কোরবানির গোশত নিজে খাওয়া ও অন্যদের দান করা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- অতঃপর তোমরা তা থেকে নিজে আহার কর এবং দুস্থ অভাবগ্রস্তদের আহার করাও (হজ : ২৮)। আয়াতে কোরবানির গোশত নিজে আহার করতে এবং অন্যদেরও আহার করাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনের এ আয়াত এবং বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, নিজের কোরবানির গোশত নিজে আহার করা মুস্তাহাব। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজে একশ’ কোরবানি করেছেন। ৬৩টি কোরবানি নিজ হাতেই জবাই করেছেন এবং কোরবানির পর প্রত্যেকটি প্রাণী থেকে এক টুকরা গোশত নিয়ে একটি ডেগে রান্না করিয়ে গোশত ও ঝোল আহার করেছেন। (মুসলিম শরিফ ১/৩৯৯)। এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, নিজের কোরবানির গোশত নিজে খাওয়া মুস্তাহাব বা সুন্নাত।
ওলামায়ে কেরাম বলেন, কোরবানির গোশত তিনভাগ করা মুস্তাহাব। এক তৃতীয়াংশ নিজে খাওয়ার জন্য, এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ গরিবদের সদকা করার জন্য। (আলমগীরি ৫/৩০০, বাহরুর রায়েক, ১৭৮, তাবরিন ৬/৪৮৬)। সূরা হাজর ৩৬নং আয়াত এর স্বপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।
ইবনে মাজা শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) দুটি ভেড়া কোরবানি করতেন এবং নিজের পরিবারের লোকেরা তা থেকে খেতেন দরিদ্রদেরও দান করতেন। সূরা হজের ৩৬নং আয়াতে কোরবানির গোশত যারা চাইতে আসে এবং যারা চাইতে আসে না কিন্তু বাস্তবে তারা অভাবী উভয় ধরনের দরিদ্রদের দান করতে বলা হয়েছে। সুতরাং কোরবানিদাতাদের উচিত যারা মানুষের বাড়ি বাড়ি কোরবানির গোশত চাইতে আসে এ ধরনের দরিদ্রদের পাশাপাশি যারা মানুষের কাছে হাত পাতে না এ ধরনের প্রকৃত দরিদ্রদেরও খুঁজে কোরবানির গোশত দান করা। কোরবানির গোশত তিনভাগ করা মুস্তাহাব। জরুরি নয়। ফকিহরা উল্লেখ করেছেন, কারও পরিবারের সদস্য অধিক হলে বা প্রয়োজন হলে কোরবানিদাতা নিজের পরিবারের জন্য এক-তৃতীয়াংশের অধিক গোশত রাখতেও কোনো আপত্তি নেই। আবার কেউ ইচ্ছা করলে নিজে খাওয়ার জন্য সামান্য রেখে বাকিটা দানও করে দিতে পারেন। কোরবানির গোশত ধনী-দরিদ্র সবাইকেই দেয়া যায়। তবে মান্নতের কোরবানির গোশত কোরবানিদাতা নিজে এবং কোনো ধনী ব্যক্তি খেতে পারবেন না। কেবল দরিদ্রদের সদকা করে দিতে হবে। (আলমগীরি ৫/৩৪০, শামী ৯/৩৯৬, কাজী খান ৩/২৪৯)।
মৃত ব্যক্তির ওসিয়ত অনুযায়ী তার পরিত্যক্ত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে তার জন্য কোরবানি করা হলে সম্পূর্ণ গোশত গরিবদের সদকা করে দিতে হবে। আর যদি কেউ স্বেচ্ছায় নিজের টাকা দিয়ে কোনো মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করেন তাহলে গোশতের মালিক তিনিই হবেন। নিজের কোরবানির মতোই এর গোশতও তিনি নিজে খেতে পারবেন। ধনী-দরিদ্র সবাইকে দিতেও পারবেন। (শামি ৫/২০৭, বাজ্জাজিয়্যাহ ৬/২৯৫)।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নামে অনেকে কোরবানি করেন। এর গোশত কোরবানিদাতা নিজেও খেতে পারবেন।
ধনী-দরিদ্র যে কোনো কাউকে দিতেও পারবেন। কোরবানির গোশত বিক্রি করা যাবে না। বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে।
COMMENTS