জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সারা দেশে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় কনভেনশন কমিটি। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্প্রদায়িক হামলা, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরোধী আন্দোলন ‘বাংলাদেশ রুখে দাড়াও’ এর জাতীয় কনভেনশন থেকে এই আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকার নেতা সুলতানা কামাল। টিআইবির চেয়ারপারসন ও মানবাধিকার নেতা সুলতানা কামাল বলেছেন, যারা ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে আপোস করবে জনগণ তাদের রুখে দেবে। তিনি বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় যারাই যাক না কেন তারা যদি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাইরে যায় তাহলে এদেশে তাদের জায়গা থাকবে না।
কনভেনশনের সমাপনী বক্তব্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে উদ্যানে ওই কনভেনশনে সারা দেশ থেকে আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন।
পাঁচ দফার বাকি দাবিগুলো হলো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিহত ও আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখা, বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করা এবং নারীর অধিকার সমুন্নত রাখা। এই পাঁচ দফা দাবি ও রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ ঘোষনা পাঠ করেন সাংবাদিক আবেদ খান।
কনভেনশনে মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) এ কে খন্দকার বলেন, ধর্ম কখনো শোষণের হাতিয়ার হতে পারে না। শোষণমুক্ত জাতি গঠনে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এখনো ধর্মকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আগের চেয়ে আরও সংগঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে আমাদেরও সংগঠিত হতে হবে।
কনভেনশনে সাবেক বিচারপতি গোলাম রব্বানী বলেন, এদেশের মালিক জনগণ। কিন্তু কারা এই জনগণ তা আগে নির্ধারন করতে হবে। যারা এই রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতা করেছে। এখনো যারা রাষ্ট্রের মূল চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান বজায় রেখেছে তারা দেশের জনগণ কিনা তা আমাদের ভাবতে হবে।
৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা ও সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, আজকে আমরা কিছু মানুষ সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন করছি। কিন্তু এই আন্দোলনকে সফল করতে হলে দেশের বেশির ভাগ মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।
লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি হচ্ছে সব নষ্টের শিকড়। এদের নির্মূল করতে হলে বাইরে থেকে কোনো সমর্থন আসবে না। আমাদেরই করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী বলেন, ১৯৪৮ সালে এদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ ছিল হিন্দু-বৌদ্ধসহ অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ১৯৭২ সালে তা কমে ২৩ ও ২০১১ সালে তা আরও কমে ৮.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। তার মানে এই দেশের সংখ্যালঘুরা এখানে আর নিরাপদবোধ করছেন না। সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে কোনো নিরপেক্ষতার মুখোশ না পড়ে এর বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিতে সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, জামায়াত ইসলামীকে তার অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল না করে এদেশ থেকে উত্পাটন করা যাবে না। তারা অর্থনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
নারী নেত্রী আয়েশা খানম বলেন, জামাত-শিবির এদেশে যতদিন থাকবে ততদিন এই দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবেনা। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তাদের সঙ্গে আতাঁত না নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রাখা।
সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের আহবায়ক অজয় রায়, সামনের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তিকে জয়ী করতে হবে। দেশে সুশাসন, দুর্নীতিসহ অনেক সমস্যা আছে এসব কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগের মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দূর করতে হবে।
গণজাগরন মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদির নয়জন সন্তানের কেউই জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেননি। তাঁরা ওই রাজনীতির বিরোধিতা করছেন। তেমনি জামায়াতে ইসলামীর বেশির ভাগ নেতার সন্তানেরা বিদেশে থাকেন, সেখানে পড়াশোনা করেন। জনগণের উচিত হবে এই ভন্ড অপশক্তির মুখোশ উন্মোচন করে তাঁদের বর্জন করা।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের সঞ্চালনায় কনভেনশনের শেষ পর্বে ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ এর জাতীয় পরিষদের সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও আহবায়ক সুলতানা কামালের নাম ঘোষণা করা হয়। এছাড়া নির্বাহী পরিষদের সদস্য সারোয়ার আলী, আকবর আলি খান, আবেদ খান, রানা দাস গুপ্ত, রামেন্দু মজুমদার, তারিক আলী ও সৈয়দ শামসুল হকের নাম ঘোষণা করা হয়। কমিটি আগামীতে দেশের প্রতিটি জেলায় সন্মেলনের আয়োজন করবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
COMMENTS