সাধারণের কাছে বিষয়টি চক্ষুলজ্জার হলেও এটা যেন সংসদ সদস্যদের অধিকার। আমাদের মতো গরিব দেশে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধা পেয়ে থাকেন। দিনের পর দিন সংসদ অধিবেশনে যাওয়া থেকে বিরত থেকে জনগণকে অধিকারবঞ্চিত রাখলেও চলতি মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা থেকে তাঁরা নিজেদের বঞ্চিত করেন না। এ ব্যাপারে সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের অনৈক্য কোনো দিন চোখে পড়েনি। সংসদে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির আইন পাশের সময় বিরোধী দলের এমপিরা প্রতিবাদতো করেইনি বরং নিরব ভূমিকা পালন করেছেন।এরই মধ্যে অনেকে শুল্কমুক্ত গাড়ি নিয়েও এসেছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩৫০ সাংসদ এই সুবিধা নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াসহ ৩৫ সাংসদ এই সুবিধা গ্রহণ করেননি।
এনবিআরের শর্ত অনুযায়ী উপনির্বাচনে বিজয়ী এমপিদের গাড়ি আনার ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের পর কমপক্ষে দুই বছর সংসদের মেয়াদ থাকার যে বাধ্যবাধকতা ছিল সেটা পরিবর্তন করে একদিনের সংসদ সদস্যও যাতে শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়ি আনতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়! যদিও প্রধানমন্ত্রী বিলাসবহুল গাড়ি পরিহার করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন মন্ত্রী-এমপিদের। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ উপেক্ষা করে সরকারি ও বিরোধী দলের শতাধিক ব্যক্তিই এনেছেন কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ি।
শুল্কমুক্ত গাড়ি আনার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র ৩৫ জন ব্যতিক্রম-অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (সিলেট-১), কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী (শেরপুর-২), স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-১), শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ (সিলেট-৬), সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ (হবিগঞ্জ-৪), বেসামরিক বিমান ও পরিবহন মন্ত্রী মো. ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১), বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের (লালমনিরহাট-৩), বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১), স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩), স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির (ময়মনসিংহ-৩), ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. শাহজাহান মিয়া (পটুয়াখালী-১), খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক (টাঙ্গাইল-১), ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা (জামালপুর-৫), মো. জাকির হোসেন (কুড়িগ্রাম-৪), ইসহাক হোসেন তালুকদার (সিরাজগঞ্জ-৩), এস কে আবু বাকের (নড়াইল-২), নারায়ণচন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), শওকত মোমেন শাহজাহান (টাঙ্গাইল-৮), আবদুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯), রেবেকা মোমেন (নেত্রকোনা-৪), নাজমুল হাসান পাপন (কিশোরগঞ্জ-৬), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ (বর্তমানে সদস্য নন), সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন (মাদারীপুর-৩), শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২), সৈয়দ মহসীন আলী (মৌলভীবাজার-৩), জোবেদা খাতুন (মহিলা আসন-১২), সাধনা হালদার (মহিলা আসন-৩২), নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী (মহিলা আসন-৪৩), হাসিনা মান্নান (মহিলা আসন-৪৮), পিনু খান (মহিলা আসন-৪৯), পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি (চাঁদপুর-৩)। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির যেসব এমপি শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনেননি তাদের মধ্যে আছেন_ শাহ মোফাজ্জাল হোসাইন কায়কোবাদ (কুমিল্লা-৩), বরকত উল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩) ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (চট্টগ্রাম-২)।
অনেকে আবার বেশি দামের গাড়িও ক্রয় করেছেন। জাপানে তৈরি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের প্রাডো টিএক্স ও ডিজেলচালিত ভিএক্স মডেলের প্রতিটি গাড়ির দাম বাংলাদেশে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি। এ ধরনের গাড়িকে নিরুৎসাহিত করতে ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি শুল্ক নির্ধারণ করেছে এনবিআর। ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকার এসব গাড়িতে তাই শুল্কই আসে সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। কিন্তু শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে বাংলাদেশের সাংসদরা বেশি আনছেন বিলাসবহুল এ গাড়ি।
বিলাসবহুল গাড়ি এনেছেন- ঝালকাঠি-১ আসনের বজলুল হক হারুন, নরসিংদী-৩ আসনের জহিরুল হক ভুঁইয়া মোহন, কুমিল্লা-৭ আসনের অধ্যাপক আলী আশ্রাফ, রংপুর-৪ আসনের টিপু মুন্সী, ময়মনসিংহ-৭ আসনের রেজা আলী, বরগুনা-২ আসনের গোলাম সবুর, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নাসিম ওসমান, গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঝালকাঠি-২ আসনের আমির হোসেন আমু, বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্রচন্দ্র দেবনাথ, মাদারীপুর-১ আসনের নুর-ই-আলম চৌধুরী, বগুড়া-১ আসনের আবদুল মান্নান, যশোর-৫ আসনের খান টিপু সুলতান, চট্টগ্রাম-১২ আসনের প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, পটুয়াখালী-২ আসনের আ স ম ফিরোজ, চট্টগ্রাম-৩ আসনের এবিএম আবুল কাসেম, নাটোর-১ আসনের আবু তালহা, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের মো. মতিউর রহমান, ময়মনসিংহ-১০ আসনের গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনের নুরুল ইসলাম বিএসসি, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক, বরিশাল-৬ আসনের এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, ঢাকা-১০ আসনের একেএম রহমত উল্লাহ, ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, কুমিল্লা-৬ আসনের আ ক ম বাহাউদ্দিন, বরিশাল-৩ আসনের গোলাম কিবরিয়া টিপু, সাতক্ষীরা-২ আসনের এমএ জব্বার, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমএ মান্নান, ভোলা-২ আসনের তোফায়েল আহমেদ, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের নাজিম উদ্দিন আহমেদ, নওগাঁ-৩ আসনের আকরাম হোসেন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পঞ্চগড়-২ আসনের নুরুল ইসলাম সুজন, নোয়াখালী-২ আসনের জয়নাল আবেদীন ফারুক, ঝিনাইদহ-২ আসনের মো. শফিকুল ইসলাম, গাজীপুর-৩ আসনের অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী, নেত্রকোনা-১ আসনের মোস্তাক আহমেদ রুহী, রাজশাহী-৬ আসনের শাহরিয়ার আলম, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সারাহ বেগম কবরী, ফরিদপুর-১ এর আবদুর রহমান, সিলেট-২ আসনের শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের বেগম রুমানা মাহমুদ, নওগাঁ-৫ আসনের আবদুল জলিল, সিলেট-৩ আসনের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী, নাটোর-৪ আসনের এমএ কুদ্দুস, বগুড়া-৫ আসনের হাবিবুর রহমান, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের একেএম মায়দুল ইসলাম, খাগড়াছড়ির যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, মাগুরা-২ আসনের বিরেন শিকদার, গাজীপুর-৫ আসনের বেগম মেহের আফরোজ, ঢাকা-১৬ আসনের ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর-২ আসনের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর-৬ আসনের আজিজুল হক চৌধুরী, ফরিদপুর-৩ আসনের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, চাঁদপুর-৪ আসনের হারুনুর রশীদ, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, বরিশাল-৫ আসনের অ্যাডভোকেট মো. মজিবুর রহমান সরোয়ার, চট্টগ্রাম-৫ আসনের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, কক্সবাজার-১ আসনের হাসিনা আহমেদ, শরীয়তপুর-৩ আসনের মো. আবদুর রাজ্জাক, ভোলা-১ আসনের আন্দালিব রহমান, মানিকগঞ্জ-৩ আসনের জাহিদ মালিক, যশোর-১ আসনের শেখ আফিল উদ্দিন, টাঙ্গাইল-৫ আসনের আবুল কাশেম, চট্টগ্রাম-১১ আসনের সামশুল হক চৌধুরী, রাজশাহী-১ আসনের ওমর ফারুক চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাগুফতা ইয়াসমিন, কুষ্টিয়া-১৬ আসনের কেএইচ রশিদুজ্জামান, যশোর-৪ আসনের রঞ্জিত কুমার রায়, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সাংসদ এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের দীপংকর তালুকদার, ঢাকা-১৪ আসনের আসলামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের আবদুল ওয়াদুদ, ঢাকা-১৯ আসনের তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ, টাঙ্গাইল-৩ আসনের মতিউর রহমান, মৌলভীবাজার-২ আসনের নওয়াব আলী আব্বাস খান, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের মো. মজিবুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের এবি তাজুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৪ আসনের আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, পিরোজপুর-৩ আসনের আনোয়ার হোসেন, ফরিদপুর-৩ আসনের খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কুড়িগ্রাম-১ আসনের একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, লালমনিরহাট-১ আসনের মোতাহার হোসেন, চট্টগ্রাম-৬ আসনের ড. হাছান মাহমুদ, জয়পুরহাট-২ আসনের ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, গাজীপুর-২ আসনের জাহিদ আহসান রাসেল, চট্টগ্রাম-৪ আসনের আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রংপুর-৫ আসনের এইচএন আশিকুর রহমান, জামালপুর-৪ আসনের মো. মুরাদ হাসান, কক্সবাজার-৪ আসনের আবদুর রহমান বদি, কুমিল্লা-৮ আসনের নাসিমুল আলম চৌধুরী, ঢাকা-৩ আসনের নসরুল হামিদ, মানিকগঞ্জ-২ আসনের এসএম আবদুল মান্নান, বাগেরহাট-১ আসনের শেখ হেলাল উদ্দিন, কুমিল্লা-৫ আসনের আবদুল মতিন খসরু, সুনামগঞ্জ-২ আসনের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নরসিংদী-১ আসনের মো. নজরুল ইসলাম, জামালপুর-৩ আসনের মির্জা আজম প্রমুখ। আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদদের মধ্যে মমতাজ বেগম, বেগম নাসরিন জাহান, বেগম পারভীন তালুকদার, রাশেদা বেগম হীরা, অপু উকিল, বেগম তহুরা আলী, বেগম ফরিদুন্নাহার লাইলী, সালমা ইসলাম, বেগম নাজমা আক্তার, সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া।
COMMENTS