ঈদের ছুটিতে প্রেমকানন ও বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই চলছে বহিরাগতদের আনাগোনা। ফলে নানারকম অসামাজিক কর্মকাণ্ডও বেড়ে চলেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ে কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, বিনোদন প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) চত্বর। এর পর পরই আছে কলাভবন, মল চত্বর, কার্জন হল ও শহীদ মিনার। এসব এলাকায় যেমন চলছে বহিরাগতদের আড্ডা, তেমনি চলছে প্রেমিক প্রেমিকাদের অবাধ ও ঘনিষ্ঠ আলাপন। অনেকে আবার পরিবার নিয়ে আসছেন, আবার অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী করছেন। সকাল থেকে এ পরিস্থিতি থাকছে গভীর রাত পর্যন্ত।
টিএসসি এলাকার পাশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এই দুই এলাকা মিলে মানুষের মেলার মত অবস্থার সৃষ্টি হয় প্রতিদিন। টিএসসির চত্বর, ডাচ ও রাজু ভাস্কর্যের চারদিকে মানুষ যেভাবে খুশি যেমন খুশি আড্ডা দিচ্ছে। অথচ এসময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এখনে যারা আসছেন তার বেশিরভাগই বহিরাগত, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আসছেন খুব অল্প সংখ্যক। সন্ধার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যের চারপাশে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়।
কলা ভবনের সামনে আমতলা প্রেমের জন্য বিখ্যাত। আর ঈদের এ বন্ধে আমতলা হয়ে উঠেছে প্রেমের চারণক্ষেত্র। সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত প্রেমিক যুগলদের দেখা যায় যুগলবন্ধি হয়ে গভীর আলাপনে। সন্ধার পর প্রায়ই আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় প্রেমিক যুগলদের। এছাড়া কলা ভবনের সামনে আরেক প্রেমের স্থান হল বটতলা। এ স্থানের অবস্থা একই। কলা ভবনের পাশে আছে মল চত্বর। এখানে দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ আনাগোনা করেন। তবে এ স্থানে আড্ডাই চলে বেশি।
কার্জন হল পরিণত হয়েছে বিনোদন কেন্দ্রে। কার্জন হলে প্রবেশের দোয়েল চত্বরসংলগ্ন গেটটি বন্ধ থাকলেও ডিন অফিসের গেট এবং শিক্ষা ভবনের বিপরীত গেট খোলা থাকে। ফলে এ দুই গেট দিয়ে মানুষ ভিতরে প্রবেশ করছেন। কার্জন হলের মাঠে যেমন খুশি আড্ডা দিচ্ছেন মানুষ। আর বিল্ডিংগুলোর বাড়ান্দায় প্রেমিক যুগল আড্ডা দিচ্ছেন। প্রায়ই তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। কার্জন হলের কর্মচারীরা ছুটিতে থাকায় কেউ নিষেধ করছে না কাউকে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে উঠেছে আরেক বিনোদন কেন্দ্র। সকাল থেকে দর্শনার্থীরা এসে ভিড় জমাচ্ছেন এ এলাকায়। শহীদ মিনারের ঠিক পেছনে এবং পাশের নিচু স্থানে প্রেমিক যুগলদের অবস্থান চোখে পড়ার মত। শাহজাহানপুর থেকে টিএসসিতে ঘুরতে আসা মোঃ আশিকুর রহমান সাকিল বলেন, ঈদের ছুটিতে আর কোথায় ঘুরতে যাব। সুস্থ কোনো পরিবেশ কোথাও নেই। তাই এখানে এসেছি সবাই মিলে আড্ডা দিতে।
মিরপুর থেকে কার্জন হলে প্রেম করতে আসা পুষ্প জাহান বলেন, ঈদের ছুটিতে কোথাও একটু নিরিবিলি ও ভালো স্থান পাচ্ছি না। তাই এখানে আসা। এখানে কেউ কাউকে বিরক্ত করছেন না, কোনো ভয় নেই, কোনো চিৎকার চেঁচামেচি নেই। তাই ওকে (প্রেমিককে) নিয়ে এখানে এসেছি। তার মতে এ স্থানটি প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য নিরাপদ।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকেই এই কাজটি হয়ে আসছে। আর ঢাকা শহরের অন্যান্য স্থানের তুলনায় এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেক বেশি নিরাপদ এবং বসে কথা বলার মত উপযুক্ত স্থান। তাই অনেকে এখানে আসে একটু সময় কাটানোর জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাই বেশি আসে। তবে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এসময়ে ঘটেনি। আমরা চাই যেন কম মানুষ আসে।
প্রেমিক যুগল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি খুব অনাকাঙ্খিত। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা মোবাইল টিম বাড়িয়ে দিয়েছি। আর সন্ধ্যার পর তাদের অবস্থানকে আমি নিরুৎসাহিত করি। এরপরও কোনো যুগল এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তাদের অন্য স্থানে যেতে বাধ্য করা হবে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী-শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।
COMMENTS