বাংলাদেশে টিভি তৈরিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দেশীয় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ওয়ালটন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সিআরটি (ক্যাথোড রে টিউব) টিভির যন্ত্রাংশ উৎপাদনে বিপুল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণেও ওয়ালটনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় ওয়ালটনের টিভি বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এ পণ্যের মান বাড়লেও দাম কমছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উন্নত বিশ্বে এখন সিআরটি টিভি (পেছনে ভ্যাকুয়াম টিউবযুক্ত) তৈরি করছে না। বাংলাদেশে সিআরটি টিভির একটি বড় অংশ আসত চীন থেকে। কিন্তু মোল্ড এবং কাঁচামাল সঙ্কটে চীন এখন সিআরটি টিভি তৈরি করছে না। কিন্তু দেশে ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ালটন সিআরটি টিভি উৎপাদন কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়ালটন।
এদিকে বিশ্বকাপ টি-২০ ক্রিকেটের আয়োজক দেশ বাংলাদেশ। নিজ দেশে আন্তর্জাতিক খেলা হচ্ছে। টিভির পর্দায় খেলা উপভোগ করছেন কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্ত। ফলে টিভি সেটের চাহিদা যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তা ছাড়া কয়েক দিন পরেই আসছে বিশ্বকাপ ফুটবল। এ বাস্তবতায় ওয়ালটন সিআরটি টিভি উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
গাজীপুরের চন্দ্রায় তিন শতাধিক বিঘা জায়গায় ওয়ালটন মাইক্রো-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের নতুন কারখানা স্থাপন করেছে। এখানে তৈরি হচ্ছে উচ্চ প্রযুক্তির স্মার্ট টিভি, এলসিডি, এলইডি, টুকে এলইডি ও ফোরকে এলইডি। সেই সঙ্গে টেলিভিশনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, পিসিবি বোর্ড, প্যানেল, মাদারবোর্ড, কেবিনেট ইত্যাদিও তৈরি হচ্ছে। এতে একদিকে দেশের চাহিদা মিটছে, সাশ্রয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। অন্যদিকে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
দ্রুত বর্ধনশীল টিভি তৈরির খাত নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ভীষণ আশাবাদী। সিংহভাগ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি টিভি সেট। চাহিদার বিচারে টেলিভিশন প্রস্তুত শিল্পে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত অগ্রসরমান বাজার বাংলাদেশ।
বাজার বিশেষজ্ঞ এবং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন বাড়ছে এবং এ শিল্প ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় কমে আসছে। বাড়ছে পণ্যের গুণগত মান। যা দেশকে দিচ্ছে শক্ত ভীত। বাড়ছে রফতানি সম্ভাবনা। এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের চাকা।
রফতানি চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বড় পরিসরে টিভি সেট উৎপাদনে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ওয়ালটন। স্থানীয়ভাবে সরাসরি উৎপাদনের শুরুটা করেছে তারাই। উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরুর আগে সংযোজন শুরু করেছে নিপ্পন, সনি-র্যাংগস, ফিলেক্স, শাহানূর, হামিম ইলেক্ট্রনিক্স, যমুনা, এলজি-বাটার ফ্লাইসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে নিটোল ইলেক্ট্রনিক্স।
নিপ্পন ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি ও টিভি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাব্বত উল্লাহ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘টেলিভিশন উৎপাদনে নীতিমালা না থাকা ও উৎপাদনমুখী শিল্পের সুযোগ না পাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরেও কেবল উদ্যোক্তাদের নিজস্ব উদ্যোগে এ খাতের অনেক অগ্রগতি হয়েছে।’
বাংলাদেশ টিভি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ লাখ টেলিভিশন দেশে উৎপাদন ও সংযোজন হয়। প্রায় ২ লাখ টেলিভিশন সরাসরি আমদানি হচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৪৪ হাজার। চলতি অর্থবছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার।
বাংলাদেশ টিভি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘দেশে বর্তমানে শতাধিক উদ্যোক্তা টেলিভিশন কারখানা স্থাপন করেছেন। তবে নানা কারণে তারা পিছিয়ে রয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের সহায়তা পেলে এ খাতের উন্নয়ন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
ওয়ালটনের আন্তর্জাতিক বিপণন প্রধান লোকমান হোসেন আকাশ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘মানুষের আস্থা অর্জন করে মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা ওয়ালটন পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০ লাখ টেলিভিশন উৎপাদন ক্ষমতার নতুন কারখানা স্থাপন করেছে ওয়ালটন। এ কারখানা থেকে ৫ লাখ টেলিভিশন রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এপ্রিলে ওয়ালটনের তৈরি কয়েকটি নতুন মডেল ও সাইজের সিআরটি টিভি বাজার আসছে। ২০১৩ এর জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে ওয়ালটনের টিভি বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। বর্তমানে ওয়ালটনের ১৯ থেকে ৮৫ ইঞ্চির বিভিন্ন মডেলের এলসিডি, এলইডি টিভি বাজারে রয়েছে।’
জানা গেছে, গুণগত উচ্চমানের পাশাপাশি রংয়ের বৈচিত্র্য ও দেশব্যাপী সার্ভিসিং নেটওয়ার্ক থাকায় ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে ওয়ালটন টিভি। বাংলাদেশে একমাত্র ওয়ালটনের রয়েছে আইএসও সনদপ্রাপ্ত সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। গ্রাহক সেবা দিতে সারাদেশে কাজ করছে পাঁচ শতাধিক প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান।
COMMENTS