বাংলাদেশে ফেসবুকের আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের লক্ষ্যে আগামী জুলাই মাসে ফেসবুকের শীর্ষ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছেন। এ সময় তারা বাংলায় ফেসবুক অ্যাপস এবং সাপোর্ট সেন্টার তৈরির প্রাথমিক কাজ করবেন। শনিবার ঢাকায় বিয়াম মিলনায়তনে আইটি প্রোফেশনালদের নিয়ে বিবিসি বাংলার বিশেষ আয়োজন ‘তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ শীর্ষক সংলাপে প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ তথ্য জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ, বেসিস এর সাবেক সহ সভাপতি এবং তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউ ওয়াই সিস্টেমস লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী ফারাহানা এ রহমান এবং কলম্বো ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার সিনিয়র রিসার্চ ফেলো আবু সাঈদ খান।
বিবিসি সংলাপে মন্ত্রী আরও জানান, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেটা সম্ভব হয়েছে এই সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প প্রণয়ণ করার কারণেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যে রূপকল্প দেওয়া হয়েছিলো সে অনুযায়ী একটি আইসিটি পলিসি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। এখনই চাইলে সম্পূর্ণ অর্জন সম্ভব হবে না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দিতে আরও ৪ বছর সময় লাগবে। পলক বলেন, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনাতো উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন। আমাদের সর্বক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যাকবোন তৈরী করেছে সরকার। সাবমেরিন ক্যাবলে দ্বিতীয়বারের মতো সংযুক্ত হতে চলেছি আমরা।
শামা ওবায়েদ বলেন, যতদিন পর্যন্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ শ্লোগানের পর্যায়ে থাকবে ততদিন পর্যন্ত কোনো কাজই হবে না। কিছু অগ্রগতি হয়েছে তা কোনো সরকারের হাত ধরে আসেনি, সময়ের প্রয়োজনে এসেছে। তিনি বলেন, ভারত বা চায়নার মতো জায়গায় পৌঁছাতে যে বেসিক জিনিসগুলো দরকার তা কিন্তু আমরা পাচ্ছি না । দেশের বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার ভাল কোনো ব্যবস্থা নেই। ১৯২৮টি কলেজে ৫লাখের বেশি শিক্ষার্থী আছে। কিন্তু মাত্র ১৫৭টি কলেজে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেখানেও শিক্ষকদের নেই তেমন কোনো প্রতিক্ষণ। ফলে কম্পিউটার রাখা হয় তালাবদ্ধ করে।
আবু সাঈদ খান বলেন, গ্রামাঞ্চলকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। তবে ব্রডব্যান্ড কতদিনের মধ্যে কত শতাংশ লোক ব্যবহার করবে সে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়নি। সে হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ শ্লোগানই রয়ে গেছে। তবে সরকার তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে এক করা বড় অর্জন। আবু সাঈদ খান বলেন, সরকার ভারতের মতো বিনিয়োগ বান্ধব নীতিমালা গঠন করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক উদ্যোগ প্রয়োজন। ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা ভ্রান্ত নীতিমালা প্রনয়ন। তিনি বলেন, দেশে প্রযুক্তির উন্নয়নে এনটিটিএন সর্বনাশের মূল। তারা ডিজিটাল বাংলাদেশকে জিম্মি করে রেখেছে।
ফারহানা এ রহমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ শ্লোগান আইটি সেক্টরকে মানুষের সামনে নিয়ে এসেছে। তবে এর ভিতরে আমরা এখনো ঢুকতে পারিনি। তিনি বলেন, কানেক্টিভিটির মধ্যে অনেকটাই সফল হয়েছি ও ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করতে পেরেছি যেমন লোকাল সফটওয়্যার, আউটসোর্সিং, ই কমার্স, সরকারি প্রতিষ্ঠান অটোমাইজেশন।
প্রসঙ্গত, বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন ও বিবিসি বাংলা যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ। সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন আকবর হোসেন। বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ অনুষ্ঠান বিবিসি বাংলায় প্রচারিত হয় রোববার রাত ৮টায় এবং পুনঃ প্রচারিত হয় মঙ্গলবার রাত ৮টায়। এ ছাড়া চ্যানেল আইয়ে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় সোমবার রাত ৭টা ৫০ মিনিটে এবং পুনঃ প্রচারিত হয় মঙ্গলবার ভোর ৫টা ও দুপুর ৩টা ৫ মিনিটে।
COMMENTS