দেশে গুপ্ত হত্যা ও চোরাগোপ্তা হামলার জন্য বিএনপি দায়ীঃ গাজীপুরে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে গুপ্ত হত্যা ও চোরাগোপ্তা হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রীকে অপরাজনীতির পথ পরিহার করে স্বাভাবিক রাজনীতি করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে না এসে যে ভুল করেছেন তার খেসারত এদেশের জনগণ কেন দেবে। যাদের পরামর্শে আন্দোলন করেছেন, নির্বাচনে আসেননি তাদের কাছে যান।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির একজন নেতা বলেছেন চোরাগোপ্তা হামলা করে তারা সরকারের পতন ঘটাবে। দেশে এখন যত গুম হত্যার ঘটনা ঘটছে এতে তারা যে দায়ী তাতে কোন সন্দেহ নেই।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চোরাগোপ্তা হামলা করে যারা রাজনীতি করতে চায় তাদের থেকে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান জানান।

শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জাতীয় শ্রমিকলীগ এ জনসভার আয়োজন করে।

জাতীয় শ্রমিক লীগের  কেন্দ্রীয় সভাপতি শুকুর মাহমুদের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য দেন মহিলা ও  শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম ও জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি,  গাজীপুর-২ আসনের সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি, দলের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক  আখতারউজ্জামান, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান প্রমুখ। জনসভায় সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য। এ দেশের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন,আওয়ামীলীগ যখন সরকার গঠন করে শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আয় বৃদ্ধি পায়। দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে সারের কোন সমস্যা হয় না। এখন সারের জন্য কৃষকদের জীবন দিতে হয় না। অথচ বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সার চাওয়ায় ১৮ কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে এবং জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পদদলিত করে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেন। তখন থেকে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়। তিনিই প্রথম ক্ষমতায় এসে এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। রাজাকার-আলবদরদের ক্ষমতায় বসান, উপদেষ্টা বানান। পরবর্তীতে তার স্ত্রী বেগম জিয়া একই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করেন। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা তুলে দেন যুদ্ধাপরাধীদের হাতে, যাদের বিচার শুরু হয়েছে এবং রায়ও কার্যকর হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। কৃষকরা ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার আমলে সারের দাবি জানানোয় ১৮ কৃষককে হত্যা করা হয়েছিল।তিনি বলেন, তারা ক্ষমতায় আসার আগে বলেন, বন্ধ কলকারখানা চালু করবেন। কিন্তু করেন তার উল্টো। আদমজীর মতো বৃহৎ পাটকল বন্ধ করে দেন তারা। ক্ষমতায় এসে খুলনা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন কলকারখানা বন্ধ করে দেন। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বন্ধ কলকারখানা চালু করে। বিজিএমসির ৮টি কারখানা চালু করা হয়।

তিনি বলেন, সরকার পতন আন্দোলনের নামে তিনি বাসের ঘুমন্ত ড্রাইভার ও হেলপার, সিএনজির ড্রাইভারকে পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করেন, স্কুলছাত্রীকে হত্যা করেন। ধর্মের রাজনীতির নামে কোরান শরিফ পুড়িয়ে কিভাবে ইসলামের হেফাজত হয় প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমিকদের কল্যাণে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে শ্রমিকরা ন্যায্য দাবি জানাতে গিয়ে গুলি খেয়েছেন। ১৭ জন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বেগম জিয়া বাংলাদেশে জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার জন্য আমেরিকার কাছে চিঠি লিখেছিলেন। সংসদে যখন বলা হলো তখন তিনি বলেন এ চিঠি তিনি লেখেননি। কিন্তু ঐ পত্রিকা কনফার্ম করেছে লেখাটি বেগম খালেদা জিয়ার।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে ধংস ও ভাংচুর করে বাংলাদেশের অগ্রগতি থামাতে পারলেন না তখন বিদেশীদের কাছে নালিশ করেন । নালিশ করে কি পেয়েছেন সেই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ শ্রমিকদের সেবক। তার সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়েছে। চাকরির বয়সীমা ৫৭ বছর থেকে ৬০ বছর বাড়িয়েছে। বিএনপি সরকারের আমলে একজন দিনমজুর যে টাকা কামাই করতেন তা দিয়ে এক কেজি চালও কিনা যেতনা উল্লেখ করে তিনি বলেন এখন একজন শ্রমিক যা আয় করেন তা দিয়ে ১২ কেজি চাল কেনা যায়। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামীলীগের রাজনীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য। জাতির পিতা আমাদের যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন সে লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলবো। ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,“ আসুন । এক সাথে কাজ করি । পরাজিত শক্তি যাতে মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনি মিনি খেলতে না পারে সে ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করি”। শেখ হাসিনা গাজীপুরে শ্রমিকদের ডরমেটরি, আবাসন ব্যবস্থা, বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করা এবং গ্রামে ফিরতে আগ্রহী বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন । প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই গাজীপুর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ তৈরি হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, শ্রমিকনেতা ময়েজ উদ্দিন ও আহসানউল্লাহ মাস্টারের অবদানের কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।তিনি জাতির পিতা এবং যারা রক্ত দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল সাড়ে চারটায় সমাবেশস্থলে পৌঁছান।  তাকে স্বাগত জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ গাজীপুরের সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেতারা।

 শেখ হাসিনা সভাস্থলে পৌঁছার  আগে বেলা দুইটা থেকেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সভাস্থল ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিতে শুরু করেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লোক সমাগমও বাড়তে থাকে। বাদ্য বাজিয়ে নেচেগেয়ে শ্রমিক ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা হাতে ব্যানার-ফেস্টুন, পোস্টারসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কড্ডা ও চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে পায়ে হেঁটে হাজার হাজার লোক মিছিল নিয়ে  জনসভাস্থল ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেয়। বেলা তিনটার মধ্যে  পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ফলে চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে কড্ডার নাওজোর পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় বিকল্প পথ ভোগড়া বাইপাস হয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরের সিটি মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ মান্নান একাধিক তোরণ নির্মাণ করেন।

COMMENTS





নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,235,আন্তর্জাতিক,731,কাপাসিয়া,342,কালিয়াকৈর,417,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3936,চাকরির খবর,33,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2958,টঙ্গী,911,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,136,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,697,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1055,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10757,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: দেশে গুপ্ত হত্যা ও চোরাগোপ্তা হামলার জন্য বিএনপি দায়ীঃ গাজীপুরে প্রধানমন্ত্রী
দেশে গুপ্ত হত্যা ও চোরাগোপ্তা হামলার জন্য বিএনপি দায়ীঃ গাজীপুরে প্রধানমন্ত্রী
http://4.bp.blogspot.com/-9BCRzeSGZ2U/U2NNNDXps8I/AAAAAAAAHMM/56p9DQh7hs4/s1600/SHEIKH_HASINA.jpg
http://4.bp.blogspot.com/-9BCRzeSGZ2U/U2NNNDXps8I/AAAAAAAAHMM/56p9DQh7hs4/s72-c/SHEIKH_HASINA.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2014/05/pm-gazipur.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2014/05/pm-gazipur.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy