সাবাশ বাংলাদেশ! ক্রিকেট জগতের অন্যতম পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে বঙ্গ শার্দুলরা দেখিয়ে দিলো আমরাও পারি। এর আগে কোন দলের বিপক্ষে এমন মাঠ কাঁপানো জয় পায়নি বাংলাদেশ। টানা দুইবার ব্ল্যাক ক্যাপসদের বাংলাওয়াশ করে তবেই ছেড়েছে টাইগাররা।
টাইগারদের মরণ কামরে ক্ষত বিক্ষত নিউজিল্যান্ড। ৩০৭ রানের বিশাল স্কোর গড়েও শেষ ম্যাচ জিততে পারলো না তারা। নিউজিল্যান্ডকে নাস্তনাবুদ করে টানা তিন ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পাইয়ে দিলো বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা।
এ নিয়ে টানা ৮ ম্যাচ স্বাগতিকদের কাছে পরাজিত হলো নিউজিল্যান্ড। রবিবার ফতুল্লা স্টেডিয়ামে হাই স্কোরিং ম্যাচে ৪ উইকেট জয় লাভ করে লাল-সবুজরা।
গত ম্যাচে অভিষিক্ত শামসুর রহমান শুভর ৯৬ এবং সাকিবের পরিবর্তে দলে সুযোগ পাওয়া নাঈম ইসলামের ৬৩ রানের স্কোরে জয়ের দারপ্রান্তে পৌঁছে বাংলাদেশ। শেষ দিকে নাসির হোসেনের দৃঢ়তায় ম্যাচ জিতেই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। নাসির হোসেন ৪৮ বল খেলে ৪৪ রান করে বিজয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন।
দুই ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিলো ১২ রান। এক প্রান্তে নাসির অপরপ্রান্তে সোহাগ গাজী। সোহাগ গাজী এক রান নিয়ে নাসিরকে দেন। ১০ বলে ১০ রানের প্রয়োজন । ৪৯ তম ওভারে কোরি অ্যান্ডারসনের দুই অতিরিক্ত রানে কিছুটা স্বস্তি ফিরে বাংলাদেশী সমর্থকদের মাঝে।
অ্যান্ডারসনের করা পঞ্চম বলে সোহাগ মিড উইকেট দিয়ে চার মারলে দলের প্রয়োজন দাড়ায় ৭ বলে ৪ রান। শেষ বলে সিঙ্গেল নেন সোহাগ। শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৬ বলে ৩ রান। ক্রিজে সোহাগ, প্রথম বলে মিস করলেও দ্বিতীয় বলে মাথার উপর দিয়ে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন সোহাগ গাজী। গাজী ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশ ৪ উইকেটের বিশাল জয় পায় ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিপক্ষে। এর ফলে দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাওয়াশ হলো কিউইরা। বাংলাদেশের ইনিংসের ভিত গড়ে দিয়েছিলো মূলত ওপেনিং জুটির ৬১ রানের দ্রুত পার্টনাশিপ। জিয়াউর রহমান ও শামসুর রহমানের শুরুটা ভালো হওয়ায় শেষটাও সুন্দরভাবে করতে পেরেছে টাইগাররা।
নিউজিল্যান্ড ৩০৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ তা চার বল ও ৪ উইকেট হাতে থাকতেই লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়।
ভালো খেলতে থাকা নাঈম ইসলাম ব্যাক্তিগত ৬৩ রান করে রান আউটের শিকার হন। এর আগে শামসুর রহমানের ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের কাছ থেকে ফিরে আসেন মাত্র ৪ রানের জন্য। আউট হওয়ার আগে ১০৭ বলে ৭ চারে ও ৪ ছয়ে ৯৪ রানের স্কোর গড়েন এ ওপেনার।
শেষ দিকে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে হারালে কিছুটা সংকটে পড়ে স্বাগতিকরা। গাজী-নাসিরের দৃঢ়তায় শেষ রক্ষা হয় বাংলাদেশের।
এর আগে তামিমের পরিবর্তে ওপেন করা জিয়াউর রহমান ২২ রানে আউট হয়ে গেছেন। আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত ২ চার ও ২ ছয়ে এ রান করে মিচেল ম্যাকক্লেনাগান বলে অ্যাডাম মিল্নকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।
জিয়া আউট হওয়ার পর মমিনুর ক্রিজে নামেন। মমিনুল-শামসুর মিলে ৬৫ রানের জুটি গড়েন। মমিনুল ৩৩ বলে ৩২ রান করে অ্যান্তনি ডেভচিচের বলে আউট হন। তখন বাংলাদেশের স্কোর ১২৬। ক্রিজে নামেম মুশিফক। কিন্তু নেমেই নিজেকে হারিয়ে ফেললেন তিনি। মাত্র ২ রান করেই আউট হলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
মুশফিক আউটের পর নাঈম-শামসুর মিলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন। তাদের জুটিতে কিছুটা ভিত পায় লাল-সবুজরা।
কিউই বোলারদের মধ্যে মিচেল ম্যাকক্লেনাগান সর্বোচ্চ দুটি এবং নাথান ম্যাককুলাম, অ্যান্তনি ডেভচিচ ও কোরি অ্যান্ডারসন একটি করে উইকেট পায়।
টেলর-মানারো করা ১৩০ রানের জুটির উপর ভর করে ৫ উইকেটে ৩০৭ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করায় অতিথিরা।
সকালে টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়া বাংলাদেশ খুব ভালো শুরু করতে পারেনি। নিউজিল্যান্ড দল প্রথম উইকেটে ৬৬ রানের জুটি গড়ে। প্রথম উইকেটটি নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
৬৬ রানের পর প্রথম উইকেট পতন হলেও তার পর পরই দ্রুত আরো দুই উইকেট হারায় কিউইরা। তাদের স্কোর দাড়ায় ১০১ তিন উইকেটে। এরপর রস টেলর ও কলিন মানরো জুটিতে একটু একটু করে এগিয়ে যায় অতিথিরা।
রিয়াদ যদি টেলর-মানরো জুটি না ভাঙ্গতো তবে সেটা বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর হতো। ৭৭ বল খেলা কলিন মানরো ৮৫ রানের স্কোর গড়েন। এ স্কোর গড়তে তিনি মারেন ৭টি চার ও দুটি ছয়। এর পরই আঘাত হানেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তার করা বলে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তৃতীয় ওয়ানডেতে দলে সুযোগ পাওয়া কলিন মানরো।
শুধু মানরো স্কোর নয়। রস টেলরের অনবদ্য শতকও রয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিশাল স্কোরের পিছনে। তিনি তার ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক পেলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। ৯১ বল খেলে তিনি ৮ চার ও ৩ ছয়ে শতকে পৌঁছেন। তার শতক ও কলিন মানরো ৮৫ রানের সুবাদে শেষ একদিনের ম্যাচে ৩০৭ রানের স্কোর করতে সমর্থ হয় নিউজিল্যান্ড।
এর আগে দলীয় ৬৬ রানে অ্যান্তনি ডেভচিচকে ফিরিয়ে শুভ সূচনা করেন সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। তিনি ডেভচিচের ব্যক্তিগত ৪৬ রানে সাজঘরে ফেরান। আব্দুর রাজ্জাককে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন কিউই এ ওপেনার।
এর কিছুক্ষণ পর আবার আঘাত আনেন স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। সোহাগ গাজীর হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত গ্র্যান্ট ইলিয়েন্ট ৩ রানের বেশি করতে পারেনি।
গ্র্যান্ট ইলিয়েন্ট বিদায় নিলে রস টেলর ও টম লাথানের সাথে ১৯ রানের জুটি হয়। সেই জুটি ভাঙ্গেন প্রথম ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করা পেসার রুবেল হোসেন। রুবেল ৭৩ বলে ৪৩ রান করা টম লাথানকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন মাহমুদুল্লা রিয়াদ এবং আব্দুর রাজ্জাক, রুবেল হোসেন ও সোহাগ গাজী প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নেন।
COMMENTS