আফ্রিকার সুদানের একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে প্রায় ৩০০০ বছরের পুরনো এক মানব কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। এটা তেমন চমকপ্রদ খবর হয়তো নয়। তবে যে ব্যপারটি এখন গবেষকদের মাঝে প্রবল আগ্রহের জন্ম দিয়েছে সেটা হচ্ছে, জানা তথ্যমতে ইতিহাসে এ ব্যক্তিটিই হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন মানুষের উদাহরণ যার দেহে বাসা বেঁধেছিল ঘাতক ব্যধি ক্যান্সার!
বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সারের কারণে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু ঘটছে। বর্তমানে এ হার গত ৩০ বছরের হারের চেয়েও দ্বিগুণ। তবে প্রাচীন যুগের মানুষের দেহে অনেক ধরণের রোগের অস্তিত্বের প্রমাণ মিললেও ক্যান্সারের উপস্থিতি ছিল একদমই বিরল। এর থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ক্যান্সার আসলে আধুনিক মানুষের কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসের কারণে সৃষ্ট যেমন- ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, দূষণ ও দীর্ঘায়ু হওয়া। গবেষকরা চেষ্টা করেছেন, প্রাচীন মানুষের মাঝে ক্যান্সারের ব্যপকতা কতটুকু ছিল, সেটা নির্ণয় করতে। আগে যেসব ক্ষেত্রে প্রাচীন মানুষের দেহে ক্যান্সারের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল, সেসবগুলোই ছিল বিনাইন টিউমার। এসব টিউমার এর আশেপাশের টিস্যুকে সংক্রমিত করতে খুব একটা সক্ষম নয়। যাই হোক, খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনটি প্রাচীন মানব কঙ্কালের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যেগুলোতে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের অস্তিত্ব ছিল। এ টিউমারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা দেহের এক স্থানে উৎপত্তি লাভ করে ধীরে ধীরে পুরো দেহকে সংক্রমিত করে ফেলে।
নীল নদের বাম তীরে পশ্চিম আমারাতে এ কঙ্কালটি পাওয়া যায়। জায়গাটি সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে ৪৬৫ মাইল দূরে অবস্থিত। গবেষকদের ধারণা, এ লোকটির বয়স ছিল আনুমানিক ২৫ থেকে ৩৫ বছর। এখানে আরো ২০ জন মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। হয়তো এরা সবাই আত্মীয়। কঙ্কালটি পরীক্ষা করার জন্য গবেষকরা এক্স-রে ও স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করেন। তারা কঙ্কালের হাড়ের ক্ষতের ছবি তুলেন। পরে দেখা গেল গলার হাড়, কাঁধ, উর্ধ্ববাহু, পাঁজর, মেরুদণ্ড, শ্রোণি, ঊরুর হাড়েও ছড়িয়ে পড়েছে সে ক্ষত। গবেষকরা ধারণা, এটা আসলে টিউমার সারা দেহে ছড়িয়ে যাবারই ফল। তাদের অনুমান, এটা হয়তো কাঠ পুড়িয়ে ধূমপান বা schistosomiasis নামে পরজীবী ঘটিত রোগের কারণে হতে পারে। এই আধুনিক যুগেও schistosomiasis এর কারণে পুরুষদের মূত্রথলি ও স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে।
এ সংক্রান্ত গবেষণা গত ১৭ মার্চ PLOS ONE.এ প্রকাশিত হয়েছে।
COMMENTS