সারা দেশে দলের তৃণমূলে সৃষ্ট দ্বিধাবিভক্তি দূর করতে দ্রুত উদ্যোগ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে সাংগঠনিক টিম গঠন করে জেলা সফরের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। সাত বিভাগের জন্য ১৪টি টিম করতে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা আলোকিত বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের বিভক্তি এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। শুধু দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যেই নয়, সংগঠনের সব স্তরের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিভক্তি বিরাজ করছে। মুখ দেখাদেখি নেই একে অপরের মধ্যে। এ অবস্থায় সংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন দলের হাইকমান্ড। এর অবসান ঘটাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সঙ্কট নিরসনে জেলা-উপজেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠকও শুরু করে দিয়েছেন কেউ কেউ।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা স্বীকার করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নির্দেশনা মোতাবেক সমস্যা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। একই সঙ্গে সমস্যাসঙ্কুল জেলা-উপজেলা নেতাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে নাটোরের নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এ কাজ অব্যাহত থাকবে। ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে মহাসমারোহে সারা দেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সংগঠনকে চাঙ্গা করার জন্য সাংগঠনিক কর্মকান্ডে কেন্দ্রীয় নেতাদের আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিগত দিনের জেলা সফরের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সফরে গিয়ে থাকতে চান না। প্লেনে করে জেলা সফরে যান, কোনো রকম মিটিং শেষ করেই আবার প্লেনে চলে আসেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ও তার নিজের উদাহরণ টেনে বলেন, জেলা সফরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু সেখানে অবস্থান করতেন, তৃণমূলের সমস্যা নিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেন। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরামর্শ দিতেন। জেলা সফরে গিয়ে সেখানে অবস্থান করে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সাংগঠনিক কর্মকান্ডে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। তবে ১৪ মে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় দ্রুত সংগঠনকে শক্তিশালী ও সাংগঠনিক কাজে কেন্দ্রীয় নেতাদের আরও সক্রিয় হতে নেত্রীর নির্দেশের পর থেকে নেতারা নড়েচড়ে বসেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিনিয়ত সহযোগীসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া কেন্দ্রের পাশপাশি সারা দেশে জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে সবাই একযোগে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক করছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন বিভিন্ন উপকমিটি। এসব বৈঠকে উপস্থিতির হার শতভাগ, যা আগে দেখা যেত না। এছাড়া জেলা সফরের জন্য খুব শিগগির টিম গঠনও করে ফেলা হবে।
উল্লেখ্য, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ব্যাপক বিভক্তির সৃষ্টি হয়। অনেক উপজেলায় কেন্দ্রীয়, জেলা ও থানা কমিটির মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জন্ম হয় শত শত বিদ্রোহী প্রার্থী। এ অবস্থার অবসানে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।
COMMENTS