শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা কর্মীরা সহিংস বেপরোয়া হয়ে উঠেন। মাসের এমন কোন দিন নেই যেদিনে একাধিক সহিংস, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, মার-ধোর ও হামলা-মামলার ঘটনা নেই। একের পর এক এ সব ঘটনা ক্রমশ বারতে থাকায় স্থানীয় সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তারা নার্ভাস ফিল করছেন কেউ কেউ এরই মধ্যে শ্রীপুর ছেড়ে অন্যত্র বদলী হয়েছেন আবার অনেকে অন্যত্র বদলীর জন্য উর্ধ্ব মহলে লবিং করছেন বলে নির্ভরশীল একটি সূত্র জানায়।
গেল ২ সপ্তাহে শ্রীপুরে কর্মরত একাধীক সরকারী কর্মকর্তা ক্ষমতাশীন দলের নেতা/কর্মীদ্বারা শারিরীক ভাবে উপজেলা কম্পাউন্ডের ভিতরেই আহত হওয়ার পর কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রকট আকারে ভীতি বিরাজ করছে। এসব বিষয়ে পুলিশে সহায়তা চেয়েও না পাওয়ার অভিযোগ করেছে ভূক্তভোগীরা। তারা কর্মস্থলে লাঞ্চিতের পর অন্যত্র বদলীর চেষ্টা তদবীর শুরু করছে। ক্ষমতাসীনদের সহিংস আচরণে ক্ষুব্ধ প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা। ক্ষমতাসীনদের রোষাণলে পরার ভয়ে জেলা প্রশাসন এসব কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলী করতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতণ কতৃপক্ষকে সুপারিশ করছে বলে সূত্রটি জানয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শ্রীপুরে গেল ২ সপ্তাহে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আট সরকারী কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত,অপমান অপদস্থ করেছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বেপরোয়া নেতা কর্মীরা প্রশাসনকে চাপে রেখে সুবিধা আদায় করতে যখন তখন কর্মকর্তাদের অপমান অপদস্থ করছে। ১১ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও) মোঃ আওলাদ হোসেন উপজেলা মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া ও সিংগারদীঘি এলাকায় ঘুর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করতে যান।
এরই মধ্যে নবনির্বাচিত উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা জাহান স্বপ্নাও ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় আসেন। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সলিং মোড় এলাকায় পিআইও আওলাদ হোসেনকে আটকে অপমান-অপদস্থ করে দুই দিনের মধ্যে শ্রীপুর ছেড়ে না গেলে তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকী দেয়। এর পর থেকে কর্মকর্তা ভয়ে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অফিসে আসছেননা। বিদ্যুতের লোড সেডিং দেয়ার কারনে ১৯ মে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মাওনা জোনাল অফিসে যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ও কৃষকলীগ নেতা কবির হোসেনের নেতৃত্বে এক দেড়শ নেতা-কর্মী হামলা করে ডিজিএম এমদাদুল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে পিটিয়ে আহত করে এ গটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
১৯ মে সোমবার দুপুরে তেলিহাটি ইউনিয়নের ভূমি অফিসে আ’লীগের সভাপতির নেতৃত্বে ভূমি কর্মকর্তাকে আটকিয়ে ভয় ভিতী দেখিয়ে নিজ পক্ষে নামজারিী ও জমাভাগ ফর্মে প্রতিবেদন লেখিয়ে নেন। এ ব্যাপারে ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ শ্রীপুর থানায় ৮৪০ নং জি ডি করেন।
২০ মে শ্রীপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহাব উদ্দিন আকন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের সাথে দাপ্তরিক কাজ শেষে নিজ দপ্তরে ফিরার পথে উপজেলা কম্পাউন্ডের ভেতরেই শ্রমিক নেতা মুজিবুর রহমান সহ কয়েক সঙ্গীদের নিয়ে এলোপাথারি কিল ঘুষি দিয়ে তাকে আহত করার ঘটনায় থানায় মামলা রুজ্জু হয়েছে।
এদিকে রৈাগীরচালা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকেও অপমান-অপদস্থ করে দলীয় নেতা-কর্মীরা।
২১ মে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় পিআইও আওলাদ হোসেন তাকে লাঞ্চিত করার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদেফেলেন।
পরে ২২ মে জেলা প্রশাসক মো: নুরুল ইসলাম শ্রীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আওলাদ হোসেন কে অন্যত্র বদলীর অনুরোধ জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে চিঠি দেন। ২২ মে শ্রীপুর উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা জাহান স্বপ্না এ সব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক নুরূল ইসলাম জানান, অনাকাংক্ষিত এ সব ঘটনা বন্ধে এবং উপজেলায় কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে আলোচনা করেছি। ক্রিমিনাল অফেন্সের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিনুল কাদির জানান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহাব উদ্দিন আকন্দকে মারপিটের ঘটনায় মামলা ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে লাঞ্চিতের ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। নির্দেশ পেলে এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা বন্ধ ও জড়িতদের গ্রেফতারে কঠোর হবেন বলে জানান তিনি।
COMMENTS