প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে যুব সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দেশের যুব সমাজকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন।
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধন করে বলেন, কারিগরি শিক্ষা সবচেয়ে বড় জিনিস। আমরা কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করছি। আমি চাই, আমাদের যুব সমাজ পরমুখাপেক্ষী হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধন করে বলেন, কারিগরি শিক্ষা সবচেয়ে বড় জিনিস। আমরা কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করছি। আমি চাই, আমাদের যুব সমাজ পরমুখাপেক্ষী হবে না।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. আহাদ আলী সরকারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে ফেনীর মহিউদ্দিন আহমেদ ও নারায়ণগঞ্জের সাবিরা সুলতানা, জাতীয় সংসদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল এবং যুব উন্নয়ন অধিদফতরের পরিচালক অসিত কুমার মুকুটমণি বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব নূর মোহাম্মদ। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব উন্নয়ন অধিদফতর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১৫ জনকে জাতীয় যুব পুরস্কার দেয়া হয়।
বাংলাদেশ কোনো কিছুতেই মাথা নত করবে না জানিয়ে যুব সমাজের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থার মধ্যে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা যে কোনো প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে পারি। আমরা বিজয়ী জাতি। যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছি। দারিদ্র্যের কাছে মাথা নত করব না। কোনো কিছুর কাছে মাথা নত করব না।
দেশের যুবসমাজকে 'নৈতিকতা, সততা, দেশপ্রেম, মানবতাবোধের' আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের ও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যুব সমাজ আমাদের বড় শক্তি। দরকার শুধু শিক্ষা, সচেতনতা এবং সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। সরকারের দায়িত্ব সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। আমরা সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। এতে করে যুবকরা আরো উদ্যমী হবে।
আত্মকর্মসংস্থানে বিশেষ সাফল্যের জন্য সুনামগঞ্জের মল্লিকপুরের মিজানুল হক সরকার, কিশোরগঞ্জের মহিনন্দ গ্রামের নূরুল আরেফিন লিংকন, ঢাকার আরকে মিশন রোডের নাজনীন পারভীন, নারায়ণগঞ্জের আলমপাড়ার সাবিরা সুলতানা, বান্দরবানের চেমী ডলুপাড়ার মাসিং নু মার্মা, ফরিদপুরের আলীপুরের তামান্না মোসলেম মীরা, ফেনীর সোনাগাজীর মহিউদ্দিন আহমেদ, নাটোরের বাগাতিপাড়ার সেলিম রেজা, সাতক্ষীরার আবু আব্দুল্লাহ আল আজাদ, বরিশাল সদরের নাজমা পারভীন সিমু, মৌলভীবাজারের সৎপুরের কামরান হোসেন ও দিনাজপুরের রামনগর গ্রামের আসমাউল হুসনা রিপা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে 'জাতীয় যুব পুরস্কার-২০১৩' গ্রহণ করেন। এছাড়া ঝালকাঠীর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফয়সাল রহমান, ভোলার গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি জাকির হোসেন মহিন ও যশোরের নবদিগন্ত মহিলা সংস্থার আইরিন বেগম প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চলতি বছরের যুব উন্নয়ন পুরস্কার নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের ৬৪ জেলা ও ৪৭৬টি উপজেলায় বেকার যুবাদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণদান, প্রশিক্ষণোত্তর আত্মকর্মসংস্থান, ঋণ বিতরণ, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদফতর এ পর্যন্ত ৪০ লাখ ৪৬ হাজারেরও বেশি যুবক ও যুবমহিলাকে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দিয়েছে, ঋণ বিতরণ করছে। ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ৯৬৫ জন প্রশিক্ষিত যুবক ও যুব মহিলা নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদের কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছে। যুব উন্নয়ন অধিদফতরসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকার যুব ঋণ বিতরণ করেছে। ন্যাশনাল সার্ভিসেস কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ৬৩ হাজার ১৫৬ জনের অস্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ২৯টি জেলায় বিদ্যমান যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সমপ্রসারণ করা হয়েছে। ১১টি জেলায় নতুন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। আমরা মেধাবী। আমাদের মেধা কাজে লাগাতে হবে। আমরা আমাদের রফতানির ক্ষেত্র আরো বাড়াতে পারি। 'প্রশিক্ষিত যুবশক্তি, উন্নয়নের দৃঢ় ভিত্তি'- এবারের জাতীয় যুব দিবসের এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দেশের যুব সমাজ দেশ ও জাতির উন্নয়নে আরো অবদান রাখবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে, ছেষট্টির ছয় দফার সংগ্রাম, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এবং নব্বইয়ের গণআন্দোলনে যুবাদের সম্পৃক্তার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এ দেশের যুবসমাজ আত্মত্যাগের যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, জাতি তা চিরদিন স্মরণ করবে। তাই আমি চাই, আমাদের যুব সমাজকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে। দেশের উন্নয়নে যুবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
যারা চলতি বছর জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছে- তাদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে আরো যেন বেশি পুরস্কার দিতে পারি- সেভাবে আপনারা নিজেদের প্রস্তুত করবেন।
COMMENTS