নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার মূল হোতা নূর হোসেনের সঙ্গে র্যাব-১১ এর সাবেক কর্মকর্তা মেজর আরিফের কথোকথনের রেকর্ড এখন পুলিশের হাতে। আর ঐ কথোপকথনের ওডিও রেকর্ডের সূত্র ধরেই তদন্ত কর্মকর্তারা গ্রেপ্তারকৃত তিন সাবেক র্যাব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।এতে জানা যায়, হত্যাকান্ডে দেরি হওয়ায় নূর হোসেন এক পর্যায়ে অধৈর্য হয়ে ওঠে। তখন মেজর আরিফকে ধমকের সূরে ফোনে বলেন,ওই মিয়া, কেমুন মেজর হইলেন, মারতে এতক্ষণ লাগে?। রিমান্ডে থাকা র্যাব কর্মকর্তারা এখন তথ্য দিতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার ভয়াবহতায় চমকে উঠছেন তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারাও। তদন্তসংশ্লিষ্টদের দাবি, তারা ৭ হত্যার রহস্য উন্মোচনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন। র্যাবের সাবেক ৩ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, কাঁচপুর ব্রিজের নিচে অবৈধভাবে গড়ে তোলা নূর হোসেনের বালু ও পাথরের ব্যবসা কেন্দ্রে সাতজনকে হত্যা করা হয়। এখান থেকে লাশ ট্রলারে করে নিয়ে ফেলা হয় বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকায়। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক সূত্র এসব তথ্য জানায়।
রিমান্ডে র্যাবের সাবেক ২ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহরণের পর গাড়িতে তুলেই সঙ্গে সঙ্গে ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করা হয় সাতজনকে। ঘটনা আড়াল করতে অপহরণের পরই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদীতে। সেখান থেকে রাতে ফিরিয়ে আনা হয় কাঁচপুর ব্রিজের নিচে। এখানে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল ইট, দড়ি, বস্তাসহ লাশ পরিবহনের যাবতীয় আয়োজন। অপহরণের পর থেকে লাশ ফেলা পর্যন্ত পুরোটা সময় মোবাইল ফোনে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো র্যাব-১১-এর সাবেক কর্মকর্তা মেজর আরিফের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল নূর হোসেনের।
সূত্রটি জানিয়েছে, মেজর আরিফের সঙ্গে নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মেজর আরিফকে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন নূর হোসেন। কুমিল্লায় আরিফের ভগ্নিপতির ধানের ব্যবসায় টাকাও দিয়েছেন নূর হোসেন। মেজর আরিফ ছাড়াও ঘটনার সঙ্গে র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ ও র্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এমএম রানার সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। সংগ্রহ করা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ। সব তথ্যপ্রমাণ হাতে পাওয়ার পর দৃশ্যমান হবে পুলিশি তদন্ত।নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বরাবরই বলেছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাড়াহুড়া করে এত বড় ঘটনার তদন্ত করলে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তদন্ত কাজ চলছে।
COMMENTS