কর্মীদের মাঝে বাক-বিতন্ডা, এক পক্ষ কর্তৃক অপর পক্ষের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিতর্কিত হওয়ায় গণজাগরণ মঞ্চ জনগণের আস্থা হারিয়েছে। এই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে মঞ্চের সকল কর্মীকে আবার জনগণের কাছে ফিরে যেতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে গণজাগরণ মঞ্চের এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার ও জামায়াত- শিবির নিষিদ্ধে করণীয়’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান বিরোধী কামাল পাশা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন অংশ।
মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদী বলেন, দেশে মুক্তিযুদ্ধ একবারই হয়েছে, কিন্তু এর চেতনা লুন্ঠনে বিরোধী রাজাকাররা প্রতিনিয়তই ষড়যন্ত্র করছে। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন বারবার থেমে যাচ্ছে, আবার নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে তাদের এখন টিএসসিতে অনুষ্ঠান করতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এবং প্রজন্ম ৭১’এর সভাপতি শাহীন রেজা নুর বলেন, স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে গঠিত প্রসিকিউশন টিমের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এর ফলে যুদ্ধাপরাধীদের রায়ে কোন বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে কি না সে জন্য আমরা বিচলিত বোধ করছি।
তিনি বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের বিভাজন কোনভাবেই কাম্য নয়। এটা শুধু গুটিকয়েক ব্লগার বা তরুণদের সমাবেশ না, এটা দেশের কোটি কোটি মানুষের আলোক মিনার। এটা শিখা অনির্বাণ। কাজেই যাদের কথা ও চিন্তায় গণজাগরণ মঞ্চ যদি ক্ষতির সম্মুখিন হয় তাহলে বুঝতে হবে তারা গণজাগরণ মঞ্চের সাথে শামিল নয়।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যক্তি জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তা হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। গণজাগরণ মঞ্চের ডাকে আগে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসতো এখন কেন আসছে না সেটা খুঁজে দেখতে হবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পিযূষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে বারবার ব্যর্থ হয়েছি ঘরের শত্রু বিভীষণের কারণে। এখন পর্যন্ত আমরা এদের চিহ্নিত করতে পারছি না। এদের ব্যাপারেও সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে এক ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু আন্দোলন থেকে পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।
মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল কমান্ডের সহ-সভাপতি ইসমত কাদির গামা বলেন, আওয়ামী লীগের সবাই যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় তা নয়, এদের মধ্যেও অনেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের পাঁয়তারা করছে। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ষড়যন্ত্রের কারণেই দ্বিধাবিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে।
কামাল পাশা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন মঞ্চের সংগঠক আবুল কালাম আজাদ, এফ এম শাহীন, হাবিবুল্লাহ মেসবাহ, মহাখালী মসজিদের খতিব দেলোয়ার হোসেন সাঈফী, মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রমুখ।