পোলট্রি নগরী হিসেবে খ্যাত গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় পোলট্রি খাবার, ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি, ঔষধ কোম্পানীর স্থানীয় ঔষধ বিক্রেতা, বিক্রয় প্রতিনিধিদের সিন্ডিকেটের মনোপলি ব্যবসা এবং দীর্ঘ প্রায় ১ বছর যাবৎ ডিম ও মুরগী মাংসের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে কাপাসিয়ার পোলট্রি শিল্প আজ ধ্বংসের পথে। ব্যাপক ধসে দিশেহারা ও হতাশাগ্রস্ত হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারীরা মঙ্গলবার সকালে কাপাসিয়া পোলট্রি মালিক সমিতির উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ চত্বর ও প্রাণী সম্পদ অফিসের সামনে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
পরে পোল্ট্রি খামার ধ্বংসের ৮টি কারন উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। খামারীরা প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্পকে রক্ষা করে কাপাসিয়াসহ সারা দেশের খামারীদের পুনরায় উজ্জীবিত করে পোল্ট্রি শিল্পের প্রান ফিরিয়ে আনতে একযোগে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় খামারীরা রাস্তায় সহস্রাধিক মুরগীর ডিম ভেঙে তাদের ক্ষোভের বহি: প্রকাশ ঘটান। স্বারকলিপি প্রধান শেষে খামারীরা উপজেলা পরিষদ থেকে মিছিল করে কাপাসিয়া বাজার হয়ে ফকির মজনু শাহ্ সেতু’র পশ্চিম প্রান্তে বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কে অবস্থান নেয়। এখানে প্রায় ঘন্টা ব্যাপী অবস্থানের ফলে সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
ফলে পথচারী ও বাস যাত্রীদের চরম বিড়ম্বনার শিকার হন।
কাপাসিয়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডাঃ অখিল চন্দ্র ও ডাঃ ওসমান গনি জানান, এ উপজেলায় গাভীর খামার ১৩৮টি, গরু মোটা-তাজাকরণ খামার ২১২৫টি, লেয়ার খামার ৬০৯টি, ব্রয়লার খামার ৮৮০টি, বাণিজ্যিক প্যারেন্ট স্টক ১টি. হাঁসের খামার ২৫টি, ছাগলের খামার ৬০টি, কবুতরের খামার ৫৭টি, কোয়েলের খামার ১টি, ফিড মিল ৩টি রয়েছে। বর্তমানে দেশের এহেন পরিস্থিতিতে অত্র এলাকার খামারীরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে । ছোমাইয়া পোলট্রি খামারের মনির, তিন ভাই পোলট্রি খামারের কামরুজ্জামান ও শেখ কানন পোলট্রি খামারের খামারী শেখ কানন জানান, হঠাৎ মাংস ও ডিমের বাজারে ধস খাবার ও ঔষধ পত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারনে কাপাসিয়ার হাজার হাজার পোলট্রি খামারী পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কারন খামারীরা বর্তমানে ডাক্তার, খাবার ও ঔষধ ব্যবসায়ী কারো সাথেই সময়মতো যোগাযোগ করতে পারছেনা । বাজারের এহেন বেহাল অবস্থা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, চড়াদামে ঔষধ ক্রয়ের ফলে গুনতে হচ্ছে ক্ষতির পালা। মাথায় হাত রেখে সব কিছু গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া খামারেিদর আর কোন উপায় নেই। কাপাসিয়া বাজারের পোলট্রি খাবার ব্যবসায়ী তপন ও তরগাঁও খেয়াঘাট মোড়ে খাবার ব্যবসায়ী ফরহাদ জানান, পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার আছে, কিন্তু মূল্য পূর্বের ন্যায় কিছুটা বৃদ্ধি, এছাড়া খামারীরা একটি বাচ্চাকে ছোট থেকে পোষে বিক্রি বা ডিম উৎপাদন পর্যন্ত যে খরচ হচ্ছে বর্তমান বাজার ধসের কারনে তার অর্ধেকও পাচ্ছে না। সম্প্রতি সরকার বিরোধী টানা হরতাল,অবরোধ ও আন্দোলনের কারনে এ শিল্পে অনেক খামারীরা বিপুল অংকের টাকা লোকসান গুনে ফের কিছুটা আর্থিক লোকসান পোষিয়ে আসতে না আসতেই এমতাবস্থায় বড়রকমের বাজার ধস পোলট্রি শিল্পের উপর, এটা অনেক বড় রকমের একটি হুমকি। মাশক গ্রামের খামারী উবায়দুল্লা, দড়ি নাসেরা গ্রামের খামারী বকুল ও রুমান জানান, আমরা খামারীরা জিন্দামরা অবস্থায় আছি।
নিম্নমুখী বাজার থাকার কারনে কাপাসিয়ার বাহির থেকে পাইকাররা ডিম ও মুরগী ক্রয় করতে এখানে আসতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে এখানকার উৎপাদিত ডিম, দুধ, মাংসে তাদের দ্ধিগুণ লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভ ও স্থানীয় অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে কাপাসিয়ার পোলট্রি ব্যবসায়ীরা। এরা প্রায় সময়ই ঔষধের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে বেশী দামে কিনতে বাধ্য করছে খামারীদের। অনেকেই দেশের অর্থনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ন এ শিল্পকে বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন।
হাজার হাজার খামারীদের উপস্থিতিতে মানব বন্ধন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে একাত্ততা ঘোষনা করেন কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা। কাপাসিয়া উপজেলা পোলট্রি খামারী মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ তাহের জামিল বাবুলের পরিচালনায় বক্তব্য বাখেন, খামারী সমিতির উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ নান্নু, কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও খামারী আজগর হোসেন খান, পাবুর গ্রামের খামারী এসএম শামীম, খামারী মোহসিন, তপন, রাসেল প্রমুখ।
বক্তারা ভারতীয় ডিম আমদানী বন্ধ করে দেশীয় এ শিল্পকে রক্ষা করে দেশের সার্বিক উন্নয়নের জোর দাবী জানান।
COMMENTS