উদয় হাসানঃ চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে এবার এক টেবিলে বসতে যাচ্ছেন দেশের দুই শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া। অবশ্য দুই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দুই নেত্রীর বৈঠকের ব্যাপারে কেউ মুখ না খুললেও তাদেরকে আলোচনায় বসাতে যে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। কূটনৈতিক মহলটির নেতৃত্বে আছেন প্রভাবশালী ৪ দেশের রাষ্ট্রদূত ও শীর্ষ একটি দাতা সংস্থার প্রধান। একাধিক সুত্র প্রক্রিয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কূটনৈতিক পাড়ায় হৃদ্যতা আছে এমন একজন ব্যবসায়ী রোববার বলেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে উদ্বিগ্ন বন্ধুদেশ ও দাতারা। বিপরীতমুখী দুই রাজনৈতিক জোটের কঠোর অবস্থানে দেশ যে নিশ্চিত সংঘাতের দিকে যাচ্ছে এমনটিই এখন ধরে নিয়েছে মহলটি।
সূত্রের মতে, শঙ্কাময় ২৫ অক্টোবর সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের রূপরেখায় এবং বিরোধী দলের সহযোগিতা চাওয়ায় কূটনৈতিক মহলে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার আগেই অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় সুষ্ঠু সমাধান নিয়ে শংকার মধ্যে পড়ে কূটনীতিকরা। তারা মনে করছেন এর ফলে আলোচনার অনুকূল পরিবেশ কেবল ব্যাহতই হবে না, বিরোধী দল নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের প্রতিক্রিয়ায় আরও কঠোর অবস্থান নিতে পারে। ফলে বোঝাপড়ার পরিবর্তে একধরনের জোরজবরদস্তির পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
দেশের এই সংকটে শুধু যে জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা নয়, ক্ষতির মূখে পড়বে বাংলাদেশের সাথে সম্পৃক্ত দেশগুলোও। স্বাভাবিক কারণেই নড়েচড়ে বসেছেন এসব দেশের কূটনীতিকরা।
তারা মনে করছেন, আলোচনার জন্য যিনি আহ্বান জানান, তাঁরই দায়িত্ব সেই আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য বিরোধী দলের নেতার কাছে নাম চেয়েছেন। ফলে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রত্যাশা জেগেছে যে এবার দুই পক্ষের মধ্যে একটা যোগাযোগ শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু এর পরই রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করায় সে প্রত্যাশা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
সূত্র দাবি করেছে, কূটনেতিক সূত্রগুলো প্রধান দুই নেত্রীকে বৈঠকে বসানোর ব্যাপারে ব্যাপক তৎপর। তাদের এই তৎপরতার একটি সফলতাও এসেছে রোববার। রাজধানীতে মিছিল মিটিং বন্ধ ঘোষণা করা হলেও বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপিপন্থী পেশাজীবীদের সম্মেলনের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
কূটনীতিকরা সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, তাদের এই পদক্ষেপের পেছনে বরাবরের মতো জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দোহাই দিলেও সেটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। জননিরাপত্তার নামে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব যখন বিভিন্ন মহল ইতিবাচক দৃষ্টিতে নিয়েছে, তখন সভা-সমাবেশের ওপর ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা ভুল বার্তাই দেবে। তাই অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত।
সূত্রমতে কূটনৈতিকদের এই পরামর্শ পজেটিভভাবে নিয়েছে সরকার। এর আলোকেই উদ্যেক্তাদের বিরোধী দলীয় নেতার সাথে কথা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে ২৫ তারিখের আগেই দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসাতে চান উদ্যোক্তারা। এ লক্ষেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
COMMENTS