দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক আদায়ে প্রয়োজেনে লাগাতার হরতাল-অবরোধ দেয়া হবে।
রবিবার নরসিংদী পৌর শিশুপার্কে (বালুর মাঠ) ১৮ দল আয়োজিত জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতা এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, সরকার আদালতের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তুলে দিয়েছেন। অথচ আদালতের রায়ে আরো দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা আছে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচনের দাবি অযৌক্তিক কিনা উপস্থিত জনতার প্রতি তিনি এমন প্রশ্ন রাখলে তারা জবাবে বলেন, ‘না।’
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের বাইরে অন্য দলগুলো তত্ত্বাবধায়কের দাবি করছে উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘কিছুদিন আগে একটি জরিপে ৯০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে মত দিয়েছে। এখন হয়তো ৯৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এখন সংবিধানের দোহাই দেন। তিনি যখন ’৯৬ তে বিরোধী দলে ছিলেন, তখন সংবিধান আগ্রাহ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জ্বালাও-পোড়াও করেছিলেন। আন্দোলনের নামে ১৭৩ হরতাল দিয়েছিলেন।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগের মতো মানুষ হত্যা করতে চাই না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আলোচনার পথ রুদ্ধ করে দিয়েচ্ছেন। এখনো সময় আছে। নির্দলীয় সরকার ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব পেলে বিএনপি সাড়া দেবে।’
চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধন করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, মন্ত্রী-এমপিরা থাকবেন এমন নির্বাচন কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হয় না, এদেশেও হবে না।’
‘সংসদে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, সংসদে বিল এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করুন। আমরা কোনো অযৌক্তিক দাবি করছি না। হয় তত্ত্বাবধায়ক দেবেন, না হয় বিদায় নেবেন’ বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে চান না, কারণ ক্ষমতায় না থাকলে পুলিশকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, র্যাব বা সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আর নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারদেরও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’
নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সরকারের আজ্ঞাবহ আখ্যা দিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসি মেরুণ্ডহীন, তারা নিজেরা কিছু করতে পারে না। সরকারকে শুধু জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর করে।’
তিনি বলেন, ‘ইসিকে বলবো- অসহায় হলে পদত্যাগ করুন। আপনাদের মতো জ্বি হুজুর মার্কা কমিশনারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে তাদের বিশেষ বাহিনী ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও গুণ্ডালীগও পালিয়ে যাবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে আপনাদের নরসিংদীতে কোনো কাজ হয়েছে? হয়নি। সারাদেশেরই একই অবস্থা। তাহলে এ টাকা যায় কই? এ টাকা যায় সরকারি দলের এমপিদের পকেটে। আমার শোনা কথা- তাদের প্রত্যেকেই মালয়েশিয়া-কানাডায় বাড়ি করেছেন।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারা রাজনীতির সূচনা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেন, নতুনধারা কী? একটু অপেক্ষা করুন। আরেকটু পরে আমরা পরিষ্কার করে বলবো। না হলে আমাদের কথা পরে তারা (সরকার) বলা শুরু করে দেবেন।’
খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকারের আমলে শুধু লুটপাট হয়েছে। শেয়ারবাজারে ৩৩লাখ মানুষ পথে বসেছে। ডেসটিনি ও হলমার্কের টাকা কোথায় গেল?
সরকারকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা কারও কথার ধার ধারি না। দেশের মানুষের কথায় দেশ চলব। কোন দেশ কি বলল তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা বলেছি, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না, এটাই শেষ কথা।’
বিএনপি চেয়ারপারসন নরসিংদীর জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের আন্দোলনে প্রস্তুত আছেন? জনতা জবাব দেয়, ‘হা’।
তিনি বলেন, ‘এরপর আমার রংপুর ও রাজশাহীতে জনসভা আছে। আমি এ বার্তা পৌছে দেব যে, নরসিংদীর জনগণ প্রস্তুত আছে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘সামনে সংসদ অধিবেশন, সংবিধান সংশোধন করে দাবি মেনে নিন। না হয় দাবি আদায়ে টানা হরতাল ও অবরোধসহ সব ধরনের কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে বসে থাকবো। তখন জনগণ বলবে- হয় তত্ত্ববধায়ক সরকার দাও, না নয় হাসিনা তুমি বিদায় হও।’
COMMENTS