টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেলিব্রেশন কনসার্টে ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকের অবস্থা ত্রাহি মধুসূদন। বিসিবির ‘তাদের পুষিয়ে’ আপ্ত বাণী নিয়ে দেন-দরবার হয়নি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএস)। কিন্তু তার কিছুই সুরহা হয়নি। ট্র্যাকের বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া-ফাটার ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিসিবিকে দেওয়া চিঠির উত্তর এখন পর্যন্তও পায়নি। এখন আবার স্টেডিয়ামের সেই ট্র্যাকের উপরই কনসার্ট আয়োজন করেতে চাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ফলে ট্র্যাকের অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে সেই শঙ্কায় ভুগছেন অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন। যাতে অনুমতি না দেওয়া হয় সেই মিনতি করে মন্ত্রী-সচিব পর্যায়ে চিঠি দিয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহিম চেঙ্গিস।
বাফুফের এ কনসার্টকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন ইব্রাহিম চেঙ্গিস। তিনি বলেছেন, ‘আমি যতদূর জানি, কনসার্ট আয়োজন করে বাফুফে বড়জোড় ২ কোটি টাকার মতো পেতে পারে। অথচ এই জন্য ঝুঁকি নিতে হচ্ছে ১০ কোটি টাকার। ক্ষতের উপর ক্ষত হলে ট্র্যাক হুমকির মুখে পড়বে। আমরা তো তাদের কনসার্ট আয়োজনে বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই কেন?’
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, টি২০ বিশ্বকাপের সেলিব্রেশন কনসার্টে, সাইক্লিংসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকের। কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত বিসিবির সেলিব্রেশন কনসার্টেই বেশি ক্ষতি হয়েছে। জানা গেছে, কনসার্টের পর বিসিবির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল এনএসসি। কিন্তু ক্ষমতাবান বিসিবি থেকে কোনো উত্তর পায়নি এনএসসি।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকটির যা ক্ষতি হয়েছে তাতে এখনো সংস্কার সম্ভব। এ নিয়ে এনএসসির সঙ্গে স্টেডিয়ামে ট্র্যাকটি যারা স্থাপন করেছিল সেই দ্য নিউ মর্ডান বিল্ডার্সের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি জানিয়েছে ট্র্যাকটি সংস্কার করতে ৫৯ লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে। ক্ষতিপূরণের এই অংকটা চেয়েই বিসিবির কাছে চিঠি দিয়েছিল এনএসসি।
৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ট্র্যাকটি স্থাপন করা হলেও এখন আর এত অল্প টাকায় ট্র্যাক স্থাপন সম্ভব নয়। ইব্রাহিম চেঙ্গিস বলেছেন, ‘এখন যদি নতুন করে এ স্টেডিয়ামে ট্র্যাক স্থাপন করেতে হয়, তাহলে ১৫ কোটি টাকার মতো লাগবে। বর্তমান ট্র্যাকটা জোড়াতালি দিয়ে বেশ তো আমাদের চলে যাচ্ছে। কেন ছেঁড়া-ফাটা ট্র্যাকের ওপর বারবার আঘাত আসছে, জানি না। স্টেডিয়ামটা তো খেলা চালানোর জন্য, কনসার্ট চালানোর জন্য না।’
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মহামূল্যবান অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকটি রক্ষার জন্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব, যুগ্ম সচিবের কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন। আবেদনে তারা জানিয়েছে, বাফুফে আগামী জুনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে কনসার্টের আয়োজন করতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন ও দেশের অ্যাথলেটদের ভাবিয়ে তুলেছে। গত ১৩ এপ্রিল টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে আয়োজিত বিসিবির সেলিব্রেশন কনসার্টের সময় ট্র্যাকের ওপরে ভারি যানবাহন ও যন্ত্রপাতি দ্বারা মঞ্চ করার ট্র্যাকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এরপরও ক্ষতিগ্রস্ত ট্র্যাকটি অদ্যাবধি মেরামতের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নাই। এই ক্ষত-বিক্ষত ট্র্যাকের ওপর যদি আবারো কনসার্ট বা এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান করা হয়, তাহলে এর অস্তিত্বই থাকবে না।
গত ১০ মে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জাহিদ আহসান রাসেল বলেছিলেন, ‘এই মাঠে ভবিষ্যতে খেলা ছাড়া অন্য কোনো অনুষ্ঠান যাতে না হয়, তার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ এখন যদি এ স্টেডিয়ামে বাফুফের কনসার্ট হয়, তাহলে তার কথা কোনো মূল্যই থাকছে না- গত মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়েছে ইব্রাহিম চেঙ্গিস।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যাতে কনসার্ট যাতে না হয়, এ নিয়ে কঠোর আন্দোলনের কথা ভাবছেন ইব্রাহিম চেঙ্গিস। মানববন্ধনসহ আমরণ অনশনে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘ট্র্যাক রক্ষার জন্য আমরা মানববন্ধন করব। প্রয়োজনে কাফনের কাপড় করে অনশনে যাব।’
ক্ষতিগ্রস্ত ট্র্যাকের দ্রুত সংস্কার করা না যায়, তাহলে এমতিতেই এটি নষ্ট হয়ে যাবে। এ বিষয়ে স্টেডিয়ামে প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া জানিয়েছেন, ‘ট্র্যাকে এখন কোনো ভারি কিছু রাখা যাবে না। এটার দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। বর্ষার সময় ট্র্যাকের মধ্যে পানি জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সংস্কার করাও সম্ভব না হলে, একবার যদি পানি ট্র্যাকের ভেতরে ঢুকে যাবে, তাতে বিভিন্ন জায়গা ফুলে উঠবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।’
তবে থেমে নেই বাফুফে। অর্থ সংঙ্কটে জর্জরিত বাফুফে যে কোনো মূল্যে কনসার্ট আয়োজন করবে। গত সোমবারই কনসার্ট আয়োজনের জন্য বাফুফে দায়িত্ব দিয়েছে জিরো ডিগ্রি অ্যান্টারটেইনমেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। বিয়ষটি নিশ্চিত করেছেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ।
COMMENTS