জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করার প্রতিক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামের দীর্ঘপথে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এ রকম এক হাজার জনের তালিকা যদি করা হয়, সেখানেও জিয়াউর রহমানের নাম আসে না। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামের পথ একদিনে তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, অথচ কোথাকার কাকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করা হচ্ছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
মন্ত্রী সোমবার ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত ও মূল্যায়ন পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আকম মোজাম্মেল বলেন, স্বাধীনতার ৪৩ বছরে এসে এই ইতিহাস বিকৃতির দায়ভার গোটা জাতির। সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি বলেই আজ জনে জনে এভাবে ইতিহাস বিকৃতির সাহস পাচ্ছে। যাকে-তাকে যা খুশি দাবি করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিন খান ইমু ও ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার অভিযুক্ত পরিষদের উপদেষ্টা আলী নিয়ামত প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আগরতলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ও পরিষদের সদস্য এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মামলায় জীবিত অভিযুক্ত ছাড়াও মৃতদের স্বজনরাও মতবিনিময়ে অংশ নেন।
জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ পর্যন্ত সরকারি চাকরি করেছেন- একজন বক্তার এই দাবিকে সমর্থন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, এরপর তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। অথচ একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গিয়ে শাহ আজিজুর রহমান, আবদুল আলীম, একে বারী ও মশিউর রহমান যাদু মিয়াসহ এমন অনেক মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের তার সরকারে ঠাঁই দিতে দ্বিধা করেননি। মূলত তখন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হতে শুরু করে। এখনও এই ইতিহাস বিকৃতির অশুভ তৎপরতা থেমে নেই। তিনি বলেন, অচিরেই যদি এটা বন্ধ করা না যায়, তাহলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। তাই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতার সপক্ষ সরকার চেষ্টা করছে আগামী প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করার। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আগরতলা মামলার আসামিদের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, এই মামলার অভিযুক্তদের একটি সশস্ত্র সংগ্রামের গোপন ষড়যন্ত্র পরিকল্পনাই দেশকে মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু এ নেপথ্য নায়কদের কৃতিত্বপূর্ণ ইতিহাস দীর্ঘ ৪২ বছরেও সংরক্ষণ কিংবা তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া সম্ভব হয়নি।
এক্ষেত্রে নিজের অপারগতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে কিছু করার একক ক্ষমতাও নেই। তাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত ৩৯ জনের (জীবিত ও মৃত) কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণসহ তাদের মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র প্রদান, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও সম্মাননা প্রদান এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা চালু করতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবং জাতীয় সংসদে এ ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সবিস্তারে তুলে ধরার প্রয়াস হিসেবে বিসিএস পরীক্ষায় শুধু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়েই ১০০ মার্কের পৃথক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জোরালো অবস্থান নেবেন।
COMMENTS