বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক শীর্ষ ১৫টি দেশের হিস্যা এখন ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে গত বছরটি বেশির ভাগ রপ্তানিকারকের জন্য সুবিধাজনক হয়নি। বিশেষ করে আগের দুই বছর যেখানে এই বেশির ভাগ দেশই তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, সেখানে ২০১২ সালে এসে আটটি দেশেরই প্রবৃদ্ধি হয়েছে নেতিবাচক।
আবার যারা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় আছে, তাদের কেউই দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি। কম্বোডিয়া ৮ শতাংশ এবং ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। বাংলাদেশ ও চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ হারে। আর তুরস্কের ২ শতাংশ।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস-২০১৩’ দলিল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে ২০১২ সালে বিশ্ব বাণিজ্যের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাজারের পরিসংখ্যানও আছে।
এতে দেখা যায়, তৈরি পোশাক রপ্তানির বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অংশ আগের বছরের তুলনায় সামান্য কমেছে। ২০১২ সালে বিশ্বে মোট পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অংশ ছিল ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর ২০১৩ সালে তা সামান্য কমে হয়েছে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।
অবশ্য রপ্তানিকারক হিসেবে তালিকায় তৃতীয় স্থানটি অটুট রয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি দেখানো হয়েছে এক হাজার ৯৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগেরবারও প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি ছিল।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বিশ্ব রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের হিস্যা ছিল ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ২৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ। এর ফলে ২০০৯ সালের পঞ্চম অবস্থান থেকে ২০১০ সালে বাংলাদেশ উঠে আসে তৃতীয় স্থানে। আর ২০১১ সালে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্ববাজারে অংশীদারি বেড়ে হয়েছিল ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে ২৭ দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) দেখানো হয়েছে ডব্লিউটিওর পরিসংখ্যানে। ইইউর হিস্যা অবশ্য বেশ কমে গেছে। ২০১১ সালের ২৮ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে ২০১২ সালে নেমে এসেছে ২৫ দশমিক ৮০ শতাংশে।
ডব্লিউটিওর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে বিশ্ববাজারে শীর্ষ রপ্তানিকারকদের অবস্থানের কিছু বড় পরিবর্তন চোখে পড়ে। আগেরবার পঞ্চম স্থানে থাকা তুরস্ক ভারতকে হটিয়ে উঠে এসেছে চতুর্থ স্থানে। দেশটির রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪২৮ কোটি ডলার।
আবার আগেরবারের ষষ্ঠ স্থানে থাকা ভিয়েতনাম ভারতকে পেছনে ফেলে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। ২০১২ সালে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার। আর ভারতের রপ্তানি এক হাজার ৩৮০ কোটি ডলার।
বলা যায়, গত বছর পোশাক রপ্তানির শীর্ষ তালিকায় ভারত দুই ধাপ পিছিয়ে গেছে। আগেরবারের ৩১ শতাংশ হারে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি থেকে ২০১২ সালে তা নেতিবাচক পর্যায়ে নেমে এসেছে। রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ। বিশ্ববাজারে হিস্যাও আগেরবারের ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
ডব্লিউটিওর এই পরিসংখ্যান দেখায় যে তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের হিস্যা ও রপ্তানি দুই-ই অনেক বেশি। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার বড় ধরনের দরপতনের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের পোশাকের বাজার ভারত দখল করে নেবে বলে যে কথা বলা হচ্ছিল, তা অনেকটাই বাস্তবসম্মত নয়।
এমনকি ভারতের অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল (এপিইসি) এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে এক পূর্বাভাসে বলেছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানি এক হাজার ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। আর তা সম্ভব হবে ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনীতি চাঙা হয়ে ওঠার কারণে।
তবে বিশ্ববাজার চাঙা হলে বাংলাদেশও সেই বাজারে এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। এতে বাংলাদেশের বাজার হিস্যা বরং আরেকটু বাড়তে পারে। তা ছাড়া রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে সহস্রাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির পর বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ও সরকারের ওপর চাপ বেড়েছে।
বিশেষত কারখানার কর্মপরিবেশ নিরাপদ করা, শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি ঘটানো ও নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধির জন্য চাপ তৈরি হয়েছে। এ সময় চাপের মুখেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি বজায় আছে। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ডব্লিউটিওর হিসাবে, গতবারের দশম স্থানে থাকা মালয়েশিয়া এবার মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে উঠে এসেছে নবম স্থানে। অন্যদিকে চতুর্দশ স্থানে থাকা কম্বোডিয়া উঠে এসেছে দশম স্থানে, হটিয়ে দিয়েছে থাইল্যান্ডকে।
ডব্লিউটিওর এই পরিসংখ্যানে অবশ্য হংকংয়ের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখ করা হলেও তা চীনে অভ্যন্তরীণ ও পুনঃরপ্তানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই শীর্ষ ১৫ দেশের তালিকায় রপ্তানির পরিমাণগত দিক থেকে হংকংয়ের অবস্থান তৃতীয় দেখা গেলেও বৈশ্বিক বাজারে হিস্যা খুবই নগণ্য।
COMMENTS