কোনাবাড়ীতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের গার্মেন্ট কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা তদন্ত শেষ করেছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি। তদন্ত শেষে আর্থিক ক্ষতি ৫৩১ কোটি টাকা চূড়ান্ত করেছে তারা। একই ঘটনায় শ্রম মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটিও তাদের তদন্তকাজ শেষ করেছে। এ কমিটি তাদের তদন্তে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আগুন লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এর সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি। শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের এ কারখানায় আগুন লাগে। এ ঘটনায় ওই সময় জয়দেবপুর থানায় প্রতিষ্ঠানটির করা মামলার এজাহারে ১ হাজার ২০২ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে ৯৭২ কোটি টাকা বলে দাবি করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ দাবি থেকেও সরে এসে ৯১০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির দাবি চূড়ান্ত করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু শেষমেশ ফায়ার সার্ভিসের তদন্তে তাদের এ দাবিও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপপরিচালক জহুরুল আমিন মিয়া বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন ও দলিলপত্র যাচাই-বাছাই শেষে আর্থিক ক্ষতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত একটি প্রতিবেদনও জমা দেয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর।
ওই তদন্ত কমিটির সদস্য উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, তদন্তকালীন দাবির বিপরীতে ঋণপত্র, চালান ও বীমা দাবি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিপরীতে যথেষ্ট দলিলও জমা দিতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, আগুনে ক্ষতির পরিমাণ ৫৩১ কোটি টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির বীমা দাবির পরিমাণ ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বীমার আওতায় ছিল না।
এদিকে আগুনের ঘটনাটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে বলে নিশ্চিত হলেও ষড়যন্ত্রকারী কে বা কারা তা চিহ্নিত হয়নি শ্রম মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির তদন্তে। এরই মধ্যে এ তদন্ত কমিটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করছে। প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত মতামতের অপেক্ষায় আছে।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপসচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদনের খসড়া তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহে খসড়ায় মতামত নিয়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে।
প্রতিবেদন চূড়ান্ত হওয়ার আগে তদন্তের ফল প্রসঙ্গে বিস্তারিত বলতে রাজি না হলেও তিনি বলেন, ঘটনাটি যে নাশকতা, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কারখানার বহিরাগত কেউ লিখিত সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি। ষড়যন্ত্রকারী কে বা কারা, তা চিহ্নিত করা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে গাজীপুরে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টে আগুন লাগে। ঘটনার পর পরই গাজীপুর জেলা প্রশাসক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের চারটি পৃথক কমিটি তদন্ত শুরু করে। সবার আগে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। সে প্রতিবেদনে বহিরাগতরাই এ ঘটনার জন্য মূলত দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হলে সে কমিটির কাজে কোনো অগ্রগতি নেই বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
COMMENTS