শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তায় শাপলা মেডিকেল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে বেসরকারি একটি হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাদেকুর রহমান গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতালটি সিলগালা করেন।
হাসপাতালটির বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে অপচিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ করে আসছিল রোগীরা। শ্রীপুরের তেলিহাটী ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মো. জামান মিয়া (২৭)। পেটব্যথার কারণে গত ১৬ মে রাত ৯টার দিকে স্বজনরা তাকে শাপলা মেডিকেল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। জামান মিয়ার বড় ভাই নাজমুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাত্ক্ষণিক রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করে জানান, তিনি (এপেন্ডিক্সের) অন্ত্রসংলগ্ন নলের প্রদাহে ভুগছেন। এপেন্ডিসাইটিসের চিকিত্সা হিসেবে এখনই তার পেটে অস্ত্রোপচার করতে হবে। নইলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সংক্রমিত এপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে মো. জামান মিয়া মারা যাবেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিত্সক মফিজুর রহমান ফাহিম ও তার সহযোগী আরো এক চিকিৎসক ও দুজন নার্সকে নিয়ে মো. জামান মিয়ার পেটে অস্ত্রোপচার শুরু করেন। তিন ঘণ্টা ২০ মিনিট অস্ত্রোপচার চলে।
অস্ত্রোপচারের পর রক্তক্ষরণ চলতে থাকে জামানের। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় চিকিৎসকরা জামানকে জরুরিভাবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরদিন সকালে মুমূর্ষু অবস্থায় জামানকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট-১ নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিত্সক ডা. মনিরুল ইসলাম পরীক্ষা করে জানান, তার ভুল চিকিত্সা হয়েছে। জামানের (এপেন্ডিক্স) অন্ত্রসংলগ্ন নলের প্রদাহ ছিল না বলেও জানান তিনি। একদিন পর ১৮ মে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট-১-এ মো. জামানের পেটে ফের অস্ত্রোপচার করেন চিকিত্সকরা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টানা ১৬ দিন চিকিত্সা চলে মো. জামান মিয়ার।
এ ঘটনার পর অপচিকিত্সার অভিযোগ এনে ১৭ জুন মো. জামান মিয়ার বাবা হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিত্সক মফিজুর রহমান ফাহিম, হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম, হান্নান মিয়া, ইজ্জত আলী ফকির, সুবলচন্দ্র দাস ও অজ্ঞাত পরিচয় এক চিকিত্সকসহ দুই নার্সকে আসামি করে শ্রীপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরদিন গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সুভাষ চন্দ্র সাহা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (এমওসিএম) ডা. কামরুজ্জামান সুমন।
গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সুভাষচন্দ্র সাহা জানান, তদন্ত কমিটি পাঁচ কর্মদিবস পর গত বুধবার বিকালে তার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাদেকুর রহমান হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন।
COMMENTS