার।
গাজীপুরের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সকাল সোয়া দশটার দিকে ঢাকা টাঙ্গাইল
মহাসড়ক অবরোধ করে। এ অবস্থায় এসব এলাকার শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা
হয়।
সকালে গাজীপুর সদরের পানিশাইল এলাকার মাছিহাতা সোয়েটার ও তুরাগ
গার্মেন্টস এবং মাধবপুর এলাকার র্যাতডিয়াল গার্মেন্টস এর শ্রমিকরা কাজে
যোগদান করেত এসে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে নূন্যতম মজুরি ৮ হাজার টাকা
এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে তারা কারখানা
থেকে বের হয়ে জিরানী এলাকার নর্দান ফ্যাশন, সাথী ফ্যাশন অ্যাপারেলস, ডরিন
গার্মেন্টসসহ বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
পরে তারা জিরানী বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে নবীনগর-কালিয়াকৈর মহাসড়ক
অবরোধ করে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা আশুলিয়া
থানার একটি টহল গাড়ির বেশ কয়েকটি গ্লাস ভাংচুরসহ মহাসড়কে চলাচলরত
কয়েকটি যানবাহনে ভাংচুর চালানোর চেষ্ঠা করে।
এদিকে, মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পেয়ে শিল্প পুলিশের
১০-১২ জনের একটি দল প্রথমে নবীনগর টেক্সটাইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে
শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করেতে ৪-৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে করতে জিরানীর
দিকে অগ্রসর হত। একপর্যায়ে দলটি আন্দোলনরত শ্রমিকদের মাঝখানে পড়ে যায়।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ, জলকামান ও সাজোয় যান নিয়ে এসে জিরানী এলাকায়
পৌছে শ্রমিদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এসময় উভয় পক্ষের
মধ্যে চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। সংঘর্ষের ঘটনায় এক পুলিশসহ কমপক্ষে ৪০ জন
আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়েছে।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে পুলিশ
কমপক্ষে ৪০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে
শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও র্যাব এর যৌথ অভিযানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
আসে।
অপরদিকে, মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভের ফলে এসময় প্রায়
দেড়ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে র্যাব-১ এর একটি টিম ঘটনাস্থলে
এসে রাস্তায় অবস্থান নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
অন্যদিকে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার কারখানাগুলোতে
সকাল সোয়া আটটার দিকে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। এর কিছুক্ষণ পর চন্দ্রা
ত্রিমোড় এলাকায় নায়াগ্রা টেক্সটাইল, মাহমুদ জিনসসহ কয়েকটি কারখানার
শ্রমিকেরা কর্মবিরতি ও বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার সিনাবাহ এলাকায় মাকস সোয়েটার কারখানা, মিম
নুন নিট ওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকেরা কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর করে। পরে
শ্রমিকেরা মিছিল নিয়ে উপজেলার সফিপুর বাজারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে
অবস্থান নেন। প্রায় আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর বৃষ্টি শুরু হলে তারা
মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। এতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
COMMENTS