গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন শুধু কাগজে-কলমে ও নামেই, কাজের বেলায় নয়। প্রায় এক বছর বয়স হয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের। এর মধ্যে এলাকায় কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। বরং কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীর মাথায় চাপিয়ে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশনের আবাসন করের বোঝা। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছেন সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের ওপর। এ ধরনের সিটি কর্পোরেশনের আশা করেননি এলাকাবাসী। তাদের দাবি, সব ধরনের সেবা পাওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনের আবাসন কর দেবেন তারা। তবে গাজীপুরের মেয়র বলেছেন, জনগণের কর-খাজনার টাকাতেই এলাকার উন্নয়ন করতে হয়।
জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক এলাকায় আবাসন কর, দোকান, সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত সকল প্রকার যানবাহনসহ নানা ধরনের ট্যাক্সের বোঝা এলাকাবাসীর মাথায় চাপিয়ে দিয়েছেন। অথচ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন হওয়ার আগে এলাকার রাস্তাঘাট যেমন ছিল তেমনি রয়েছে। শুধু বেড়েছে করের বোঝা। এলাকার উন্নয়ন ও সিটি কর্পোরেশনের সেবা না পাওয়া পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সব ধরনের ‘কর’ দিতে অনাগ্রহী এলাকাবাসী।
১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সোমেজ মিয়া বলেন, ‘বছরে প্রায় ছয় মাস আমাদের পানিবন্দি থাকতে হয় রাস্তাঘাট না থাকায়। আমাদের এলাকায় গ্যাস নেই, রাস্তাঘাটও নেই। চলাচলের রাস্তা না হওয়া পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের কোনো ধরনের কর দিতে পারব না। সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সেবা পাওয়ার পরে আমরা কর দেব।’
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. শওকত হোসেন বলেন, ‘আমরা সিটি কর্পোরেশনের কোনো রকম নাগরিক সেবা পাই না। অথচ কর দিতে হবে এটা কেমন কথা! আমাদের আগে বুঝিয়ে দেওয়া হোক আমরা সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা, তারপর এর সকল কর দেব।’
১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লিমন হোসাইন জানান, ‘বছরে যত টাকা বাড়িভাড়া পাই তার এক মাসের টাকা আবাসন কর দিতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে। তা আমাদের দরকার নাই, আমাদের শুধু সংসার ও লেখাপড়ার খরচ দিয়ে বাকি টাকা সিটি কর্পোরেশন নিয়ে যাক। আমাদের বাড়িভাড়ার টাকার দরকার নাই। কোনো রকম বাঁচতে পারলেই হলো।’
এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আজহারুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের কেউ নাগরিক সুবিধা পায়নি। এলাকার রাস্তাঘাট, গ্যাস, পানি নেই ঠিক আছে, কিন্তু ভৌগোলিক দিক থেকে এ এলাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় পড়েছে। সে কারণে বাড়তি কর দিতে হবে। তাছাড়া সরকারের কথা তো মানতে হবে। এলাকাবাসী কর দিতে না চাইলে তার কারণ দেখিয়ে সিটি কর্পোরেশনের বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করতে পারেন। তার পর যদি কিছু হয়। কম করে হলেও কিছু কর তো এলাকাবাসীকে দিতে হবে।’
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান বলেন, ‘আগের এমপি ওই সব এলাকায় কোনো ধরনের উন্নয়নকাজ করেননি। ফলে এলাকার কোনো উন্নয়ন হয়নি। যেহেতু ওই এলাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় পড়েছে সেহেতু কিছু ট্যাক্স এলাকার লোকজনকে দিতে হবে। এলাকাবাসী ট্যাক্স না দিলে আমরা এলাকার রাস্তাঘাটসহ উন্নয়ন করব কীভাবে! দেশ তো চলে এলাকার লোকজনের টাকায়।
সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের জন্য একটি ফান্ডের প্রয়োজন। সেই ফান্ডের টাকা তো এলাকাবাসীর দেওয়া ট্যাক্স থেকেই হবে। তাদের টাকা দিয়েই এলাকার উন্নয়ন করা হবে। তবে এলাকার কিছু রাস্তাঘাট খুব দ্রুত করা হবে। এসব রাস্তার মধ্যে কোনাবাড়ী-কাশিমপুর, বাইমাইল-বাঘিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও জয়েরটেক, আমবাগ থেকে নছের মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি রাস্তার কাজ হাতে নেওয়া হবে বলে মেয়র জানিয়েছেন।
তিনি এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, সবার সহযোগিতা থাকলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সকল প্রকার উন্নয়ন দ্রুত করা সম্ভব হবে।’
COMMENTS