আজ ২৬শে মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন আজ। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিন যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ।
১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার আড়ালে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বাংলার মুক্তকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে 'অপারেশন সার্চলাইট' নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। মধ্যরাতেই অর্থাত্ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ভবন) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন। ইংরেজীতে ঘোষণা করা সেই স্বাধীনতা ঘোষণার বাংলা অনুবাদ হলো, 'এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।' একই সঙ্গে তিনি বাংলায় যে বার্তা পাঠান সেটি হলো, 'পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ, দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপস নেই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রু বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।'
চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বাণী সেই রাতেই সাইক্লোস্টাইল করে শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত বিবৃতিটি সর্বপ্রথম পাঠ করেন আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান। এরপর ২৭ মার্চ তত্কালীন মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যে ঘোষণা পাঠ করা হয় সেখানে উল্লেখ ছিল '...ডিক্লেয়ার দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ। অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।' বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণার কপি ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে হ্যান্ডবিল আকারে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়। এই ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তত্কালীন ইপিআর'র ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।
এর আগে ৭ই মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' ঘোষণা দিয়ে গোটা জাতিকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন। ২৫ শে মার্চ সন্ধ্যা রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, 'ইয়াহিয়া খান সমস্যা সমাধানের জন্য সামরিক ব্যবস্থা বেছে নিলেন আর এখানেই পাকিস্তানের সমাপ্তি হলো।' রাত সোয়া একটার দিকে ট্যাঙ্ক সাজোয়া গাড়ি ও এক লরি সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তখন বাঙালীর নেতা বঙ্গবন্ধু বীর বাঙালীর মতোই দোতলার ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ান। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে এ বাড়ির টেলিফোনের লাইন কেটে দেয়া হয়। আর বাঙালীর স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নিভিয়ে দেয়ার জন্য বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় হায়েনার দল। এরপর এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতিকে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়। আজ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহার্ঘ্য স্বাধীনতার ৪৪তম দিবস।
প্রথমবারের মতো যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকরের পর আসা এবারের স্বাধীনতা দিবস বাঙালী জাতিকে ডাক দিচ্ছে রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধীমুক্ত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের। আজ জাতি ব্যথাতুর চিত্তের বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধে আত্মোত্সর্গ করা দেশমাতৃকার অগণিত বীর সন্তান এবং যারা সহায়-সম্পদ-সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাদের।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ বুধবার মহান স্বাধীনতা দিবসটি পালন করা হবে। সব ভবনে ও শহরের প্রধান সড়কগুলোতে উড়বে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। সকালে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দলমতনির্বিশেষে সেখানে হাজির হবে লাখো মানুষ। ভোর ৬টায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণের পরই সাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির বাণী
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দেশবাসী ও প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় দিন। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং দীর্ঘ ন'মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। তিনি বলেন, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে দলমত নির্বিশেষে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার এ মহান দিনে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করতে দেশ-বিদেশে বসবাসরত সকল নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান, গণতন্ত্র ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বানচাল করতে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। দেশবাসীকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী যে কোনো অপতত্পরতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি নেত্রীর বিবৃতি
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল সোনালী দিন। এদিনে বিশ্ব মানচিত্রে দেশমাতৃকার স্বাধীন সত্তা ফুটে উঠেছিল। আজকের এইদিনে দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
কর্মসূচি
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। সকল সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ, ক্রোড়পত্র, সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশিত হবে, সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হবে। ভোরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পোস্টার প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় বিশ্বরেকর্ড গড়তে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ইত্যাদি উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
আওয়ামী লীগের দুইদিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ বুধবার সূর্যোদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৭টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, বেলা ১১টায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে 'লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত' অনুষ্ঠানে যোগদান, বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার মাজারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় খামারবাড়িস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবিগণ বক্তব্য রাখবেন।
বিএনপির কর্মসূচি
বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোর ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন এবং সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বেলা ২টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর ফাতেহা পাঠ করবেন। এ সময় মাজার প্রাঙ্গণে ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রামে দিনভর ব্যাপক কর্মসূচি
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে আজ বুধবার চট্টগ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ, সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, এতিমখানা ও জেলখানায় উন্নতমানের খাবার বিতরণ, শিল্পকলা একাডেমী, শিশু একাডেমী ও ডিসি হিলে স্বাধীনতা উত্সবে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সকালে নগরীর দারুল ফজল মার্কেট দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল সাড়ে ৮টায় বাকলিয়াস্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন স্টেডিয়ামে কর্পোরেশন পরিচালিত স্কুল-কলেজের স্কাউট, গার্লস গাইড, রোভার-র্যাঞ্জার, কাব এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সিটি মেয়রের সালাম গ্রহণ ও ডিসপ্লে পরিদর্শন এবং বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনষ্টিটিউটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য 'মহান স্বাধীনতা স্মারক সম্মাননা পদক প্রদান করা হবে।
মহান স্বাধীনতা দিবসের সকল শহীদ স্মরণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঘোষিত লাখো কণ্ঠে 'আমার সোনার বাংলা' শিরোনামে অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আজ বুধবার বন্দর নগরী চট্টগ্রামে চেরাগী মোড় চত্বরে সবার কণ্ঠে 'আমার সোনার বাংলা' পরিবেশনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন "খেলাঘর" চট্টগ্রাম মহানগরী। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সকাল ১১টায় এক সাথে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে।
COMMENTS