আগামী ২১-২৪ নভেম্বর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ‘রয়েল মেলবোর্ন গলফ ক্লাব’-এ অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ গলফ অনুষ্ঠিত হবে। এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে বাংলাদেশের গলফার সিদ্দিকুর রহমান আজ শনিবার অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়ছেন। এ উপলক্ষে স্থানীয় এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রদান করেন কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবিদুর রেজা খান, পৃষ্ঠপোষক গ্রামীণফোনের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন তাহমিদ আজিজুল হক এবং গলফার সিদ্দিকুর রহমান।
বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত প্রোফেশনাল গলফার জনাব সিদ্দিকুর রহমান বিশ্বকাপে খেলার জন্য মনোনীত হয়েছেন। বিশ্বকাপ গলফ প্রতি দুই বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়। এই টুর্নামেন্টে মনোনীত হবার জন্য একজন গলফারকে অবশ্যই বিশ্ব র্যাংকিংয়ে আসতে হয়। বর্তমানে সিদ্দিকুর রহমানের র্যাংকিং ২৫১। এই টুর্নামেন্টে সিদ্দিকুর রহমানের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গলফ বিশ্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে এক নতুনমাত্রা যোগ করবে।
সিদ্দিকুর রহমান ২০ নভেম্বর ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৬ বছর বয়স থেকে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে গলফের সঙ্গে জড়িত হন এবং কয়েক বছরের মধ্যে একজন দক্ষ গলফার হিসেবে জাতীয় পর্র্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের পক্ষ হতে যে সব ক্রীড়া প্রতিযোগী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছে তার মধ্যে মো. ছিদ্দিকুর রহমান অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বহির্বিশ্বে বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, কাতার এবং মালয়েশিয়ায় একজন উদীয়মান তরুণ দক্ষ গলফার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০০৪-২০০৫ গলফিং মৌসুমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২০তম বাংলাদেশ অ্যামেচার গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ, ২য় নেপাল অ্যামেচার গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ১০৪তম অল ইন্ডিয়ান অ্যামেচার গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ’এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
এছাড়া স্বাগতিক বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ‘বাংলাদেশ অ্যামেচার গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ’এ অংশগ্রহণ করে তিনি পর পর তিনবার (হ্যাটট্রিক)সহ মোট চারবার শিরোপা অর্জন করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেন। সার্ক দেশসমূহের মধ্যে সিদ্দিকই একমাত্র গলফার যিনি সার্কভুক্ত প্রতিটি দেশের অপেশাদার ওপেন টুর্নামেন্টে শিরোপা লাভ করেন, যা এখন পর্যন্ত একটি অনন্য রেকর্ড। তিনি ২০০৭ সালের জুনে নিজেকে পেশাদার গলফার হিসেবে ঘোষণা করেন এবং ভারতে অবস্থিত পিজিটিআই কোয়ালিফাইং স্কুল ইভেন্টে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। প্রথম বাংলাদেশি গলফার মো. সিদ্দিকুর রহমান ২০০৮ সালে ভারতের পুনায় অনুষ্ঠিত ৩০ লাখ রুপির প্রফেশনাল গলফ টুর অব ইন্ডিয়ায় প্রফেশনাল প্লেয়ার্র্স চ্যাম্পিয়নশিপের টাইটেল জিতে প্রথম বিজয়ের স্বাদ পান। এর পর ইন্ডিয়ান সার্কিটে আরো দুটি বিজয়সহ অন্যান্য টুর্নামেন্টে সাফল্যজনকভাবে অংশগ্রহণ করে তিনি দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন।
২০০৯ সালে এশিয়ান সার্কিটে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পর তিনি ২০১০ সালের আগস্টে ‘ব্রুনাই ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ’ শিরোপা জয়ের মাধ্যমে ক্রীড়া বিশ্বে বাংলাদেশের জন্য এক বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এশিয়ান ট্যুর কর্তৃক আয়োজিত ব্রুনাই ওপেন জয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ইউরোপিয়ান ও জাপান পেশাদার সার্কিটে সরাসরি খেলার সুযোগ পান। তিনি ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ০৩ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তাইওয়ান ওপেন টুর্নামেন্টে যৌথভাবে শীর্ষ অবস্থানে থাকার পর প্লে-অফ এ রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এছাড়াও ইউএস পিজিএ এবং এশিয়ান ট্যুরের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ২০১০ সালের ২৮-৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক ক্লাসিক টুর্নামেন্টে ১১তম স্থান অর্জন করে গলফ বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকার উজ্জ্বল উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।
সিদ্দিক বলেন, শেষ ৫টি টুর্নামেন্টে আমার ফল ভালো ছিল। আমার লক্ষ্য সম্মানজনক স্থান দখল করা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের প্রথম গলফার হিসেবে আমি বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছি। এটা তো অন্য রকম অনুভূতি।
COMMENTS