গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী স্টেশন রোডস্থ গফুর মার্কেটের ২য় তলায় টঙ্গী ডেন্টাল ক্লিনিকের ভয়াবহ প্রতারণা চালাচ্ছে ভূয়া ডেন্টিস্ট ডাঃ মো. সোহেল। প্রাতিষ্ঠানিক কোন যোগ্যতা না থাকলেও এবং ডেন্টিস্ট হিসেবে কোথাও প্রশিক্ষণ না নিলেও ডাঃ মো. সোহেল নিজে (বি.ডি.এস ও ডি.ইউ) ডাক্তার সেজে প্রতিনিয়ত রোগীদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে।
গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে ডাঃ মো. সোহেল প্রথমে সাংবাদিক শুনে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে জানায়, সে গাজীপুরের স্থানীয়। তার অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছে। কোন সমস্যা হবে না বলে সে প্রতারণার জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে টঙ্গী।
প্রতারক ডাঃ মো. সোহেল টঙ্গী স্টেশন রোডস্থ গফুর মার্কেটের ২য় তলায় টঙ্গী ডেন্টাল ক্লিনিক খুলেছে।
বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ডাঃ মো. সোহেল জানায়, সে নিজে কোন চিকিৎসা করে না। তার চেম্বারটিকে সে ডেন্টাল ক্লিনিক হিসেবে উল্লেখ করে জানায়, রোগীর উপর ভিত্তি করে ডাক্তার নিয়ে আসা হয়। তার ঐ ডেন্টালে তখন কোন ডাক্তার পাওয়া যায়নি। ইমার্জেন্সি রোগী এলে অনকলে ডাক্তার নিয়ে আসা হয় বলে সে জানায়। ২/১ জন ডাক্তারের নাম জানতে চাইলে সে বলতে পারেনি। এছাড়া ঢাকা ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন ডাঃ মো. শহিদউল্যা বাহার (বি.ডি.এস.ও.এইচ) (ভারত), ডাঃ আক্তার জাহান প্রিয়া (বি.ডি.এস. ও ডি.ইউ) ও ডাঃ তানভির হাসান ফয়সাল (বি.ডি.এস. ও ডি.ইউ) প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা ও বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তারা এ ক্লিনিকে বসে বলে সে জানায়।
ভুক্তভোগী এবং অনুসন্ধানে জানা যায়, ঐ ডাক্তারকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে নিজেই বিডিএস ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে টঙ্গীসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীর সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে ডাঃ মো. সোহেল। সে ডেন্টিস্টের কোন প্রশিক্ষণ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকায় কোন এক ডেন্টালে এক বছর কাজ করেছে বলে জানায়। প্রাতিষ্ঠানিক কোন সনদপত্র দেখাতে পারেনি। নিজে ডাক্তার সেজে রোগীদের কাছ থেকে সামান্য কাজের জন্য ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ডাঃ মো. সোহেল নিজেই এখন ডেন্টিস্টের প্রশিক্ষণ দিয়ে সার্টিফিকেট দিচ্ছে গণহারে। এক এক প্রশিক্ষণদাতার নিকট থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ভূয়া সার্টিফিকেট দিচ্ছে।
এ বিষয়ে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো. মাহাবুব আলম চৌধুরির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ সব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। লাইসেন্স প্রদানের সময় রিপোর্ট দেওয়ার জন্য একটি মেডিকেল টিম গঠন করে দেওয়া হয়। সেই টিম যাচাই বাছাই করে প্রতিবেদন পেশ করে। এসব প্রতিষ্ঠান কগজে কলমে সব ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তবে যা থাকার কথা তা নেই। আর না থাকলেও পারিপার্শ্বিক নানান জটিলতায় ব্যবস্থা নেয়া যায়না। তিনি আরও বলেন, টঙ্গীতে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিগুলোর অধিকাংশ মানসম্মত নয় এমনটি স্বীকার করে বলেন, ইচ্ছে করলেই ব্যবস্থা নেয়া যায়না।
এব্যাপারে টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসব ক্লিনিকের বিরুদ্ধে চলতি বছর কয়েক বার ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ একাধিক ক্লিনিকের মালিককে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
টঙ্গীর মরকুন এলাকার হালিমা আক্তার মাসখানেক আগে ডাঃ মো. সোহেল কাছে দাঁতের চিকিৎসার পর বর্তমানে তিনি মৃত্যুযন্ত্রণায় ভুগছেন। এছাড়াও, মধুমিতার নূর নবী, মিলগেইটের এয়াকুব ও বাদল এবং ফকির মার্কেটের লিটন দাস উক্ত প্রতিবেদকের কাছে ভূয়া ডাঃ মো. সোহেলের ভুল চিকিৎসায় সর্বশান্ত হওয়ার বিষয়টি অবহিত করেছেন। টঙ্গী ডেন্টাল ক্লিনিক হিসেবে উক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে পরিচয় দিলেও তার কাছে গাজীপুর সিভিল সার্জন এবং সিটি কর্পোরেশনের কোন সনদপত্র নেই। অবিলম্বে ডাক্তাররূপী এমন প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ভুক্তভোগী মহল উপকৃত হবে।
COMMENTS