শ্রীপুর থেকে মো. আকতার হোসেন: গ্রাম্য সালিশে মাতবরদের বিবাহ বিচ্ছেদের রায়ে শ্রীপুরে এক স্কুল শিক্ষিকা আত্মহত্যা করেছে।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নে গাজীপুর পূর্ব পাড়া নিজ বাড়িতে ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস দিয়ে স্কুল শিক্ষিকার আত্মহত্যা করেন। আমি জীবন দিয়ে জুয়েলের ভালবাসার দাম দিলাম, সে যেন আমার লাশ না দেখে, জীবনের শেষ চিঠিতে প্রেমিক স্বামীর জন্য এমনি আকুতি প্রকাশ করে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষিকা পারুল আক্তার (২১)।
নিহত শিক্ষিকার পালিত পিতা নিজাম উদ্দিন জানান, দুই বছর বয়সে কপাটিয়া পাড়া গ্রামের সূর্যত আলীর কাছ থেকে পালক এনে সন্তান স্নেহে বড় করেন পারুলকে। একই গ্রামের মাহাবুব আলমের পুত্র জুয়েলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠায়, গত দুই বছর পূর্বে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে একটি মোটরসাইকেলের জন্য চাপ দেয় পারুলের স্বামী, শ্বশুড়-শাশুড়ী। এ কারণে স্বামীর সংসারে জায়গা হয়নি তার। নিজামের বাড়িতে থেকেই স্কুলে শিক্ষকতা করতো পারুল। সমপ্রতি শ্বশুড় বাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও যৌতুক আইনে স্বামী শ্বশুড়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে সে। এতে যৌতুক লোভী স্বামী পারুলকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, ৮ সেপ্টেম্বর রাতে স্থানীয় ইউপি মেম্বার তাজুল ইসলাম ও সাহাব উদ্দিনকে হাত করে গাজীপুরে বাজারে এডভোকেট লাভলুর চেম্বারে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার রফাদফা করে শিক্ষিকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তালাক রেজিস্ট্রি করে। পারুলের পালিত মা হাসনা জানায়, পারুল তার স্বামীকে খুব ভালবাসতো সে যে কোন মূল্যে সংসার করতে চেয়েছিল। কিন্তু গ্রাম্য সালিশে মাতবরদের এমন সিদ্ধান্তে সে খুব কষ্ট পেয়ে একটুও ঘুমায়নি। মৃত্যুর পূর্বে ছোট্ট চিরকুটে পারুল লিখে যায়, জুয়েল যেন আমার লাশ না দেখে, সবার কাছে আমার একটা অনুরোধ। আমি জুয়েলের ভালবাসার দাম দিলাম আমার প্রাণ দিয়ে।
শ্রীপুর থানা এস.আই আ. ছালাম জানান, নিহতের লাশের দেহতে চিরকুট ও মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায়। জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। তালাকের ঘটনার সময় স্থানীয় ইউপি মেম্বার তাজুল ইসলাম সাহাব উদ্দিন এবং মাদবর মজিবুর মাস্টার, নজরুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন ও পারুলের পালিত পিতা নিজাম উদ্দিন উপস্থিত ছিল। নিহতের বড় ভাই জিন্নাত জানায়, মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তিতে ঐ দু'ইউপি মেম্বার ও গ্রাম্য মাদবর নিহত শিক্ষিকার পিতা নিজাম উদ্দিনকে নগদ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে পারুলের বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য চাপ দেয়। কাজী অফিসে তালাকের রেজিস্ট্রারে পারুলের স্বাক্ষর গ্রহণ করে। প্রেমিক স্বামীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে তালাক দিয়ে সে আত্মহননের পথ বেছে নেয় এলাকাবাসী জানায়। শ্রীপুর উপজেলা প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক সমিতির নেতা পর্যটক শাহজাহান মাস্টার বলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মাতবরদের এই রায়ের কারণেই শিক্ষিকা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আমরা ঐ সালিশের ইউপি সদস্য ও মাতবরদের বিচারের দাবি ও নিন্দা জানাই। পুলিশ নিহতের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করে।
COMMENTS