শ্রীপুরে আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ-সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৭০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে।
এ ঘটনায় শ্রীপুর পৌর শহরের উজিলাবো গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ও শ্রীপুর পৌর ছাত্রলীগের সদস্য আল আমীন (২১) মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। গণমাধ্যমকে আল আমিনের ভাই আলমগীর হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। বর্তমানে আল আমিনের মৃতদেহ শ্রীপু্র হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। বর্তমানে আল আমিনের মৃতদেহ শ্রীপু্র হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
আহত অন্যরা হলেন- হায়দার আলী (৫২), এডভোকেট আব্দুস ছালাম (৫০), আলাউদ্দিন টুটুল (৩৫), ফরহাদ (২৮), নাজমুল ইসলাম (২০), তানজিল (১৮), আনোয়ার হোসেন (২২), কফিল উদ্দিন (৩৫), আসাদ প্রধান (২০), মিজানুর রহমান (৩৫), ইফাজ উদ্দিন (৬০), আবুল কাশেম (৩৫), জালাল উদ্দিন (৬০), মারুফ হোসেন (২০), এসআই জিয়াউল ইসলাম (৩৮), জাকিরুল ইসলাম জিকু (২৫), সুমন (২২), আমিনুল ইসলাম (২৮), বাবুল হোসেন (৩৫), রোমান (২৫), মাঈন উদ্দিন (৩০), কামরুল হাসান (২৮) ও সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন (২৫) প্রমুখ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা পৌনে ১১টায় গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল হোসেন সবুজের সমর্থকরা পৌর শহরের প্রধান সড়কে মিছিল করে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অবস্থান নেয়।
অপরদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুল জলিলের সমর্থকরা বেলা সোয়া ১১টায় মিছিল করে পৌর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে চেষ্টা করে। এ সময় তাদের মিছিল লক্ষ্য করে ইকবাল হোসেন সবুজের সমর্থকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে ইকবাল হোসেন সবুজের লোকজন পালিয়ে যায়। পরে বেলা পৌনে ১২টায় বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল জলিলের সমর্থকরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় শ্রীপুর বাজারের সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইকবাল হোসেন সবুজের কর্মী সমর্থকরা শক্তি অর্জন করে প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণ ও ককটেল ফাটিয়ে শহরে প্রবেশ করে। গুলি ও ককটেলের মুখে আব্দুল জলিলের সমর্থকরা শ্রীপুর বাজার থেকে পালিয়ে যায়। এরপর ইকবাল হোসেন সবুজ তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে পথসভা করে। পথসভার শেষে সবুজের লোকজন চলে যাওয়ার সময় আব্দুল জলিলের কর্মী-সমর্থকরা তাদের পথরোধ করে মারধর, পাঁচটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, অর্ধশত মোটরসাইকেল ও শ্রীপুর পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
শ্রীপুর থানার ওসি জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোটর সাইকেলের (ইকবাল হোসেন সবুজ) কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে প্রকাশ্যে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শহরে প্রবেশ করে। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষ এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ৪১ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি ও ১৭ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে শ্রীপুর থানার এসআই জিয়াউল ইসলাম (৩৮) ও এসআই জুবায়েদুল ইসলামসহ পুলিশের মোট পাঁচ সদস্য আহত হন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাহিদা আক্তার জানান, গুলিবিদ্ধ ৯ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর দুইজনকে ভর্তি ও ১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বুলবুল জানান, সকাল ১০টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত বর্ধিত সভা হওয়ার কথা ছিল। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও এর আগেই উভয় গ্রুপের নেতাকর্মী সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
তিনি জানান, গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে উপজেলা আওয়ামী লীগ শ্রীপুর পৌর শহরের শ্রীপুর ভবন প্রাঙ্গনে তৃণমূলের ভোটে প্রার্থী নির্বাচনের আয়োজন করে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এডভোকেট রহমত আলী এমপি’র উপস্থিতিতে তৃণমূলের ২২৭ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৯৯ জন কাউন্সিলর গোপন ব্যলটের মাধ্যমে তাদের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেন। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তাদের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচন করে। প্রার্থীরা হলেন চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ্ব আব্দুল জলিল, ভাইস চেয়ারম্যান পদে শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মন্ডল বুলবুল এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে লুৎফুন্নাহার মেজবাহ।
ঘটনার সময় স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্জ অ্যাড: মো: রহমত আলী ও জেলা আ’লীগের সেক্রেটারী অ্যাড: আজমত উল্লাহ খান শ্রীপুর চৌরাস্থায় এম.পি.’র বাস ভবনে অবস্থান করছিলেন। বেলা সাড়ে ১২টার সময় তারা সবাই শ্রীপুর ত্যাগ করেণ। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় জলিলের নেতাকর্মীরা হামলা করে বলে অভিযোগ উঠে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মার্চ শ্রীপুর উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে।
COMMENTS