উত্তরায় কলেজ ছাত্রী অপহরণ, ধর্ষণ ও নিরাপত্তা প্রহরী হত্যার ঘটনার অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি ও গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে‘ নিহত গিয়াস উদ্দিন আপন ওরফে শফিকুল ইসলাম শফিককে শনাক্ত করেছেন কলেজ ছাত্রী নিজেই। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে গিয়ে অপহরণকারী ও ধর্ষক হিসেবে নিহত আপনকে শনাক্ত করেন তিনি।
মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ সাইদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, উত্তরায় অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত কি-না সেটা খতিয়ে দেখতে অপহৃতা মেয়েটিকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মেয়েটির মা সঙ্গে ছিলেন। আপন ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে মেয়েটি পুলিশকে নিশ্চিত করেন।
বৃহষ্পতিবার রাতে অভিযানে অংশ নেওয়া গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার (এসি) নাজমুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, আপন পেশাদার ছিনতাইকারী। একই সঙ্গে সে মেয়েদের অপহরণ করে গাড়িতেই ধর্ষণ করতো। এ রকম অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনটি হত্যা, চারটি অস্ত্র ও সাতটি ছিনতাই মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অনেক অভিযোগ রয়েছে।
আপন এর আগে একাধিকবার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল। ২০১০ সালে একটি মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার সময় আদালত থেকে পালিয়ে যায়। নিহত আপনের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগের চানপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল মালেক ওরফে রুহুল আমিন।
এসি নাজমুল হক জানান, ছিনতাই প্রতিরোধে বৃহষ্পতিবার রাতে তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। এ সময় তাদের কাছে খবর আসে কতিপয় ছিনতাইকারী প্রাইভেটকারযোগে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ চালিয়ে আসছে। এ সময় তারা ওই প্রাইভেটকারটির পিছু নেন। খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে আরেকটি টিম রামপুরা থেকে এগিয়ে আসে। অবস্থা বেগতিক দেখে ছিনতাইকারীরা গাড়ি থেকে নেমে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও কয়েক রাউন্ড গুলি করে। এতে ছিনতাইকারী আপন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায়। অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। প্রথমে অজ্ঞাত থাকলেও সকালে তার পরিচয় জানা যায়। বাড্ডা থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
গত ৩ জুলাই রাতে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে এক কলেজ ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বাধা দিলে লিয়াকত হোসেন লিটন নামের এক নিরাপত্তাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করে তারা। কয়েক ঘণ্টা গাড়িতেই মেয়েটিকে কয়েকজন মিলে ধর্ষণ শেষে একই এলাকায় নামিয়ে দিয়ে যায়। চালক ছাড়াও ওই গাড়িতে আরও পাঁচজন ছিল। এ ঘটনায় মেয়েটির পূর্বপরিচিত রুম্মন নামের এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, এ ঘটনার পুরো তথ্য এখন তাদের হাতে আছে।
আপনের স্ত্রী জেসমিন, শাশুড়ি জাহানারা বেগম ও ভাই আলী হোসেন পরশ শুক্রবার সন্ধ্যায় মর্গে গিয়ে লাশ সনাক্ত করেন। পরশ সাংবাদিকদের জানান, প্রথম দিকে গাড়ির ওয়ার্কশপে কাজ করতেন তার ভাই। পরবর্তীতে রেন্ট-এ-কারের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন। সাড়ে ৩ বছর আগে স্ত্রী জেসমিনকে নিয়ে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় থাকতেন। পরে স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তার বিরুদ্ধে মামলা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে কি না তারা জানেন না। টিভিতে খবর দেখে তারা ঢাকায় আসেন। সুমনা নামে তার ৩ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান আছে।