শ্রীপুরে চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে ঢাকা থেকে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রী (১৩)। গত বৃহস্পতিবার রাতে ছয় সন্ত্রাসী ঘরে ঢুকে ওই কিশোরীকে হাত-পা বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় কিশোরীর চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে মারধর করে পালিয়ে যায় ধর্ষকরা। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। শ্রীপুরের তেলিহাটীর সাইটালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে গণধর্ষণের পর গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে সন্ত্রাসীরা। তাদের ভয়ে ধর্ষিত কিশোরীর স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেনি। গতকাল দুপুরে ধর্ষিত কিশোরী বাদী হয়ে ছয় ধর্ষক সন্ত্রাসীকে আসামি করে শ্রীপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ধর্ষকদের গ্রেপ্তার বা কোনো পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়নি।
অভিযুক্ত ধর্ষকরা হলো শ্রীপুরের সাইটালিয়া এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে সুজন (২৮), বুইট্যা মাইনউদ্দিন মাইনুর ছেলে খোকন মিয়া (২৫), হেলাল উদ্দিন হেলুর ছেলে জুয়েল মিয়া (২২), পুইদ্যারচালা গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে সজিব (২৫), নাজিম উদ্দিনের ছেলে সোহেল (২৫) ও একই ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের অহেদ আলীর ছেলে আলাউদ্দিন (২৮)।
ধর্ষিত কিশোরীর স্বজনরা জানায়, গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই কিশোরী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়নের সাইটালিয়া এলাকায় তার চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে। বেড়াতে আসার পর থেকে এলাকার চিহ্নিত বখাটে সন্ত্রাসীরা কিশোরীকে কয়েক দফা যৌন হয়রানি করে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে কিশোরী ঘরে বসে একা টেলিভিশনে নাটক দেখছিল। বাড়ির অন্য সদস্যরা পাশের ঘরে গল্পে মেতে ছিল। এ সময় শ্রীপুরের সাইটালিয়া এলাকার সুজন, খোকন, জুয়েল, সজিব, সোহেল ও আলাউদ্দিন হকিস্টিক উঁচিয়ে ঘরে ঢোকে। এরপর কিশোরীর মুখ চেপে ধরে হাত-পা বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা।
ধর্ষিত কিশোরীর স্বজনরা আরো জানায়, ধর্ষণের পর রাতভর বাড়ি ঘিরে থাকে সন্ত্রাসীরা। ধর্ষকদের পক্ষ নিয়ে সহযোগী সন্ত্রাসীরা রাতে কিছু সময় পর পর বাড়িতে এসে ঘটনা কাউকে জানালে কিশোরীকে হত্যা করে লাশ গুমের হুমকি দেয়। গতকাল সকালেও দুই দফা বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের ভয়ে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ধর্ষিত কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেনি তারা। দুপুরের পর স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে ধর্ষিত কিশোরীসহ স্বজনদের শ্রীপুর মডেল থানায় পৌঁছে দেয়।
কিশোরীর ভাবি জানান, ওই কিশোরী চার বছর বয়সে মাকে হারায়। ফলে সে তার চাচা-চাচির কাছে বড় হচ্ছে। কান্নায় ভেঙে পড়ে কিশোরীর চাচি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিয়াল-কুকুরের মতো ছয়টা লোক মেয়েটার ওপর নির্যাতন চালায়।'
শ্রীপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) আমির হোসেন জানান, নির্যাতিত কিশোরী বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ করেছে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক এই গণধর্ষণ ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
এদিকে ধর্ষিত কিশোরীর স্বজনরা অভিযোগ করেছে, থানায় অভিযোগ করার পরও পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে তৎপর হয়নি। এমনকি গতকাল ছুটির দিনের দোহাই দিয়ে ধর্ষিত কিশোরীর কোনো ডাক্তারি পরীক্ষারও ব্যবস্থা করেনি।
তবে শ্রীপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আক্তারুজ্জামান বলেন, 'বিষয়টি ওসি নিজে দেখছেন। তিনি আসামিদের গ্রেপ্তারে কৌশলে অগ্রসর হচ্ছেন।'
COMMENTS