জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে: দুইদিনে জাতিসংঘে কম ঘটনা ঘটলো না। সবগুলোই আনুষ্ঠানিকতায় ঠাসা। কিন্তু তার মাঝেও ঘটে গেলো কিছু ছোট ছোট ঘটনা। বিভিন্ন সূত্রে জানা ঘটনাগুলো গাজীপুরঅনলাইন.কম পাঠকের জন্য-
ইওর সান ইজ ভেরি স্মার্ট
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এ নিয়ে তিন দফা দেখা হয়েছে। তবে কোনোটিই আনুষ্ঠানিক আলোচনা নয়। ২৩ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড অব অ্যাস্টোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডি বিশ্ব নেতাদের সম্মানে যে ডিনার দিয়েছিলেন তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন সপরিবারে। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এরই মধ্যে সেই ডিনারে প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামার আতিথেয়তায় মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে। যা নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। তবে জয়কে নিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কি ভাবলেন তা জানা গেলো পরের দিন।
মঙ্গলবার সকালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের উন্নয়ন বিতর্ক শুরুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। বাংলানিউজের পাঠকরা আগেই জানেন, নর্থ লন বিল্ডিংয়ে সাধারণ অধিবেশনের যে অস্থায়ী কক্ষ এবার সাজানো হয়েছে তাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসনটির ঠিক সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আসন। সাধারণ অধিবেশন কক্ষেই দেখা হয়ে গেলো দুই নেতার। প্রথম সুযোগেই প্রেসিডেন্ট ওবামা শেখ হাসিনাকে বললেন, ইওর সান ইজ ভেরি স্মার্ট, অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্ট। কেনো সেকথাটি বারাক ওবামা বললেন তা জানতে চাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ওবামাও ইলাবোরেট করেননি। দুজনই স্বভাবসূলভ মিষ্টি হাসলেন।
চুল একটিও কালো থাকবে না!
বারাক ওবামার চুল নিয়ে রসিকতা প্রধানমন্ত্রীর নতুন নয়। গেলো বছরও চুল পেকে যাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন। এবারও ছাড়লেন না। তবে এবার কথাটি বললেন দুপুরে বান কি মুনের মধ্যাহ্ন ভোজের সময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বললেন, চুলগুলো আরও সাদা হয়ে গেছে। চলতি মেয়াদ শেষ করার মধ্যে আর একটিও কালো থাকবে না! চুল নিয়ে মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট ওবামা এবার প্রধানমন্ত্রীকে কি বললেন তা অবশ্য জানা যায়নি।
শাড়ি পরার সুবিধা!
সাধারণ অধিবেশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে যখনই প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন অনেকেই তার দিকে এগিয়ে আসছেন, বলছেন তোমার দেশ খুব ভালো করছে। এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশ গুরুত্ব পাচ্ছে কারণ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে। প্রধানমন্ত্রী একাধিক ফোরামে বক্তব্য রেখে সেকথা জানাচ্ছেন। অনেকে আগে থেকেই জানেন। তাদের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। আর এ কারণে অনুষ্ঠানের শুরুতে ও শেষে দেখা গেছে বিশ্বনেতাদের অনেকেই এগিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেনের মতে, এটি আসলে শাড়ি পরার সুবিধা। পোডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পর অনেকেই তাকে সহজে বুঝে ফেলেন তার অন্যরকম পোশাকের জন্য। অন্যদের মতো পোশাক পরলে হয়তো এমনটা নাও হতে পারতো। প্রধানমন্ত্রীকে যে বিশ্ব নেতারা এগিয়ে গিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন বা কথা বলছিলেন তা অনুষ্ঠানগুলোর লাইভ ওয়েবকাস্টেও দেখা গেছে। ফলে প্রতিটি অনুষ্ঠানের পরেও ফ্লোরে একটু বেশি সময় কাটাতে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীকে।
বাংলাদেশ একার দোষ নয়!
উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম যখন চলছিলো, বিশ্ব নেতারা যখন ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছিলেন, গুরুগম্ভীর আলোচনা চলছিলো তখন হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে যায়। কয়েক মুহূর্ত বিদ্যুৎবিহীন ছিলো ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে। বিদ্যুৎ চলে এলো স্বল্প সময়েই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ছেড়ে কথা বললেন না যুক্তরাষ্ট্রকে। দ্রুত নিজের মাইক্রোফোন অন করে বললেন, কেবল বাংলাদেশ একার দোষ নয়। এখানেও বিদ্যুৎ যায়। শুধু একা বাংলাদেশকে দুষবেন না। এ কথা শুনে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের সবাই হাততালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানান। বিষয়টি খুবই স্বপ্রতিভ ছিলো একই সঙ্গে কৌতুকপূর্ণও।
ইস্ট রিভারের পাশে হাওয়া খাওয়া!
বক্তৃতা শুনতে শুনতে আর দিতে দিতে প্রধানমন্ত্রীরও আর ভালো লাগছিলো না। একটু ব্রেক ঠিকই দরকার ছিলো। এমন সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি জানতে চাইলেন নদীর তীরে যাবেন কি না। এক কথায় রাজি প্রধানমন্ত্রী। গেলেন নদীর তীরে। কিছুটা রিল্যাক্সড হওয়া গেলো। ছবিও তোলা হলো কিছু।
হেঁটেই পার হয়ে যাই!
জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে বাইরে কাতার মিশনে কাতারের আমীরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে আলোচনা শেষে যখন ফিরছিলেন তখন আর গাড়িতে ওঠেন নি। বললেন, গাড়িতে না চড়ে বরং হেঁটেই যাই। এরপর পুরো পথটি হেঁটেই ফের জাতিসংঘ ভবনে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আস্তে কথা, বের করে দেবে তো!
ব্যস্ত দিন শেষে যখন হোটেলে ফিরলেন সেখানে লবিতে দেখা গেলো আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ভিড়। প্রধানমন্ত্রীকে দেখে স্লোগান না দিলেও একটা শোরগোল উঠলো। প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এসময় বললেন, আপনারা আস্তে কথা বলুন, নইলে তো ওরা বের করে দেবে। নেতা কর্মীদের মধ্যে একজন এসময় মোনাজাত ধরলেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া প্রার্থনা। নিজেও মোনাজাত ধরলেন প্রধানমন্ত্রী। মোনাজাত শেষে এগিয়ে গেলেন হোটেল কক্ষের দিকে।
COMMENTS