![]() |
ফাইল ছবি |
বকেয়া বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনরত শ্রমিকদের পাওনাদি পঞ্চমদিনেও (শনিবার) পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা কারখানার মেশিনপত্র বিক্রি করে তাদের আংশিক পাওনাদি পরিশোধ করে নিয়েছে।
এ ঘটনার পর কারখানার আটক দুই কর্মকর্তাকে পাঁচ দিন পর শনিবার রাতে মুক্তি দিয়েছে আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
পুলিশ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকাস্থিত ট্রেড মার্ক ফ্যাশন লিঃ নামের গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার থেকে কারখানায় অবস্থান নিয়ে ও পাঁচ দিন ধরে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভসহ আন্দোলনের নানা কর্মসূচি পালন করে।
গত জুন মাসের বকেয়া বেতন ভাতাসহ ঈদ উপলক্ষ্যে চলতি মাসের বেতন (জুলাই) ভাতা ও ঈদবোনাস পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকরা এ আন্দোলন শুরু করে।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণে মঙ্গলবার কারখানা থেকে পালানোর সময় আন্দোলনরতরা কারখানার প্রোডাকশন ডিরেক্টর আব্দুল কুদ্দুস ও প্রোডাকশন ম্যানেজার আব্দুল মোতালেবকে আটক করে কারখানার ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখে।
শ্রমিক আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে শুক্রবার শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয়। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়।
শনিবার বিকেল পর্যন্ত শ্রমিক প্রতিনিধি ছাড়াও পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কারখানার মালিকের সঙ্গে চেষ্টা করে মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে ব্যর্থ হয়।
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা শনিবার বিকেলে কারখানার মেশিনপত্র বিক্রি করে নিজেদের মধ্যে তাদের পাওনাদির আংশিক পরিশোধ (বন্টন) করে নিয়েছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা তাদের পাওনাদির আংশিক বুঝে পাওয়ার পর রাতে আটক দুই কর্মকর্তাকে রাতে মুক্তি দিয়েছে।
কারখানার প্রোডাকশন ডিরেক্টর আব্দুল কুদ্দুস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বকেয়া বেতন-ভাতা ও ঈদবোনাস পরিশোধের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনরত শ্রমিকদের পাওনাদি পঞ্চম দিনেও (শনিবার) পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ।
এতে ক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা কারখানার ১৯২টি মেশিন ও টেবিলসহ বিভিন্ন মেশিনপত্র জনৈক জুয়েলের কাছে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে তাদের পাওনাদির আংশিক অর্থাৎ শুধু জুন মাসের বেতন নিজেদের মধ্যে বন্টনের মাধ্যমে পরিশোধ করে নিয়েছে।
পরে আন্দোলনরত শ্রমিকরা আটকের পাঁচদিন পর শনিবার রাতে কারখানার দুই কর্মকর্তাকে মুক্তি দিয়েছে। মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে পাঁচদিন কারখানার ভেতর অবরুদ্ধ করে রেখেছে ওই দুই কর্মকর্তাকে।
এ সময় আটকে রাখা ওই দু’কর্মকর্তাকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা খাবার দেয়নি। ফলে তারা কয়েকদিন অনাহারে কাটিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। ওই কারখানায় আড়াই শতাধিক শ্রমিক রয়েছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা, ওই কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে গত জুন মাসের বকেয়া বেতন ভাতাসহ ঈদ উপলক্ষ্যে চলতি মাসের বেতন (জুলাই) ভাতা ও ঈদবোনাস পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিল।
মালিক পক্ষ এ দাবি মেনে নিয়ে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দেয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ।
এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিলে ওই দিন বিকেলে মালিকসহ কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে কারখানা থেকে পালিয়ে যেতে থাকে।
একপর্যায়ে শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে মঙ্গলবার থেকেই কারখানার ভিতরেই অবস্থান নিয়ে অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন শুরু করে।
এ সময় আন্দোলনরতরা কারখানার দুই কর্মকর্তাকে কারখানার ভিতরে আটকে রাখে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা আটক দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে আন্দোলন শুরুর পঞ্চমদিন শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানার ভিতরেই অবস্থান করে। পরে কারখানার মেশিনপত্র বিক্রির টাকা থেকে নিজেদের পাওনাদির আংশিক বুঝে নিয়ে শ্রমিকরা রাতে কারখানা এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।