নিজ এলাকায় ঈদ করতে পৌঁছে গেছেন অনেকেই। গণসংযোগ ও বৈঠক করছেন নেতাকর্মীদের সাথে। তাই এবারের ঈদটা নির্বাচনী এলাকার লোকজনদের সঙ্গে কাটানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ আবার নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে রাজধানীতে ফিরে আসবেন ঈদের দিন নামাজ শেষে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে চেয়ারপারসনের ঈদ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
ফোনে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ২৫ শে অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেই সমাবেশ থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কর্মসূচিতে লাগাতার হরতাল, অবরোধসহ অসহযোগের মতো কর্মসূচি থাকতে পারে। নির্দলীয় তত্ত্বাধায়ক সরকারের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্র থেকে সে অনুযায়ী সারাদেশের নেতাকর্মীদের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। সেজন্য ঈদের সময়টাতে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় কাটাবেন তারা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় গুলশান সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বরাবরের মতো এবারো ঈদ করবেন ঢাকায়।
ঈদের দিন সকালে বেগম জিয়া গুলশানের ভাড়া বাসায় আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এরপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (চীন মৈত্রী) সকাল ১১টা থেকে বিশিষ্ট নাগরিক, কূটনীতিক ও সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। দলের সিনিয়র নেতারাও এ সময় উপস্থিত থাকবেন।
এরপর খালেদা জিয়া দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে যাবেন। সেখানে দোয়া ও ফাতেহা পাঠ শেষে তিনি গুলশানের বাসায় ফিরবেন বলে জানা গেছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবার ঈদ করবেন নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে। ঈদকে কেন্দ্র করে সেখানে তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার জনসাধারণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে ঈদের পরে শিগগিরই ঢাকায় ফিরবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গণি বরাবরের মতো এবারো ঢাকায় ঈদ করবেন। ঈদের নামাজ শেষে তিনিও চলে যাবেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।
এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এমকে আনোয়ার ঢাকায় ঈদ করলেও ঈদের পরের দিন নিজ নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লায় যাবেন বলে জানা গেছে। আর স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য তরিকুল ইসলাম যশোরে ঈদ করবেন। তিনি এখন সেখানেই অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে আগের ঈদগুলোতে ঢাকায় থাকলেও এবার অসুস্থতার কারণে লন্ডনে চিকিৎসাধীন থাকায় ঈদের সময় দেশের বাইরেই থাকতে হচ্ছে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে।
ঢাকায় ঈদ করা শীর্ষ নেতাদের তালিকায় রয়েছেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও বেগম সারোয়ারী রহমান।
এরা সবাই ঈদের দিন চেয়ারপারসনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। তবে ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে নিজ এলাকা পঞ্চগড়ে জমির উদ্দিন সরকার ও মাহবুবুর রহমান দিনাজপুরে যেতে পারেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনও ঈদ করবেন ঢাকায়।
অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে জেলখানায় ঈদ করতে হবে। ঈদের দিন স্ত্রী ও সন্তানরা তার সঙ্গে জেলখানায় গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বলে জানা গেছে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান নরসিংদীতে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন ।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা রাজধানীতে ঈদ করলেও আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালীতে, বেগম সেলিমা রহমান ঈদের দিন ঢাকায় থাকলেও ওই দিন বিকেলে বরিশালের বাবুগঞ্জে যাবেন বলে জানিয়েছেন। শাহ মোয়াজ্জেম ঢাকায় আর আবদুল্লাহ আল নোমান নিজ এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করার কথা জানিয়েছেন। আর শমসের মোবিন চৌধুরী সিলেটে ঈদ করবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে, শামসুজ্জামান দুদু চুয়াডাঙ্গায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জে, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গফরগাঁওয়ে নিজ এলাকায় ঈদ করার কথা জানান।
দলের যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ও রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ঢাকায়, বরকত উল্লাহ বুলু ও মো. শাহজাহান নিজ এলাকা নোয়াখালীতে, মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহীতে এবং সালাহ উদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রামে ঈদ করবেন বলে জানিয়েছেন।
বিরোধীদলীয় হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক নোয়াখালী ও ছাত্র বিষয়ক সম্পদাক শহিদ উদ্দীন চৌধূরী এ্যানী ঈদ করার জন্য ইতিমধ্যে লক্ষ্মীপুরে চলে গেছেন। তবে ঈদের পর ঢাকায় ফিরে স্বাস্থ্যের পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে সিঙ্গাপুর যাবেন বলে জানান ফারুক।
এছাড়া বিএনপি নেতাদের মতো অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও ঢাকা ও গ্রামের বাড়িতে ঈদ করার কথা বলছেন। যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলাল, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব ঢাকায় ঈদ করার কথা জানিয়েছেন।
COMMENTS