রেড পাসপোর্ট ব্যবহারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা থাকার সময় রেড পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মেশিন রিডেবল (এমআরপি) পাসপোর্ট তৈরি করতে তিনি আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসে আসেন। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তিনি পাসপোর্ট অফিসে প্রবেশ করেন। ৫টা ৫ মিনিটে তিনি বের হয়ে আসেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা হিসেবে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন রেড পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন। আজ তিনি সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে এসেছেন।
রেড পাসপোর্টের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করবেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার ইচ্ছা করলে দিতে পারে কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় আবেদন করবেন না।
‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছেন’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার এ সময় বলেন, সাধারণ মানুষের মতো আইনের শাসন মেনে তিনি পাসপোর্ট করতে এসেছেন।
ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মুন্সি মুহিত ইকবালের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট, ছবি তোলাসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করেন।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি জানান, ম্যাডাম তার রেড পাসপোর্ট জমা দিতে এসেছেন। তিনি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট করতে এসেছেন। এখন থেকে প্রটোকল অনুযায়ী তিনি আর রেড পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন না।
পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাধারণত বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এ অফিস খোলা থাকে। খালেদা জিয়া ভিআইপি হওয়ায় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা রেড পাসপোর্ট ব্যবহারের সুযোগ পান। এ ছাড়া দূতাবাসে কর্মরত কূটনৈতিকরাও এই পাসপোর্টের অধিকারী। এই পাসপোর্টধারীরা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ভ্রমণে ডিপ্লোমেটিক ইমিউনিটি ও অধিকার ভোগ করে থাকেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সাল থেকে খালেদা জিয়া রেড পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। ওই বছর সরকার গঠনের পর তিনি রেড পাসপোর্টধারী হন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ওই বছর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি নের্তৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে ফের প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় গেলেও রেড পাসপোর্ট বহাল ছিল খালেদা জিয়ার। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা কিংবা কোনো পদে নেই। তাই তিনি রেড পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন না।
এদিকে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট অফিসে আগমন উপলক্ষে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়ানো নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুলু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়া, প্রচার সম্পাদক জয়নাল আবদিন ফারুক, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, যুব বিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
COMMENTS