প্রতিবছরের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুর, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, নারায়ণগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুর, বরগুনা ও চট্টগ্রামের ১২৪টি গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। আজ সোমবার সকাল থেকে এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তাঁরা দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করেন।
চাঁদপুর: জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, বলাখাল, মনিহার, অলিপুর, বড়কূল, সমেশপুর, জাঁকনি, রামচন্দ্রপুর, প্রতাপুর, বেলচো, উভারামপুর, সুরঙ্গচাল ও গোবিন্দপুর; ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাচনমেঘ, বিঘা, বাছপাড়া, খিলা, ওড়তলী, বালিথুবা, শোলা, রূপসা, গোয়ালভাওর, কড়ৈইতলী, নোয়ারহাট, বাশারা, পনিসাইর, কামতা, পাইকপাড়া, কাইতারা, টোরামুন্সীরহাট, মূল পাড়া, বদরপুর, তেলিসাইর এবং মতলবের আশ্বিনপুর, নায়েরগাঁও, পাঁচানি, দশানী, মোহনপুর, এখলাসপুর ও বেলতলী গ্রামে আজ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। এসব গ্রামের হাট-বাজার ও ঈদগাহ বিভিন্ন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামের মরহুম মাওলানা ইসহাক খানের চতুর্থ ছেলে মাওলানা জাকারিয়া আল মাদানী এক দিন আগে ঈদ পালনের বিষয়ে জানান, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদের চাঁদ ওঠার খবর পাওয়ায় তাঁরা এক দিন আগে ঈদ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর বাবা বিশ্বের অন্য কোথাও চাঁদ উঠেছে শুনে ১৯৩১ সালে প্রথম হাজীগঞ্জের সাদ্রা গ্রামে এ রীতি চালু করেন। এর পর থেকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ১১টি গ্রামে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২২টি গ্রামে ও মতলব উত্তর উপজেলার সাতটি গ্রামের অর্ধ লাখ মুসলমান এ নীতি অনুসরণ করে চলেছেন।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরিফের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুস সায়াদাত আখন্দ জানান, এ বছরও জেলার সদর উপজেলার বদরপুর ও ছোট বিঘাই, গলাচিপা উপজেলার সেনের হাওলা, পশুরীবুনিয়া, নিজ হাওলা ও কানকুনিপাড়া, বাউফল উপজেলার মদনপুরা, শাপলাখালী, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদী, সাবুপুরা ও আমিরাবাদ এবং কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, নিশানবাড়িয়া, মরিচবুনিয়া, উত্তর লালুয়া, মাঝিবাড়ি, টিয়াখালীর ইটবাড়িয়া, পৌরশহরের নাইয়াপট্টি, বাদুরতলী, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের সাফাখালী এই ২২ গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার আগাম ঈদ উদযাপন করছেন।
সকাল ১০টায় বদরপুর গ্রামের বদরপুর দরবার শরিফ জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে নতুন জামা-কাপড় পরে শিশু-কিশোরসহ সবাই ঈদের নামাজ আদায় করতে সমবেত হন মসজিদে।
এসব এলাকার মুসল্লিরা পটুয়াখালীর সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরিফের পীর এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পীর ও চট্টগ্রামের পটিয়ার এলাহাবাদ পীরের অনুসারী।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর): উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাছিড়া, বাদুরতরী ও চড়কগাছিয়া গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার আজ ঈদ উদযাপন করছেন। সকাল নয়টায় সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামের খোন্দকারবাড়ি ও সোয়া নয়টায় কচুবাড়িয়া গ্রামের হাজি ওয়াহেদ আলী হাওলাদারের বাড়িতে ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন যথাক্রমে মুন্সী শাহ আলম ও মৌলভী হায়দার আলী ।
সুরেশ্বর পীরের অনুসারী কচুবাড়িয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ২৯ জুন সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোজা রেখেছি এবং আজ সৌদি আরবের সাথেই ঈদ উদযাপন করছি।’
নারায়ণগঞ্জ: সদর উপজেলার ফতুল্লার লামাপাড়ায়ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। বেলা পৌনে ১১টায় হযরত শাহ সুফি মমতাজিয়া এতিমখানা ও হেফজখানা মাদ্রাসায় ‘জাহাঁগিরিয়া তরিকার’ অনুসারীরা এই ঈদ উদযাপন করেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের জামাতে অংশ নিতে গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, পুরান ঢাকা, ডেমরা, সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলা থেকে দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন। জামাতে ইমামতি করেন হযরত শাহ সুফি মমতাজিয়া মাদ্রাসার মুফতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন।
![]() |
ভোলাঃ আজকের ঈদ জামাত |
শেরপুর: সদর উপজেলার বেতমারী-ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের চরখারচর পূর্ব ও পশ্চিমপাড়া গ্রাম, ঝিনাইগাতী উপজেলার চতল এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ও মধ্যপাড়া গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষ আজ সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছাবিনিময় করেন।
সদর উপজেলার বেতমারী-ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, চরখারচর পূর্ব ও পশ্চিমপাড়া গ্রামের প্রায় হাজারো মানুষ সকাল নয়টার দিকে চরখারচর পশ্চিমপাড়া ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন। তাঁরা ফরিদপুরের সুরেশ্বর পীরের অনুসারী।
পটিয়া (চট্টগ্রাম): দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের জাহাঁগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের অনুসারীরা ৫০টি গ্রামে ঈদ উদযাপন করছেন। সকাল ১০টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় শাহ সুফি মমতাজিয়া দরবারের ঈদগাহ মাঠে। এতে ইমামতি করেন দরবারের পীর আলহাজ মাওলানা হযরত শাহ সুফি ছৈয়দ মোহাম্মদ আলী।
মৌলভীবাজার: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মৌলভীবাজারে ঈদ উদযাপন করছেন দেড় শতাধিক নারী ও পুরুষ। এবারই প্রথম পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়। মৌলভীবাজার শহরের সার্কিট হাউস এলাকায় ভোর সাড়ে ছয়টায় একটি বাসার ছাদে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন এই জামাতের উদ্যোক্তা আলহাজ আবদুল মাওফিক চৌধুরী (পীর সাহেব)।
আবদুল মাওফিক চৌধুরী সোমবার জানান, ‘ইসলামে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তাই জামাতে নারীদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারীরা পর্দার ভেতর ও পুরুষেরা পর্দার বাইরে ছিলেন।’
বরগুনা: আমতলী, পাথরঘাটা, বামনা, বরগুনা সদর, বেতাগী উপজেলার আহমাদিয়া জামাত তরিকার অনুসারীরা প্রতিবছরের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উযাপন করেছেন।
আমতলী উপজেলার গোজখালী ছলিমাবাদ দরবার শরিফের প্রধান খাদেম ও আহমাদিয়া তরিকার অনুসারী মো. আলমগীর হোসেন জানান, বরগুনা জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এই তরিকার প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি অনুসারী আজ ঈদ উদযাপন করেন। গ্রামগুলোতে সকাল আটটায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।