কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় ২টি মোবাইল ফোনে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করত শীর্ষসন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম। সোমবার কারা অধিদপ্তরের একটি টিম ওই কারাগারে অভিযান চালিয়ে সেই মোবাইল ফোন ২টি উদ্ধার করে। কিন্তু কী করে তার হাতে মোবাইল ফোন ২টি গেল?
জানা যায়, ওই কারাগারের কর্তাব্যক্তিদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেই গত কয়েক বছর ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আসছিল ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই ডন। শুধু আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীই নয়, মোবাইল ফোনে কারাগার থেকে এই সন্ত্রাসী প্রভাবশালী রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এমনকী প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্তাব্যক্তির সঙ্গেও নিয়মিত কথা বলত। তার কাছে পাওয়া মোবাইল ফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড খতিয়ে দেখলেই এ ব্যাপারে চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানা গেছে।
কারা অধিদপ্তরের কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেছেন, সুইডেন আসলামের কাছে যে মোবাইল ফোন ২টি পাওয়া গেছে এ ব্যাপারে তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। কীভাবে তার কাছে মোবাইল ফোন গেল এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর সে ফোনে কার সঙ্গে কথা বলত এ বিষয়টি পুলিশ বা গোয়েন্দারা তদন্ত করতে পারেন। আমরা তাদের সহায়তা করব।
সূত্র জানায়, সুইডেন আসলামের মোবাইল ফোনে থ্রিজি কানেকশন ছিল। যার মাধ্যমে সে ইন্টারনেটে ছদ্মনামে ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে নিয়মিত চ্যাটিংও করত। শুধু টেলিফোনে কথা নয়, কারাগারের ভেতর ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হত সুইডেন আসলামকে। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কারারক্ষীরা তার কাছ থেকে প্রতিমাসে টাকা পেত। টাকার ভাগ যেত ওই কারাগারের কর্মকর্তাদের পকেটেও।
গত সোমবার তার কাছে মোবাইল ফোন পাওয়ার পর এখন কারা গোয়েন্দা দিয়ে তাকে নজরে রাখা হয়েছে। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেলে বসে কেউ যেন মোবাইল ফোনে কথা বলতে না পারে এজন্য মোবাইল ফোন ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার মেশিন রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় জ্যামার মেশিন বন্ধ রাখা হত। এজন্যও বন্দিদের কাছ থেকে টাকা পেত ওই কারাগারের কর্তাব্যক্তিরা।
দুই বছর আগে এই কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে খুনের নির্দেশ দিয়েছিল ঢাকার আরেক শীর্ষসন্ত্রাসী কিলার আব্বাস। এরপরই মিরপুরে একটি লাশ পড়ে যায়। সুইডেন আসলামও কারাবন্দি থেকেই মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজিসহ অপরাধজগত্ নিয়ন্ত্রণ করত। দিত সহযোগীদের নানা নির্দেশনা।
জানা গেছে, ২০১২ সালে তত্কালীন এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় গোপনে শীর্ষসন্ত্রাসী বিকাশ কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে দেশ ছাড়ে। গত বছর সুইডেন আসলামেরও রাজনৈতিক আনুকূল্যে দেশছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবকিছু ব্যাটে-বলে করতে না পেরে তার কারামুক্তি মেলেনি। বর্তমানে সব মামলায় জামিনে আছে ঢাকার এক সময়ের বহুল আলোচিত এই সন্ত্রাসী।
সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, হত্যা, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ ঢাকার বিভিন্ন থানায় সর্বমোট ১৯টি মামলা রয়েছে।
COMMENTS