প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বাদ দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর ফর্মূলা অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য ‘সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার’ গঠন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ওয়ার্কার্সপার্টি, সিপিপি-বাসদ ও গণফোরামসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে মন্ত্রীদের অবহিত করেন। তিনি জানান, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন তিনি নিজেই। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রী ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।
গত শনিবার দুপুরে এক ঘন্টা চেষ্টা করেও টেলিফোনে বিরোধী দলীয় নেত্রীর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। পরবর্তী সন্ধ্যায় দুই নেত্রীর মধ্যে ৩৭ মিনিটের ফোনালাপ হয়। এর মধ্যে বিরোধী দলীয় নেত্রী ২৫ মিনিট কথা বলেন। আর প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন মাত্র ১২ মিনিট। ফোনালাপে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ২৮ অক্টোবর নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রী হরতালের অযুহাত দেখিয়ে সংলাপের প্রস্তাবে সাড়া দেননি।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিরোধী দলীয় নেত্রীকে ১৫ আগস্ট কেক কেটে জন্মদিন পালন না করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি ওইদিন কেক কাটবেন বলে জানান। এছাড়াও দেশ ও জাতির স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করে সংলাপে বসার অনুরোধ করলে তিনি তা রাখেননি।
প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভাকে জানান, আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। নভেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনকালীন সরকার অর্থাৎ সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। আর সর্বদলীয় সরকার গঠনের লক্ষে সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন।
ইতিমধ্যে মহাজোটের শরিক এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন। শিগগির ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরী, এলডিপির কর্ণেল অলি আহমেদ ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সর্বদলীয় সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা করবেন। এমনকি জামায়াত ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী আশা করছেন, বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে সমঝোতার জন্য সংলাপে বসবেন। প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় অংশ নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবেন।
সূত্র আরো জানায়, হরতালকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা এবং সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের বন্ধুমহল এবং বিচারপতিসহ ভিআইপিদের বাসায় বোমাবাজির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হরতালের নামে নাশকতা এবং বোমাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি এসব নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বিরোধী দলকে ওই সরকারের মন্ত্রিসভার জন্য তার দলের সংসদ সদস্যদের নামের তালিকা দেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন। তার দুইদিন পর ২১ অক্টোবর বিরোধী দলীয় নেত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বিগত ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে সরকারি দল ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ৫ জন করে ১০ জন উপদেষ্টা এবং একজন সম্মানিত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
- শীর্ষ নিউজ
COMMENTS