আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুর ০৩ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই প্রচার প্রচারনায়। অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। হাট-বাজার, রাস্তার আশপাশে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত বাহারি পোষ্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড। আ’লীগ, বিএনপি এর প্রধান দু’দলই চায় আসন ধরে রাখতে। আ’লীগ চায় তাদের ধারাবাহিক বিজয়ের ধারা ধরে রাখতে। বিএনপি চায় হারানো ঐতিহ্য উদ্ধার করতে। ঢাকার অদূরে গাজীপুর সিটির নবগঠিত ভাওয়ালগড়, মির্জাপুর, পিরুজালী এ ৩টি ইউনিয়ন এবং শ্রীপুর উপজেলার এক পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গাজীপুর-৩ আসন গঠিত। এ আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহাম্মদ এর স্মৃতিধণ্য গাজীপুরের এ আসনটিতে আ’লীগের আধিপত্য ছিল বরাবরই। ১৯৭০ থেকে এ আসনের কর্ণধার ছিলেন প্রয়াত আ’লীগ নেতা শামসুল হক। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। আ’লীগের হাতছাড়া হয় আসনটি। ১৯৭৮ সনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী চৌধুরী তানভীর আহমদ সিদ্দিকী এ আসনে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডের পর জাতীয় পার্টির শাসনামালে ১৯৮৬ সনে জাতীয় পার্টির নেতা আলহাজ্ব মতিউর রহমান এ আসনে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় বারের মত আসনটি হারায় আওয়ামীলীগ। পরপর দু’নির্বাচনে হেরে তৃতীয়বার বিজয় ছিনিয়ে নেয় আ’লীগ প্রার্থী আলহাজ্ব এডভোকেট রহমত আলী। তিনি টানা ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এর নির্বাচনে চারবার বিজয় ছিনিয়ে নেন। ১৯৯১ ও ২০০১ এর নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বিএনপি থাকলেও এ আসনের দখলে ছিল আওয়ামীলীগ। এতে গাজীপুরের এ আসনটি আওয়ামীলীগের দূর্গ রূপে পরিচিতি পায়।
বর্তমান সরকারের শেষ দিকে এসে গাজীপুর সিটি নির্বাচনসহ বিভিন্ন সিটি নির্বাচন ও পৌর নির্বাচনগুলিতে বিএনপি’র একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পেলে তার ঢেউ লাগে গাজীপুর ০৩ আসনের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। বারবার হেরে যাওয়ার গ্লানি ভুলে নতুনরূপে উজ্জিবিত হয়ে উঠে বিএনপি নেতাকর্মীরা। সর্বত্র সৃষ্টি হয় নির্বাচনী আমেজ। এ আসনে টানা ৪ বার বিজয়ী প্রবীন আ’লীগ নেতা আলহাজ্ব এডভোকেট রহমত আলী আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা থাকলেও বয়সের ভার তার পথে অনেকটাই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে গাজীপুর জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: ইকবাল হোসেন সবুজ। তৃণমূল পর্যায়ে তিনি গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ও জনপ্রিয়তা। আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন এমন প্রত্যয় বুকে নিয়ে কাজ করছেন নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যেই মনোনয়নের প্রত্যাশায় প্রচার প্রচারনায় নেমেছেন জেলা আ’লীগের উপদেষ্টা আবু আক্তার হোসেন খান। প্রায় তিন যুগ পর হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। চালাচ্ছেন প্রচার প্রচারনা। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে। ইতিপুর্বে এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমদ সিদ্দিকী। নির্বাচনী এলাকা ভাগাভাগির কারনে ২০০৮ এর নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন গাজীপুরের বর্তমান সিটি মেয়র আলহাজ্ব অধ্যাপক এম এ মান্নান। সীমানা পুন: নির্ধারন এবং গাজীপুর সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় আসন্ন নির্বাচনে অধ্যাপক এম এ মান্নানের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। হেভিওয়েট আ’লীগ প্রার্থীর সাথে দলীয় সমর্থন নিয়ে ১৮ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সমর্থন নিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন তারা হলেন-
বিএনপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পীরজাদা এসএম রুহুল আমিন, উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব শাজাহান ফকির, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, ড্যাব-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, উপজেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি কুতুব উদ্দিন, বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা: শফিকুল ইসলাম, ব্যারিষ্টার ফজলুল করিম মন্ডল জুয়েল। বিএনপি’র নেতাকর্মী ও স্থানীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১৯৭৮ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত নির্বাচনে এ আসনে বারবারই প্রার্থী হয়েছেন অন্য উপজেলার লোক। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বারবার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে আ’লীগ। বিএনপি’র দীর্ঘ প্রার্থী তালিকা থেকে ভেবে চিন্তে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিলে দশম সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৩৬ বছর পর এ আসনটি বিএনপি পুনরুদ্ধার করতে পারবে। আ’লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে প্রবল মানসিক জোড়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন বারবারই বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। আগামী নির্বাচনেও এ আসনের বিজয় ধরে রাখতে চায় আ’লীগ।
COMMENTS