জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাসহ আটক শীর্ষ নেতাদের মুক্তি ও সরকারের নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভকালে জামায়াত শিবির পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সংঘর্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশব্যপী ছড়িয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৭ জেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা, ককটেল বিস্ফোরন এবং গাড়ি ভাংচুর করেছে মারমুখী জামায়াত শিবির। এতে ১১ পুলিশসহ অন্তত ৪০ আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজধানীর নীলক্ষেতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষে ২ পুলিশসহ ১০জন, ফেনীর সোনাগাজীতে ৬ পুলিশসহ ১২ জন, রাজশাহীতে ৩ পুলিশসহ ১০ জন, চাঁদপুরে ৮ জন আহত হয়েছে। এছাড়া সিলেটে পুলিশের উপর হামলা ও অন্তত ২০টি গাড়ি ভাংচুর করেছে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। সাতক্ষীরায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। সিরাজগঞ্জে ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিবিরের নেতাকর্মীরা। উল্লিখিত স্থানগুলোতে যে কোন সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাজধানীর নীলক্ষেতে জামায়াত পুলিশ সংঘর্ষে ২ পুলিশসহ ১০জন আহত
আজ সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার নীলক্ষেতে জামায়াত শিবিরের মিছিলে টহলরত পুলিশ বাধাঁ দিলে জামায়াত শিবিরের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় জামায়াত শিবিরকর্মীরা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি করে। জামায়াত শিবিরের কর্মীরা জবাবে পাল্টা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ও ১০-১২ টি ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায়। এতে ২ পুলিশ সদস্যসহ ১০জন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৮-১০ জামায়াত শিবিরকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
ফেনীর সোনাগাজীতে জামায়াত পুলিশ সংঘর্ষে ৬ পুলিশসহ ১২ জন আহত
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় সোনাগাজী বাজারের মেইন রোডে এনায়েত উল্লাহ্ মার্কেটের সামনে আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শিবিরের মিছিল থেকে ৮-১০ গাড়ী ভাংচুর করা হয়। এতে এলাকার লোকজন আতংকিত হয়ে সব দোকানপাট বন্ধ করে দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ভাংচুরে বাধা দিলে শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয় এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতরা হচ্ছেন, সোনাগাজী থানার এসআই মোহাম্মদ উল্লাহ, কনস্টেবল ইব্রাহীম, মুস্তাফিজ, নূর নবি, আবদুল করিম ও মোস্তফা। পরে পুলিশ শিবিরকর্মীদের ধাওয়া দিলে আহত হয় হয় আরো ৬ শিবিরকর্মী। সোনাগাজী থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারে নি। তবে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
রাজশাহীতে সংঘর্ষে ৩ পুলিশসহ আহত ১০
রাজশাহীর সাহেববাজার গণকপাড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিল বের করলে জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিবিরের নিক্ষিপ্ত বোমার স্প্লিনটারের আঘাতে থানার তিন পুলিশ সদস্য আহত হন বলে জানিয়েছেন, মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান জিয়া। ওসি বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণকপাড়া এলাকায় হঠাৎ জড়ো হয়ে জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেয়।কিন্তু সেখানে মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ পৌঁছে মিছিল শুরুর আগেই তাদের ধাওয়া করে। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ২টি বোমার বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছাত্রভঙ্গ করে দেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান ওসি।
চাঁদপুরে জামায়াত পুলিশ সংঘর্ষে আহত ৮, আটক ৫
দেশব্যাপী বিক্ষোভের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চাঁদপুর শহরের আন্তঃজেলা বাসস্ট্যান্ডে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ১৪ রাউন্ড গুলি ও এক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে শিবিরের ৫ কর্মীকে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সোমবার সকালে শহরের স্বর্ণখোলা রোড থেকে জামায়াত শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছুলে মিছিল থেকে ১০-১৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এছাড়া এসময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরেরও চেষ্টা চালায় তারা। একপর্যায়ে তারা পুলিশকে লক্ষ করে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৪ রাউন্ড গুলি ও এক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। আধা ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে অন্তত আটজন আহত হন। এসময় পুলিশ শিবিরের পাঁচ কর্মীকে আটক করে। বেলা সাড়ে ১১টায় চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব মোর্শেদ জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সাতক্ষীরায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ
আজ সোমবার সকালে সাতক্ষীরা শহরে জামায়াত শিবির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সকালে মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা জজ কোর্টের সামনে সমাবেশ করে। এসময় জামায়াত শিবির কর্মীরা সেখানে ১০-১৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, শহর জামায়াতের সেক্রেটারি প্রভাষক ওমর ফারুক, সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম, শহর শিবির সভাপতি আবু তালেব, সেক্রেটারি আমিনুর রহমান প্রমুখ। এদিকে, জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও দেবহাটা উপজেলার সখিপুরে সংঘর্ষের আশঙ্কায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোল্যা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শহরের বিভিন্ন মোড়ে ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও দেবহাটা উপজেলার সখিপুরে নাশকতা এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
সিলেটে পুলিশের উপর হামলা জামায়াত শিবিরের
সিলেট নগরীতে ঝটিকা মিছিল শেষে পুলিশের উপর হামলা ও অন্তত ২০টি গাড়ি ভাংচুর করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা। সোমবার সকাল ১০টায় বন্দরবাজারে এ হামলা চালানো হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে দলের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করে। কোতোয়ালি থানার ওসি আকতার হোসেন জানান, সকালে বন্দরবাজার এলাকায় হঠাৎ ঝটিকা মিছিল বের করে জামায়াত শিবির। এ সময় সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনাবাহী একটি গাড়িসহ অন্তত ২০টি গাড়ি ভাংচুর করে মিছিলকারীরা। শাহপরান থানার এএসআই হুমায়ুন কবির মোটরসাইকেলে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় তার উপর চড়াও হয় শিবিরকর্মীরা। এ সময় তারা তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ভাংচুর করে তার বুলেট প্রুফ জেকেট ও হেলমেট ড্রেনে ফেলে দেয় হামলাকারীরা, বলেন ওসি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই পালিয়ে যায় জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা। এদিকে রবিবার রাত থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬ জাময়াত শিবিরকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মহানগর পুলিশের সহকারী উপ কমিশনার মো. আইয়ুব জানান, কোতোয়ালি থানায় ১১ জন, জালালাবাদে তিনজন, দক্ষিণ সুরমায় একজন ও শাহপরাণ থানায় একজনকে আটক করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে শিবিরের ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশ
সিরাজগঞ্জে ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াত শিবির। আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে শহরের বড় বাজার থেকে একটি ঝটিকা মিছিলটি বের হয়ে পুরাতন পোস্ট অফিসের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জামায়াত শিবিরের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের বড় বাজার এলাকা থেকে একটি ঝটিকা মিছিল বের করে জামায়াত শিবির। মিছিলটি পুরাতন পোস্ট অফিসের সামনে পৌঁছে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এসময় বক্তব্য রাখেন, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি এড. আবু জাফর ও পৌর শিবিরের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম। সিরাজগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাসুদেব সিনহা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছার আগেই তারা পালিয়ে যায়।
COMMENTS