রেজাউল কবির রাজীবঃ
ইতিহাস আর ঐতিহ্যের বর্ণিল দ্যুতিতে ভাস্বর ভাওয়ালের জয়দেবপুর গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন গোবিন্দ চন্দ্র দাস (১৮৫৫ সালের ১৬ জানুয়ারি, বাংলা ১২৬১, ৪ মাঘ)। তাই ছোট বেলা থেকেই ভাওয়াল রাজ পরিবারের সাথে ছিল যোগসূত্র। তাই ভাওয়ালের তৎকালীন রাজা কালী নারায়ন রায় তাকে চলার জন্য মাসিক ৪ টাকা বৃত্তি এবং থাকার জন্য কিছু নিস্কর জমি দান করেন। মেধাবী ছাত্র গোবিন্দ চন্দ্র দাস ভাওয়াল বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করেন। তিনি ভাওয়াল রাজকুমার রাজেন্দ্র নারায়ণের প্রাইভেট সেক্রেটারিও ছিলেন। তাই তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ভাওয়াল রাজদিঘীর পশ্চিম পাড়ের রাস্তার নামকরণ করা হয় এই কবির প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে।
ইতিহাস আর ঐতিহ্যের বর্ণিল দ্যুতিতে ভাস্বর ভাওয়ালের জয়দেবপুর গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন গোবিন্দ চন্দ্র দাস (১৮৫৫ সালের ১৬ জানুয়ারি, বাংলা ১২৬১, ৪ মাঘ)। তাই ছোট বেলা থেকেই ভাওয়াল রাজ পরিবারের সাথে ছিল যোগসূত্র। তাই ভাওয়ালের তৎকালীন রাজা কালী নারায়ন রায় তাকে চলার জন্য মাসিক ৪ টাকা বৃত্তি এবং থাকার জন্য কিছু নিস্কর জমি দান করেন। মেধাবী ছাত্র গোবিন্দ চন্দ্র দাস ভাওয়াল বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করেন। তিনি ভাওয়াল রাজকুমার রাজেন্দ্র নারায়ণের প্রাইভেট সেক্রেটারিও ছিলেন। তাই তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ভাওয়াল রাজদিঘীর পশ্চিম পাড়ের রাস্তার নামকরণ করা হয় এই কবির প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে।
সরকারীভাবে এ রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছে বহু বার কিন্তু তাঁর এ নাম ফলকটি এখান থেকে কখনো সরানোর পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যায়নি বরং তার নাম ফলকটি সুন্দর ভাবে সংস্কার করা হয়েছে।
গত ২৮/০৯/২০১৩ ইং তারিখে হঠাৎকরেই দেখা গেল রাতের আঁধারে কে বা কাহারা তাঁর নাম ফলকটি ভেঙ্গে ফেলেছে। দুঃখের বিষয় নিয়ে কোন সাংবাদিক বা কোন কবি সাহিত্যিক পরিষদ বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান এর কোন প্রতিবাদ করেনি। পাশের দোকানদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে কেউ দেখেনি কে বা কারা এ কাজ করেছে রাত্রে যাওয়ার সময় ভাল ফলকটি দেখে গেলেও সকালে এসে দেখে তা ভাঙ্গা। গাজীপুর তথ্য অফিসও কোন তথ্য দিতে পরেনি।
স্বভাব কবি গোবিন্দ চন্দ্রদাস গাজীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে থাকলেও এখন আর তাকে নিয়ে কেউ ভাবে না। মাঝে মাঝে গাজীপুরের কৃতি সন্তানদের নামের তালিকায় তার নাম দেখা যায়। এভাবে কৃতি সন্তানদের অবমূল্যায়নে দেখা যাবে গাজীপুরের বর্ণিল ইতিহাস একদিন বিলীন হয়ে যাবে।
তাঁর কর্ম জীবনে তিনি বিক্রমপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম বঙ্গ বিদ্যালয়ে ‘হেড পণ্ডিত’ পদে নিযুক্ত হন। একই বছর তৎকালীন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও ‘বান্ধব’ পত্রিকার সম্পাদক কালি প্রসন্ন ঘোষ ভাওয়াল জমিদারির ম্যানেজার পদে নিযুক্ত হন। পরে ১৮৮০ সালে তিনি সুসঙ্গ দুর্গাপুরের মহারাজ কমল কৃষ্ণের জমিদারিতে খাজাঞ্জী পদে এবং এর পরবর্তী দু’বছর মুক্তাগাছার জমিদারিতে সেরেস্তার পদে চাকুরী করেন। জন নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুতে তিনি এ সময়ে বেশ বিপর্যস্থ হয়ে পড়েন।
কবি দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন ব্রাহ্মনগাঁয়ের মহেন্দ্র চন্দ্র ঘোষের কনিষ্ঠা কন্যা প্রেমদা সুন্দরীকে ১৮৯৩ সালে। সে সময় তিনি শেরপুরের জমিদারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় ‘নব্যভারত’ পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করেন। এ সময় তিনি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘মগের মুলুক’ (১৮৯৩) রচনা করেন। পরে কিছুদিন তিনি আবার মুক্তাগাছায় জমিদারের নায়েবের পদে চাকুরী করেন। কিন্তু তাঁর ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হল না। বরং সংসারের প্রতি উদাসীন এবং খামখেয়ালী স্বভাবের কবি এ সময়ে ভাগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। তিনি দীর্ঘদিন মাতৃভূমি থেকে নির্বাসিত থাকার পর আবার জয়দেবপুর আসেন বটে কিন্তু এখানে না থেকে তিনি বাকী জীবন ব্রাহ্মণগাঁয়ে কাটানোর মনস্থ করেন। এ সময় তাঁর মেয়েসহ আরো কিছু আত্মীয় স্বজনের মৃত্যুজনিত বিয়োগব্যথায় তিনি কাতর হয়ে পড়েন। অভাব অনটন ও মানসিক পীড়নে তিনি এ সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরেন।
ব্রাহ্মণগাঁয়ে তাঁর বসতভিটা পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেলে তিনি শেষ বয়সে আবার জয়দেবপুর ফিরে আসেন। কিন্তু দীর্ঘদিন খাজনা দিতে না পারায় তাঁর বসত ভিটা নিলামে উঠে। তিনি এ সময় ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে টাকা যোগাড়ের আশায় ছোটাছুটি করতে থাকেন। ঢাকার নারিন্দায় নিজ গ্রামের অতীশ চন্দ্র সরকারের বাড়ীতে তিনি অত্যন্ত অভাব অনটনে জর্জরিত ও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অবস্থান করছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য এ সময় কোন শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তি তাঁর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেননি। ঢাকার নারিন্দার এক স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে অনাদরে অবহেলায়-অনাহারে-বিনা চিকিৎসায় তীব্র দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে ১৩২৫ বঙ্গাদ্ধের ১৩ই আশ্বিন (১৯১৮ খ্রিঃ ৩০ সেপ্টেম্বর) অভিমান ক্ষুদ্ধ আজীবনের আপোসহীন সংগ্রামী কবি গোবিন্দ চন্দ দাস মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন।
ব্রাহ্মণগাঁয়ে তাঁর বসতভিটা পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেলে তিনি শেষ বয়সে আবার জয়দেবপুর ফিরে আসেন। কিন্তু দীর্ঘদিন খাজনা দিতে না পারায় তাঁর বসত ভিটা নিলামে উঠে। তিনি এ সময় ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে টাকা যোগাড়ের আশায় ছোটাছুটি করতে থাকেন। ঢাকার নারিন্দায় নিজ গ্রামের অতীশ চন্দ্র সরকারের বাড়ীতে তিনি অত্যন্ত অভাব অনটনে জর্জরিত ও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অবস্থান করছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য এ সময় কোন শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তি তাঁর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেননি। ঢাকার নারিন্দার এক স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে অনাদরে অবহেলায়-অনাহারে-বিনা চিকিৎসায় তীব্র দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে ১৩২৫ বঙ্গাদ্ধের ১৩ই আশ্বিন (১৯১৮ খ্রিঃ ৩০ সেপ্টেম্বর) অভিমান ক্ষুদ্ধ আজীবনের আপোসহীন সংগ্রামী কবি গোবিন্দ চন্দ দাস মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন।
কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাসের সাহিত্য জীবন খুব বেশি দীর্ঘ ছিল না তা সত্ত্বেও তাঁর ১০টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- প্রসূন (১৮৭০), প্রেম ও ফুল (১৮৮৮), কুমকুম (১৮৯২), মগের মুলুক (১৮৯৩), কস্তুরি (১৮৯৫), চন্দন (১৮৯৬), ফুলরেণু (১৮৯৬), বৈজয়ন্তী (১৯০৫), শোক ও সান্তনা (১৯০৯) ও শোকাচ্ছাস (১৯১০)। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে মগের মুলুক।
প্রতিবেদকঃ সাংগঠনিক সম্পাদক, টঙ্গী প্রেস ক্লাব
প্রতিবেদকঃ সাংগঠনিক সম্পাদক, টঙ্গী প্রেস ক্লাব
COMMENTS