রাজীব সরকার:
ছেলের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে নিজ বসত-বাড়ি ছাড়লেন ৭৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধা মা। অন্যের বাড়িতে ১০ বছর ধরে আশ্রয় আছেন তিনি। জীবনের শেষ দিনগুলি স্বামী বসতবাড়িতে পাড় করতে চাই মা জোৎসনা বণিক। তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সুত্রাপুর ইউনিয়নের টান-সুত্রাপুর এলাকার পল্লীচিকিৎসক মৃত ডা. কালীপদ বনিকের স্ত্রী। নিজ ঘরে ফিরার জন্য ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অশ্রু ভেজা চোখে তাঁরই বড় ছেলে শংকর বণিকের বিরুদ্ধে থানায় এসে একটি অভিযোগ করেছেন ওই অভাগিনী মা।
ছেলের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে নিজ বসত-বাড়ি ছাড়লেন ৭৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধা মা। অন্যের বাড়িতে ১০ বছর ধরে আশ্রয় আছেন তিনি। জীবনের শেষ দিনগুলি স্বামী বসতবাড়িতে পাড় করতে চাই মা জোৎসনা বণিক। তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সুত্রাপুর ইউনিয়নের টান-সুত্রাপুর এলাকার পল্লীচিকিৎসক মৃত ডা. কালীপদ বনিকের স্ত্রী। নিজ ঘরে ফিরার জন্য ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অশ্রু ভেজা চোখে তাঁরই বড় ছেলে শংকর বণিকের বিরুদ্ধে থানায় এসে একটি অভিযোগ করেছেন ওই অভাগিনী মা।
এলাকাবাসী ও ছোট দুই সন্তান সুত্রে জানা গেছে, সংসার জীবনে জোৎসনা বনিক তিন সন্তান জনণী। বড় ছেলে ডা. শংকর চন্দ্র বনিক, মেঝো ছেলে সুকুমার বনিক ও ছোট ছেলে কমল বনিক ও স্বামীকে নিয়েই তাঁর পরিবার। অভাবের সময় জোৎসনা বনিক বাবার বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে উপজেলার টান সুত্রাপুর এলাকায় তাঁর স্বামীর নামে ১৫ শতাংশ জমি কিনে। ওই জমির উপর একটি বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে পরিবারের পাচ সদস্য মিলে বসবাস করতেন তারা। কিন্তু ২০ বছর আগে জোৎসনা বনিক তার স্বামী ডা. কালীপদ বনিককে মৃত্যু হলে তিন সন্তানকে নিয়ে শোকে ছায়ায় ডাকা পড়ে যান। সংসারের একমাত্র বট বৃক্ষ তার স্বামী মৃত্যুর পর থেকেই তিনি একটি বট বৃক্ষের মত শক্ত হাতে তার সংসারকে আকড়ে ধরেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে তিনি ছেলেদের ভবিষৎ গড়ে তোলেন। অথচ সময়ের ব্যবধানে এখন তিনি ৭৫ বছরে পা রেখেছেন। পৈত্তিক সুত্রে পাওয়া পল্লীচিকিৎসক হিসেবে কর্মরত রয়েছে শংকর। মেঝো ছেলে প্রতিবন্ধী ও ছোট ছেলে দিন মজুর। ছেলেরা অনেক বড় হয়েছেন। উপরওয়ালার পরেই যে মায়ের স্থান সে কথাটাও ভুলে গেছে তারই বড় ছেলে ডা. শংকর বনিক। যে মায়ে উপর গরম মেজাজে কথা বললে উপরওয়ালা নারাজ হয়, সেই মাকে ভরন-পোষন না করে মারধর করে নিজ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় বড় ছেলে। এ ঘটনায় ১২/১৩ দিন আগে জোৎসনা বনিক এলাকার গন্যমান্য লোকজনকে জানালে তারা গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিচার না মেনে চলে যায় শংকর। এরপর মা জোৎসনা বনিকসহ ছোট দুই ভাইকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় শংকর। বর্তমানে জোৎসনা বনিক দুই ছেলেকে নিয়ে উপজেলার নামা সুত্রাপুর এলাকার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েও ক্ষান্ত হয়নি শংকর, বিভিন্ন সময় তার সহযোগীদের দিয়ে বৃদ্ধা মাসহ ছোট দুই ভাইকে গুম, হত্যাসহ নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ কারণে বৃদ্ধা মা জোৎসনা বনিক বাদী হয়ে বড় ছেলে শংকর বনিকের বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে ঘৃনা জানিয়েছেন ওই এলাকার মায়েরা।
এ ঘটনায় ওই বৃদ্ধ মা জোৎসনা বনিক চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলেন, আমি স্বামীর ভিটায় আশ্রয় চাই, জীবনে নিরাপত্তা চাই। স্বামী মারা যাবার পর অনেক কষ্টে এই সংসারটাকে আমি একটি গাছের শিকড়ের মতো আকড়ে ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি ধরে রাখতে পারলাম না। নিজের ছেলেই মারপিট করে বাড়ি থেকে রেব করে দিয়েছে। এখন অন্যের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। গ্রামে বিচার ডেকেছিলাম বলে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে শংকর তার সহযোগী বীরেন্দ বনিক, হরে বনিক ও নিখিলকে দিয়ে আমাকে ও দুই ছেলেকে গুম, হত্যাসহ নানা ভয়ভীতি দেখিয়েছে। তাই নিরুপায় হয়ে জীবনের নিরাপত্তার লাইগা থানায় একটি অভিযোগ করেছি। চোখের জল মাটিতে পড়ছে আর বলছে, আপনারা বলতে পারেন কতটা কষ্ট ও নিরাপত্তাহীনতায় একজন মা তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে নালিশ করে।
COMMENTS